আশিস রহমান ::
করোনাকালে দীর্ঘ সময় পর বিদ্যালয় খোলা হলেও বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। বেড়েছে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে পাঠদানকালে সিংহভাগ শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। এতে করে পাঠদান কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তাঁরা।
দোয়ারাবাজার উপজেলার সবকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের আবারও বিদ্যালয়মুখী করতে এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে জোরদার করা হয়েছে হোম ভিজিট কার্যক্রম। উপজেলার প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত এলাকায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। ঝরে পড়া শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলছেন তাঁরা। হোম ভিজিট কার্যক্রম জোরদার করতে গিয়ে বাড়তি বেগ পোহাতে হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের।
উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় বিমুখ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পড়াশোনা, বই ও বিদ্যালয়ের সাথে অনেক শিক্ষার্থীর কোনো স¤পর্কই নেই। অনেকে বই হারিয়ে ফেলেছে, বই নষ্ট করে ফেলেছে। পড়াশোনার সাথে সম্পর্ক না থাকায় অনেক বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নিজের নাম লিখতে পারছেনা, সাধারণ অক্ষর জ্ঞান ভুলতে বসেছে।
উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রঞ্জিত দেব বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে পাঠদান করতে গিয়ে দেখা গেছে সিংহভাগ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত। এসব অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করে তাঁদের বাড়িতে যাচ্ছি। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে আলাপ করছি। ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে অভিভাবকদের তাগিদ দিচ্ছি।
দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি ও বালিচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, বিদ্যালয় চালু হলেও নিয়মিত পাঠদান হয় না। বর্তমান পাঠ্যক্রম ও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাক প্রাথমিকের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ক্লাস ওয়ান ও টু সপ্তাহে একদিন, থ্রি দুই দিন, ফোরের দুইদিন ক্লাস হয়। আর ফাইভের প্রতিদিন ক্লাস হচ্ছে। সপ্তাহে এক দুইদিন ক্লাস হওয়ায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই ক্লাসের বার তারিখ ভুলে যায়। আবার দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী হাফিজি ও অন্যান্য মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে, অনেকে পড়াশোনা ছেড়ে হোটেল-দোকানে কাজে যোগ দিয়েছে।
অভিভাবক মাহমুদুর রহমান রাসেল বলেন, সপ্তাহে দুয়েক দিন ক্লাস হওয়ার কারণে বাড়িতে এসে শিক্ষার্থীরা কখন কোনদিন ক্লাস তা বলকে পারেনা, ভুলে যায়। নিয়মিত ক্লাস হলে এ সমস্যাটা কমে আসবে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পঞ্চানন কুমার সানা বলেন, উপজেলায় ১০৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সব শ্রেণির নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রমের বিষয়ে এখনো পর্যন্ত নতুন কোনো সরকারি নির্দেশনা আসেনি। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে আমরা হোম ভিজিট কার্যক্রম জোরদার করেছি। এটি অব্যাহত থাকবে।