বিশেষ প্রতিনিধি ::
নৌকার বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগে হাইকমান্ডের কঠোর অবস্থানের পরও ৯টি ইউনিয়নের ছয়টিতে নৌকার বিরুদ্ধে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ১৭জন ‘বিদ্রোহী’। চারটি ইউনিয়নে নৌকার ভরাডুবির কারণ হতে পারে বিদ্রোহী প্রার্থীদের শক্তিশালী অবস্থান। অপরদিকে, অনিয়মের বিরুদ্ধে ভোটবর্জন ঘোষণা দেওয়া বিএনপির ১৩ জন বর্তমান ও সাবেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ছয়টি ইউনিয়নে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন জেলা ও উপজেলায় বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবিতে থাকা এসব প্রার্থীরা।
১১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এমনটাই চিত্র দোয়ারাবাজার উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের। এখানে বিদ্রোহী ও বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অন্তত পাঁচটি ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা মূল লড়াই থেকে ছিটকে পড়তে পারেন বলে নেতাকর্মীদের আশঙ্কা। আর দলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে অংশ নেওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে জেলা বিএনপি।
উল্লেখ্য, ২৬১ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট প্রান্তিক এই উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৬ রয়েছেন, যাদের মধ্যে পুরুষ ৬৪ হাজার ১৩৪ ও মহিলা ভোটার সংখ্যা ৬৫ হাজার ৯৪২ জন।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগে প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা, পছন্দের বিদ্রোহী ও বিএনপির প্রার্থীদের সুুবিধা পাইয়ে দিতে পাঁচটি ইউনিয়নে দুর্বল প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার সুপারিশ করেছিল উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ। এই ‘ভুল নির্বাচনের’ খেসারত দিতে হতে পারে আওয়ামী লীগকে।
প্রসঙ্গত, দোয়ারাবাজারে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম চলে পৃথক দুটি কমিটির নেতৃত্বে। একটি স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের নামানুসারে ‘মানিক গ্রুপ’ এবং অপরটি জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শামীম আহমদ চৌধুরীর নামানুসার ‘শামীম গ্রুপ’ হিসেবে সুপরিচিত। চেয়ারম্যান পদে শামীম গ্রুপের কেউই মনোনয়ন পাননি।
নেতাকর্মীরা জানান, বাংলাবাজার ইউনিয়নে মানিক গ্রুপের বিদ্রোহী বর্তমান চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন চৌধুরী রানাকে ‘সুবিধা’ করে দিতে দুর্বল প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা বুমেরাং হয়ে দেখা দিয়েছে। গত নির্বাচনে শামীম অনুসারী দলীয় প্রার্থী আবুল হোসেন কোন্দলের ‘বলি’ হয়ে নাম লিখিয়েছেন বিদ্রোহীর খাতায়। মনোনয়ন বঞ্চিত করার ‘অবিচারের’ প্রতিশোধ নিতে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সহানুভূতি বাড়ায় আলোচনার শীর্ষের রয়েছেন তিনি।
লক্ষ্মীপুরে বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আমিরুল হককে ‘তুলে নিয়ে আসার’ পরিকল্পনা নৌকার ‘দুর্বল’ প্রার্থী ভরাডুবির মধ্যদিয়ে বাস্তবায়ন হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের ঘাঁটিখ্যাত দোহালিয়া ইউনিয়নে নৌকাকে পেছনে ফেলে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে দুই বিদ্রোহী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নূর মিয়া ও উপজেলা আওয়ামী লীগ একাংশের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শামীমুল ইসলাম শামীম। ‘বিতর্কিত’ ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ায় নৌকা নয়, নৌকার মাঝির বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়ছেন বলে দাবি তাঁদের।
এদিকে, উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে গত নির্বাচনে নৌকা নিয়ে বিজয়ী শামীম অনুসারী বর্তমান চেয়ারম্যান মামুন খন্দকারকে বাদ দিয়ে আনা হয়েছে আব্দুল হালিম বীরপ্রতীককে। জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হারুনুর অর রশিদের টেক্কা দেওয়া কঠিন হতে পারে ভোটের রাজনীতিতে নবাগত এই বীর মুক্তিযোদ্ধার।
এদিকে, মান্নারগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামী মনোনীত অসিত চন্দ্র দাশকে আলোচনায়ই রাখতে চাইছেন না সাধারণ ভোটাররা। আওয়ামী লীগ-ঘেঁষা বিএনপির বর্তমান চেয়ারম্যান আবু হেনা আজিককে সুবিধা পাইয়ে দিতে এই ইউনিয়নে দুর্বল প্রার্থী মনোয়ন দেওয়া হয়েছে বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ। এখানে বিএনপির আবু হেনা আজিজ, ইজ্জত আলী, আব্দুল খালিক ও আলী আহমদ রয়েছেন মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
অপরদিকে, দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নে জেলা বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল বারীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের আব্দুল হামিদ, নরসিংহপুরে জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি শামসুল হক নমুর সাথে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান নূর উদ্দিন আহমদ, বোগলাবাজারে বিএনপির বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফুল হকের সাথে আওয়ামী লীগের মিলন খান এবং পান্ডারগাঁও ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ওলিউর রহমান এবং আওয়ামী লীগের আব্দুল ওয়াহিদের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
সুুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট বলেন, দোয়ারাবাজারে পছন্দের ব্যক্তিদের সুবিধা পাইয়ে দিতে যেভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সেটা পুরোপুরি অন্যায়। অন্যায় সুবিধা পেয়ে নিজেদের অনুসারী বিদ্রোহী, বিরোধী মতের প্রার্থীদের জিতিয়ে দুর্বল প্রার্থীও দেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূলে নেতাকর্মীরা আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন। এসব কারণে নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি হলে সংশ্লিষ্টরা দায় এড়াতে পারবেন না।
উল্লেখ্য, আগামী ১১ নভেম্বর দোয়ারাবাজারের ৯টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ও সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই উপজেলায় ৪৪ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।