:: ম ফ র ফোরকান ::
যে যা-ই বলুন, আজ হোক কাল হোক কামারখালের উৎসমুখ খুলে দিতেই হবে। নতুবা সুনামগঞ্জ শহরের জলাবদ্ধতা তীব্র থেকে তীব্রতর হতেই থাকবে। আজ যাঁরা রহস্যজনক কারণে এ খাল উদ্ধারে নীরব তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না যে, তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মকে এ কারণে কতটুকু নারকীয় যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। আমি এ কথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে প্রতিটি মুহূর্ত কাটাতে হবে জলাবদ্ধতার নোংরা পানির সঙ্গে লড়াই করে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে, অবশ্যই কামারখালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ফিরিয়ে দিতে হবে। খালের মালিক সরকার। সুতরাং উদ্ধার করতে হবে জেলা প্রশাসন সুনামগঞ্জকেই।
এ প্রজন্মের অনেকেরই হয়তো জানা নেই, সুনামগঞ্জ শহরের কামারখাল একদা ছিল খুবই খরস্রোতা। এ খাল দিয়ে সর্বদা বড় বড় পাল তোলা নৌকা চলাচল করতো, যা আজকের দিনে কল্পনা করাও কষ্টকর বৈ কি।
আশির দশক। সুনামগঞ্জ পৌরসভা বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দেয় এ খালের উৎসমুখ। পরবর্তীতে এ বাঁধের ওপর তৈরি হয় পৌরসভার রাস্তা। এরপর পৌরসভা বাঁধ ঘেঁষে সুরমা নদীতে নির্মাণ করে পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়, এরও কয়েক বছর পর তৈরি হয় একটি কমিউনিটি সেন্টার। এরই পরিণতিতে কামারখাল হারিয়ে ফেলে স্বাভাবিক পানির প্রবাহ। সে সময় আশপাশের জবরদখলকারীরা নিপুণ দক্ষতায় দ্রুত ভরাট করে খালটিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে। এ রকম পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালে জেলা প্রশাসন তাদের ভূমি উদ্ধারে নড়েচড়ে উঠে। সে সময়কার প্রশাসন কারো তদবিরে পাত্তা না দিয়ে, কোন রকম ছলচাতুরীর আশ্রয় না নিয়ে কোমর বেঁধে মাঠে নামে তাদের খালের ভূমি উদ্ধারে। সকাল থেকে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত বিরামহীন অভিযানে অনেক ব্যক্তির বাড়িঘর ভাঙ্গা পড়ে। এ দিন অভিযান চলে পশ্চিম বাজার খালের উৎসমুখ থেকে সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ সংলগ্ন এক আইনজীবীর বাসা পর্যন্ত। এ বাড়ি ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বেশ সময় নষ্ট হয়। অন্যদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় পরদিন আবার অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়ে ঐ দিনের অভিযানের সমাপ্তি ঘটে। ঘোষণা মতো পরদিন অভিযান শুরুর কথা থাকলেও আজ ১৪ বছরেও কাঙ্ক্ষিত সেই ‘পরদিন’ আর আসেনি। কবে আসবে বা আদৌ আর আসবে কিনা সে কথা কেউ জানে না।
এদিকে অভিযান বন্ধ থাকায় ইতোপূর্বে উদ্ধার হওয়া ভূমি আবার জবর-দখলকারীদের পেটেই চলে গেছে। সে সঙ্গে পানিতে গেছে সরকারি তহবিলের টাকা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাড়ভাঙা শ্রম- ঘাম সব।
সুনামগঞ্জ শহরে জলাবদ্ধতা ইতোমধ্যেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। শীত মৌসুমেও এ শহরের অনেক বাসাবাড়ির লোকজন জলাবদ্ধতার সঙ্গে লড়াই করছেন। সমস্যা দিন দিনই বাড়ছে। সামনের দিনগুলোতে এ সমস্যা যে আরও বাড়বে তা হলফ করেই বলা যায়। বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যেই শহরের বিরাট অংশের বিশেষ করে নতুনপাড়ার মারাত্মক জলাবদ্ধতার জন্য কামারখালে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ না থাকাকে দায়ী করছেন। ভয়াবহ জলাবদ্ধতা থেকে পরিত্রাণের জন্য পৌর নাগরিকদের সোচ্চার হতে হবে এখনই। জেলা প্রশাসনের উচিত স্থগিত থাকা কামারখালের ভূমি উদ্ধার অভিযান পুনরায় শুরু করা। অনেকে আবার কাঙ্ক্ষিত ফলের জন্য হাইকোর্টে রীট করাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাঁদের মতে, প্রশাসনের টনক নড়াতে মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীরের পদাঙ্ক অনুসরণ প্রয়োজন। তিনি জবর দখলকারীদের কবল থেকে সুনামগঞ্জের বিখ্যাত জাওয়ার হাওর উদ্ধার করতে যেভাবে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত সরকারি সম্পত্তি জাওয়ার হাওর সরকারকে এনে দিতে সমর্থ হয়েছিলেন, সে পথই কামারখাল উদ্ধারের একমাত্র কার্যকরী পথ। পরিবেশবাদী যে কোন এনজিও সে পথে এগোতে পারেন।