1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

জেলা পরিষদ আইন সংশোধন সংবিধান সম্মত নয়

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

:: সালেহিন চৌধুরী শুভ ::
গত ২৩ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম সংসদে ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন ২০২২’ বিল উত্থাপন করেন। বিলটি বর্তমানে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সংসদীয় কমিটিতে রয়েছে। বিলে জেলা পরিষদের মৌলিক ও কাঠামোগত সংশোধনীগুলো হলো- মেয়াদ শেষে সরকার জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে। বিদ্যমান ১৫ সাধারণ সদস্য ও ৫ সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের পরিবর্তে জেলার অন্তর্গত উপজেলার সমানসংখ্যক সদস্য ও এক-তৃতীয়াংশ সংরক্ষিত সদস্য নিয়ে পরিষদ গঠন হবে। উপজেলা পরিষদগুলোর চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তা ও মেয়র জেলা পরিষদের ভোটাধিকারহীন সদস্য হবেন।
এই মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে ভাবনার অবকাশ রয়েছে। জেলা পরিষদের আছে স্বতন্ত্র সত্তা ও ধারাবাহিকতা। প্রশাসক নিয়োগে গণতন্ত্র সংকুচিত হয়ে আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হবে। এর রয়েছে সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক প্রভাব। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে নির্বাচিতরা বদলে অনির্বাচিত ব্যক্তি থাকলে জাতীয় নির্বাচনকালে দেশ পরিচালনায় অনির্বাচিত সরকারের দাবির যুক্তি জোরালো করবে।
বাংলাদেশ এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় প্রাদেশিক সরকার বা আইনসভা অর্থাৎ এ জাতীয় ক্ষমতা ভাগাভাগির বিষয় নেই। তাই রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণ, প্রশাসন, রাজস্ব ও উন্নয়ন কার্যক্রম একক সরকারের ওপর নির্ভরশীল। আবার শক্তিশালী স্থানীয় সরকার না থাকয় ছোটখাটো কোনো কাজের জন্যও মানুষকে ঢাকায় ছুটতে হয়। দেশে যদিও আটটি বিভাগ রয়েছে, তবে তা কোনো স্থানীয় শাসন-সংক্রান্ত স্তর নয় বরং জেলাগুলোর কার্যক্রম সমন্বয়ের লক্ষ্যে তদারকি স্তর। স্থানীয় পর্যায়ে ছোটখাটো বিষয়ের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব স্থানীয় শাসন কর্তৃপক্ষকে প্রদানের বিকল্প নেই। একই সঙ্গে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দান করতে অর্থাৎ জনগণকে শাসন ব্যবস্থায় স¤পৃক্ত করতে স্থানীয় সরকারের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশে বিদ্যমান তিন স্তরবিশিষ্ট স্থানীয় সরকার রয়েছে। এর মধ্যে জেলা হলো সর্বোচ্চ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর। একমাত্র জেলাকে সংবিধানে সরাসরি প্রশাসনিক একাংশ অর্থাৎ স্থানীয় শাসন-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যগুলোকেও আইনের দ্বারা প্রশাসনিক একাংশ ঘোষণার সুযোগ সংবিধানে রাখা হয়েছে।
জেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০০৬ সালের ৬ জুলাই জেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করা হলেও জেলা পরিষদে নির্বাচন হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে। এর আগে জেলা পরিষদ নামে ভবন, বরাদ্দ ও বাজেট থাকলেও বাস্তবে কোনো পরিষদ ছিল না। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োজিত উপসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। আইনটি প্রণয়নের আগেও সবকিছু ছিল; ছিল না শুধু পরিষদ। কার্যক্রম পরিচালনা করতেন জেলা পরিষদ সচিব পদে নিয়োজিত সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। তখন কার্যকর ছিল স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইন ১৯৮৮, যার অধীনে এরশাদ সরকারের আমলে একবার গঠিত হয়েছিল জেলা পরিষদ। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে এই পরিষদগুলো বাতিল করে। ওই সময়ের পরিষদ এবং তৎপূর্বে জিয়াউর রহমানের আমলে বিদ্যমান জেলা পরিষদের ছিল না সাংবিধানিক স্বীকৃতি। এর কারণ ১৯৭৫ সালে বাকশাল ব্যবস্থা প্রচলনের লক্ষ্যে জেলাগুলোয় অনির্বাচিত গভর্নর নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তাই সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী প্রণয়নের সময় অনেক বিধানের পরিবর্তন ও বিলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় শাসন-সংক্রান্ত সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদ এবং ১৫২ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রশাসনিক একাংশ সংজ্ঞা বিলুপ্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে অনুচ্ছেদ দুটি ও ১৫২ অনুচ্ছেদে সংজ্ঞা দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পুনঃস্থাপিত হয়। সংবিধানের ১৫২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রশাসনিক একাংশ জেলা কিংবা এই সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে আইনের দ্বারা অভিহিত অন্য কোনো এলাকা। জেলা হোক বা অন্য কোনো স্থানীয় শাসন কর্তৃপক্ষ, তা হবে সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে। সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে; (১) আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে। (২) এই সংবিধান ও অন্য কোনো আইন সাপেক্ষে সংসদ আইনের দ্বারা যেরূপ নির্দিষ্ট করিবেন এবং এই অনুচ্ছেদের (১) দফায় উল্লিখিত প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান যথোপযুক্ত প্রশাসনিক একাংশের মধ্যে সেই রূপ দায়িত্ব পালন করিবেন এবং অনুরূপ আইনে (ক) প্রশাসন ও সরকারি কর্মচারীদের কার্য; (খ) জনশৃঙ্খলা রক্ষা; (গ) জনসাধারণের কার্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হইতে পারিবে।
জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ বৈধ কিনা, সহজেই বোঝা যায়। আইন অনুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠান এবং মনোনীত ব্যক্তি কখনও এক নন। তাই সংবিধান অনুযায়ী প্রশাসনিক একাংশ ঘোষিত জেলা পরিষদ অনির্বাচিত ব্যক্তি দ্বারা শাসিত হওয়ার সুযোগ নেই। ১৯৯২ সালের ৩০ জুলাই স্থানীয় সরকার-সংক্রান্ত মাইলফলক মামলা কুদরত-ই ইলাহি পনির বনাম বাংলাদেশের রায়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বলেন, স্থানীয় সরকারের উদ্দেশ্য হলো, স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা স্থানীয় বিষয়াবলির ব্যবস্থাপনা করা। যদি সরকার কিংবা তাদের আজ্ঞাবহদের এসব স্থানীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য আনা হয়, তাহলে এগুলোকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাখা যুক্তিযুক্ত হবে না। প্রশাসক নিয়োগ হলে জেলা পরিষদ স্থানীয় সরকারের বৈশিষ্ট্য হারাবে। সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোনো আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে। প্রশাসক নিয়োগ, আসন সংখ্যার পুনর্বিন্যাস এবং উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও ও মেয়রকে সদস্য করার উদ্যোগ বাতিল করে সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জেলা পরিষদকে ঢেলে সাজাতে হবে। প্রশাসন ও সরকারি কর্মচারীদের কাজ, জনশৃঙ্খলা রক্ষা, জনসাধারণের কার্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন স¤পর্কিত পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষমতা ও সুযোগ জেলা পরিষদগুলোকে প্রদান করতে হবে। জেলায় জেলায় জনসংখ্যার তারতম্য, ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, জীবনযাত্রা, নাগরিক সমস্যা, উৎপাদন ব্যবস্থার ভিন্নতা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বতন্ত্র আইনের আদলে প্রতি জেলার জন্য আলাদা জেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।
[সালেহিন চৌধুরী শুভ : নির্বাহী পরিচালক, হাউস]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com