1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৩ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

কামারখাল এখন শহরবাসীর দুঃখ

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২১

:: অণীশ তালুকদার বাপ্পু ::
গত ৯ নভেম্বর মঙ্গলবার ডিমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ও মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরামের আয়োজনে ‘কামারখালসহ পৌরসভার অভ্যন্তরের সকল জলাশয় পুনরুদ্ধারে করণীয় শীর্ষক সভা’ অনুষ্ঠিত হয়। পরের দিন অর্থাৎ গত ১০ নভেম্বর বুধবার দৈনিক সুনামকন্ঠ পত্রিকার ১ম পাতায় “পৌরসভা চাইলেই খাল উদ্ধার সম্ভব” শিরোনামে একটি সংবাদ ছাপা হয়। সুনামকণ্ঠের একজন নিয়মিত পাঠক হিসেবে গভীর মনোযোগ দিয়ে প্রকাশিত সংবাদটি পাঠ করলাম। পৌর এলাকার একজন নাগরিক হিসেবে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি শহরের বিভিন্ন অঙ্গনের গুণীজনদের নিয়ে আলোচনা করার জন্য আয়োজকবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ মনে জাগ্রত হলো। উক্ত মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রিত গুণীজনদের মন্তব্যগুলোর মধ্যে যৌক্তিক প্রতিবাদের ভাষা প্রকাশিত হয়েছে দেখে আলোচকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতাবোধ জাগ্রত হলো।
যে সকল গুণীজন উক্ত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য প্রদান করেছেন পত্রিকায় প্রকাশিত তাদের মধ্যে দুইজন আলোচকের বক্তব্য পুনরায় উল্লেখ করেই আমি আজকের শিরোমের মূলপর্বে যাবো। কারণ এই বক্তব্যগুলো তুলে না ধরলে পাঠকগণ আমার লেখার সারমর্ম বুঝতে পারবেন না।
দৈনিক সুনামকণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক বিজন সেন রায় বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলে শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বাসা থেকে বের হওয়া যায় না। জনগণের দুর্ভোগের সম্পূর্ণ দায়ভার পৌরসভার। কিন্তু যে জন্য জলাবদ্ধতা দেখা দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ এর সঠিক সমাধান খোঁজে না। আমরা চাই কামারখালসহ সকল জলাশয়গুলো পুনরুদ্ধারে পৌর কর্তৃপক্ষ যেন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, এই কামারখাল কিছু রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধির দখলে রয়েছে। এটা দুঃখজনক। তাই কে করবে দখলমুক্ত? সবাই যার যার স্বার্থ নিয়ে বসে আছে। তবে প্রতিবছর যে উচ্ছেদ অভিযান হয় তা কেবল গরিবের উপর। আজও দেখিনি কামারখালের উপরে নির্মিত কোনো ভবন, মার্কেট ভাঙ্গা হয়েছে। দেখেছি শুধু যারা দিন এনে দিন খায় তাদের ঘরগুলো ভাঙতে। আসলে এই গরিবদের তো কোনো শক্তি নেই তাই এই অবিচার হয়। আর শক্তিধররা আড়াল হয়। তিনি আরো বলেন, এটা আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রক্ষা করতে হবে। এজন্য আন্দোলনের বিকল্প নাই। শহরের সৌন্দর্য্য আগের মতো ফিরিয়ে আনতে এই খালগুলো দখলের হাত থেকে রক্ষা করা সময়ের দাবি। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, কামারখালসহ শহরে যত জলাশয় রয়েছে এগুলো উদ্ধারে পৌরসভাকে উদ্যোগ নিতে হবে। দায়সারা কথা বলে সরে না গিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে দখলদারদের বিরুদ্ধে।
কামারখালখাল উদ্ধার নিয়ে সুনামকণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক বিজন সেন রায় এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান-এর সোজাসাফটা মন্তব্য মনে দাগ কেটেছে। তাদের মন্তব্যের আলোকেই এবার মূল লেখায় আসতে চাই। এই দুইজন সম্মানিত আলোচক তাদের দৃঢ়তাপূর্ণ মন্তব্যে কামারখালসহ অন্যান্য জলাশয় উদ্ধারে পৌরসভার ভূমিকাকে মুখ্য হিসেবে তুলে ধরেছেন। হয়তো এই দুই আলোচকের বক্তব্যের সারমর্ম হিসেবে গত ১০ নভেম্বর কামারখাল উদ্ধার নিয়ে মতবিনিময় সভার প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম হয়েছে ‘পৌরসভা চাইলেই খাল উদ্ধার সম্ভব’।
একটি প্রশ্ন বারবার মনকে ক্ষত-বিক্ষত করে কামারখালসহ অন্যান্য জলাশয় যদি পৌরসভার অধীনে হয় তাহলে কেন বছরের পর বছর দখলদারদের কাছ থেকে এসব উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। সুনামগঞ্জ শহরের জলাবদ্ধতার মূল কারণ হলো পানি নিষ্কাশনের কোন সুব্যবস্থা না থাকা ও পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা। যদিও পৌরসভা বিভিন্ন ওয়ার্ডে ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। কিন্তু ড্রেন নির্মাণ করলেই কী জলাবদ্ধতামুক্ত হবে শহর। কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যদি কামারখালসহ অন্যান্য জলাশয় উদ্ধার করে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে না আনা যায় তাহলে শহরবাসী কোনকালেই জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্ত হবেন না।
শহরের জলাবদ্ধতার সমস্যা কারো ব্যক্তিগত সমস্যা নয়। এই সমস্যা পুরো শহরবাসীর। কিন্তু অধিকার আদায়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি না। বিজন সেন রায় বলেছেন, শহরের জলাবদ্ধতার মূল কারণ পৌরসভা অনুসন্ধান করে না। তার এই বক্তব্য স্পষ্টভাবে পৌরসভাকেই ইঙ্গিত করে। এমন মন্তব্য কোন গণমাধ্যমে যখন প্রকাশিত হয় তখন পৌরসভার উচিত শহরবাসীকে অবগত করার জন্য এর সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করা। তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা। আমরা জেলা প্রশাসন এবং পৌরসভার মধ্যে দায় চাপানোর নাটক দেখতে চাই না। আমরা চাই সমস্যার সমাধান। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই কামারখাল পৌরসভার খতিয়ানে নেই তবুও শহরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করতে পৌরবাসীর কল্যাণে এই জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মতবনিমিয় সভার আয়োজন করা উচিত। যদি জেলা প্রশাসনের খতিয়ানেই কামারখাল থাকে তাহলে জেলা প্রশাসনের সাথে জনগণের এই ন্যায্য দাবি নিয়ে পৌরসভার আলোচনা করা প্রয়োজন। এই দায়িত্ব এড়াতে পারেন না পৌর মেয়র।
এসব দেখভালের দায়িত্ব কার এনিয়ে তর্কযুদ্ধ না করে শহরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। ভাল হতো যদি গত ৯ নভেম্বরের মতবিনিময় সভায় পৌরসভার মেয়র এবং জেলা প্রশাসককে আমন্ত্রণ জানানো হতো। তাহলে হয়তো তাদের কাছ থেকে একটা সমাধানের মন্তব্য পাওয়া যেত। আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ যে, কামারখাল কি পৌরসভার খতিয়ানে না জেলা প্রশাসনের খতিয়ানে। এটা নিয়ে বিস্তর মতবিরোধ রয়েছে। যদি জেলা প্রশাসনের খতিয়ানে থাকে তাহলে তো সহজেই দখলমুক্ত করা সম্ভব।
জনগণের কাছে আইন নেই, তবে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। কিন্তু যেসকল জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানের কাছে আইন প্রয়োগ করার ক্ষমতা আছে সেইসব প্রতিষ্ঠান যদি জনগণের কল্যাণের জন্য আইনের সঠিক প্রয়োগ না করেন তখনই জনগণের মনে আইনের প্রতি আস্থার সংকট জন্ম নেয়। অপ্রিয় হলেও সত্য কোন জনপ্রতিনিধির দ্বারা এই উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। এর সমীকরণ বড়ই জটিল। একজন জনপ্রতিনিধির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সাথে অনেক কিছু জড়িয়ে থাকে। ইচ্ছে করলেই তিনি তার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিক্রমার কথা বিবেচনা না করে কোন সাহসী সিদ্ধান্ত নিবেন না। এর জন্য যে কঠোর মনের জনপ্রতিনিধির প্রয়োজন তা আমাদের শহরে আজ নেই। যিনি আইনের প্রয়োগ দিয়ে শহরকে সুন্দর করার পরিকল্পনা করবেন।
কামারখাল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনেক লেখালেখি হয়েছে। আমি নিজেও আমার অনলাইন চ্যানেলে ভিডিও ডকুমেন্টরি প্রকাশ করেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কেন হয়নি বা হচ্ছে না সেই রহস্য আজও আমাদের মনোজগতে অজানাই রয়ে গেলো। কোন অদৃশ্য শক্তি রয়েছে এর পেছনে যার জন্য দেশের সাংবিধানিক প্রচলিত আইন বারংবার পরাজিত হচ্ছে। শৈশব থেকে শুনে আসছি কামারখাল দিয়ে বড় বড় বাণিজ্যিক নৌকা চলাচল করতো।
আইন অমান্য করার মানসিকতা অনেকের ধমনীতে প্রবহমান। আইন অমান্য করাকে তারা অহংবোধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে তাদের প্রাত্যহিক জীবনে। কিন্তু এভাবে আর কতোদিন চলবে – এটাই সচেতন জনসাধারণের প্রশ্ন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com