সুনামগঞ্জ শহরকে দৃষ্টিনন্দন করতে প্রয়াত মেয়র আয়ূব বখত জগলুল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। শহরকে দৃষ্টিনন্দন করার জন্য তাঁর দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা এবং পরিকল্পনা ছিল। এ জন্য তিনি পৌর সড়কের পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে মনোযোগী হন। দীর্ঘ বছর প্রভাবশালীদের দখলে থাকা পৌরসভার জায়গা উদ্ধার করে নাগরিকদের ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। জেলা ক্রীড়া সংস্থা মোড় থেকে সোজাসুজি বিহারী পয়েন্ট, বিহারী পয়েন্ট থেকে কাজীর পয়েন্ট পর্যন্ত অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেন এবং সড়ক প্রশস্ত করেন। তাঁর পরিকল্পনায় ছিল আলফাত স্কয়ার থেকে কাজীর পয়েন্ট, কাজীর পয়েন্ট থেকে ষোলঘর পয়েন্ট হয়ে নবীনগর পর্যন্ত পৌর সড়কের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং সড়ক প্রশস্ত করা। কিন্তু তাঁর অকাল মৃত্যুতে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। সড়কের জায়গা উদ্ধারের পাশাপাশি তিনি চেয়েছিলেন শহরের খালগুলোও উদ্ধার করবেন। কিন্তু সেই উদ্যোগ আর বাস্তবায়ন করতে পারেননি।
এক সময় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সাথে অনেক খালের সম্পর্ক ছিল। এর মধ্যে প্রধান খাল ছিল কামারখাল। এই খালের মধ্য দিয়ে নৌকা চলতো, পানি নিষ্কাশনের প্রধান পথও ছিল এটি। কিন্তু সেই অবস্থা আর নেই। এখন কামারখালের মরণদশা। বিভিন্ন কৌশলে খাল ভরাট করে অবৈধভাবে দোকানপাট, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে প্রভাবশালীরা। এসব খাল দখলের ফলে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য বর্ষা মৌসুমে শহরবাসীকে জলাবদ্ধতায় সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়।
অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কামারখালসহ পৌরসভার অভ্যন্তরের খালগুলো পুনরুদ্ধারের দাবি জোরালো হচ্ছে। সবাই চান খালগুলো পুনরুদ্ধার হোক। এক্ষেত্রে নাগরিকগণ সুনামগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে সক্রিয় হওয়ার জন্য বারবার তাগাদা দিচ্ছেন। জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনও জানিয়েছেন, খাল উদ্ধারের ব্যাপারে জেলা প্রশাসনও সার্বিক সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
সাহসী জননেতা আয়ূব বখত জগলুল আমাদের মাঝে না থাকলেও তাঁর ছায়া বর্তমান মেয়র নাদের বখতের মধ্যে রয়েছে। আমরা মনে করি, নাদের বখত সুনামগঞ্জ পৌরসভাকে দৃষ্টিনন্দন করতে যেমন উদ্যোগ নিচ্ছেন, তেমনি কামারখালসহ অন্যান্য খালগুলো পুনরুদ্ধারে সাহসী ভূমিকা রাখবেন। পাশাপাশি আমরা পৌর পরিষদের কাছে দাবি জানাই, দৃষ্টিনন্দন পৌরসভা গড়তে অবশ্যই কামারখাল উদ্ধার করতে হবে, প্রভাবশালীদের দখলে থাকা পৌরসভার জায়গা উদ্ধার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জলাবদ্ধতা কমানোর সহায়ক পথ উন্মুক্ত করতে না পারলে শহর দৃষ্টিনন্দনের সব উদ্যোগই ভেস্তে যাবে। সর্বোপরি রাষ্ট্রের স¤পদকে অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে পুনরুদ্ধারের স্বার্থে সব খাল উদ্ধার করার সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। তাই অবিলম্বে পৌরসভার উচিত প্রতিটি খালের অবস্থান চিহ্নিত করে সেগুলোকে উদ্ধারের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে তৎপর হয়ে ওঠা। আমরা আশা করি, অবৈধ দখলবাজদের কবল থেকে খালগুলো পুনরুদ্ধার করে পৌর কর্তৃপক্ষ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এবং বুঝিয়ে দিবে অবৈধ দখলবাজরা কখনোই পৌর কর্তৃপক্ষ হতে শক্তিশালী নয়।