দেশে শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ হলেও হাওর অঞ্চলে এই হারটি ২০ থেকে ৪০ শতাংশের বেশি নয়। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক তথ্য থেকে জানাযায়, হাওর অধ্যুষিত উপজেলাগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন শিক্ষার হার শাল্লায়, মাত্র ২০ দশমিক ১০ শতাংশ। ৪০ দশমিক ৩০ শতাংশ শিক্ষার হার নিয়ে সর্বোচ্চ স্থানে আছে জেলার ধর্মপাশা। হাওর থাকা অন্য উপজেলাগুলোতেও শিক্ষার হার ২০ থেকে ৩০ শতাংশের বেশি নয়। ইউনিসেফের ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী জেলায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ৩৭ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, সুনামগঞ্জ জেলায় শিক্ষা ব্যবস্থার হালহকিকত।
সরকার হাওরজেলা সুনামগঞ্জের শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করলেও এর সুফল আসছে না। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সবশেষে কাক্সিক্ষত ফল মিলছে না। এর অন্যতম কারণ শিক্ষক সংকট। গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানাযায়, জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের ৪৬৯টি পদ শূন্য। সংবাদে দু’টি বিদ্যালয়ের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ দুটো বিদ্যালয় হল- সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়গুলো আমাদের জেলার শীর্ষ বিদ্যাপীঠ।
সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫২ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ২৯ জন। অপরদিকে ঐতিহ্যবাহী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়েও ৫২ জন শিক্ষকের স্থলে আছেন মাত্র ৩০ জন। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ে পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ। জেলার শীর্ষ বিদ্যাপীঠে যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে স্বভাবতই অন্যান্য বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট থাকবে – এটা আশ্চর্য্যরে কিছু নয়।
জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে কর্মরত শিক্ষকরা পাঠদানে হিমশিম খাচ্ছেন। সীমিত জনবল দিয়ে কাক্সিক্ষত পাঠদান মোটেও সম্ভব হয়ে উঠছে না। বিষয়টি বারবার শিক্ষা দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের জানানো হয়েছে। বিরাজমান সংকট নিরসনে আশ্বাস মিললেও কোনো সমাধানের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না বছরের পর বছর ধরে। শিক্ষকের পদ শূন্য রেখে শিক্ষার হার এবং মান যতই চেষ্টা করা হোক না কেন, তা বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়।
আমরা সুনামগঞ্জ জেলায় শিক্ষক সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চাই। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, শিক্ষার হার এবং মান বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দিন। পর্যাপ্ত শিক্ষক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকলে আমাদের ছেলেমেয়েদের পাঠগ্রহণ ব্যাহত হবে না। পাশাপাশি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হবে। তাই অবিলম্বে আমাদের সুনামগঞ্জ জেলায় শিক্ষক সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। তা-না হলে শিক্ষার হার ও মান বৃদ্ধির সকল আয়োজনই ব্যর্থ হবে।