স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র ৫নং সেক্টরের টেকেরঘাট সাবসেক্টরের গেরিলা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দাশপার্টির কমান্ডার শহীদ জগৎজ্যোতির ৫০তম প্রয়াণ দিবস পালন করেছে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ। মঙ্গলবার দুপুরে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শহীদ জগৎজ্যোতি দাসসহ কলেজের অপর তিন শহীদের নামে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। পরে কলেজের শিক্ষার্থীদের একাত্তরের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় পরিচালনা করতে এবং দেশের জন্য দুঃসময়ে জগৎজ্যোতির মতো কাজে উদ্বুব্ধ করতে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ জগৎজ্যোতির আত্মদান নিয়ে বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নীলিমা চন্দের সভাপতিত্বে কলেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক রজত কান্তি সোম মানস। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলেজের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান রোখসানা চৌধুরী। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রবন্ধে তিনি কলেজের তৎকালীন শিক্ষার্থীদের আত্মদানসহ মুক্তিযুদ্ধের নানা দিক তুলে ধরেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, শহীদ জগৎজ্যোতি মৃত্যুঞ্জয়ী একজন বীর যোদ্ধা। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র থাকাকালে তিনি যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে হানাদারদের নাস্তানাবুদ করেন। দুর্ধর্ষ গেরিলা দল দাসপার্টি গঠন করে দুর্গম ভাটি অঞ্চলে পাকিস্তানি হানাদার ও রাজাকারদের সঙ্গে অসম যুদ্ধে জয়ী হন। তার বাহিনী হাওরাঞ্চলের বিশাল নৌপথ মুক্ত রেখেছিলেন। যে কারণে হানাদার সরকার বাধ্য হয়ে হাওরাঞ্চলের নৌপথে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। দুর্গম অঞ্চলে গেরিলা কায়দায় যুদ্ধ পরিচালনা করে হানাদার সেনাবাহিনীর জন্য তাঁর দলটি ক্রমশ ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল।
বক্তারা আরও বলেন, স্বাধীনতার প্রাক্কালে জগৎজ্যোতিকে ফাঁদে ফেলে যুদ্ধে জড়িয়ে তাকে হত্যা করেছিল মিলিশিয়া ও রাজাকাররা। যুদ্ধস্থলে দিনভর যুদ্ধ করে তিনি সন্ধ্যায় শহীদ হন আজমিরিগঞ্জের খৈয়াগুপি বিলে। সেখান থেকে পরদিন তার মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় বাজারে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেছিল। পরে তার লাশ ভাসিয়ে দেয় ভেড়ামোহনা নদীতে। তিনি এই অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধে একজন সাহসী যোদ্ধা হিসেবে এখনো প্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন। বক্তারা কলেজ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শহীদ জগৎজ্যোতি আমাদের গৌরব। আমাদের কলেজের সুনাম বৃদ্ধিতে তার ভূমিকা চিরদিন প্রোজ্জ্বল থাকবে। তাই আগামীতে দেশের জন্য কলেজের শিক্ষার্থীদের কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান তারা।
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা জগৎজ্যোতির বীরত্বের জন্য অস্থায়ী সরকার সর্বোচ্চ খেতাবের ঘোষণা দিয়েছিল। যুদ্ধ শেষে সরকার তাকে বীর বিক্রম উপাধি প্রদান করেছিল। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান রূপকথার মনে হলেও তিনি হাওরাঞ্চলে বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে গিয়ে ১৯৭১ সনের এই দিনে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন।
অপরদিকে, শহীদ জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে শহীদ জগৎজ্যোতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে স্থাপিত স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পাবলিক লাইব্রেরির সহ-সভাপতি সুখেন্দু সেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সালেহ আহমদ, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ নীলিমা চন্দ, কবি ইকবাল কাগজী, শিক্ষক (অব.) চন্দন রায়, অ্যাড. আনোয়ার হোসেন, অ্যাড. মাহবুব হাসান শাহীন প্রমুখ।