স্টাফ রিপোর্টার ::
তাহিরপুর হিফযুল উলুম আলীম মাদরাসার অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষসহ ৬টি পদে জনবল নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম নিয়োগবিধি উপেক্ষা করে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নিজের লোকজনকে চাকুরির জন্য মনোনীত করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। ওই জনবল নিয়োগে অনিয়মের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে দুদকের কর্মকর্তারা অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছেন।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, আদালত মামলাটি তদন্ত করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন। এরই মধ্যে কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতির সন্ধানে তদন্ত কার্যক্রম চলছে।
তাহিরপুর হিফযুল উলুম আলীম মাদরাসার সভাপতি ও মামলার প্রধান আসামি আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘটনাটা প্রায় ৬ মাস পূর্বের। একপক্ষ ক্ষুব্ধ হয়ে আদালতে মামলা করেছেন। মামলা হলে তদন্ত তো হবেই।
উল্লেখ্য , গত বছরের ২৭ অক্টোবর সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সদরের তাহিরপুর হিফযুল উলুম আলীম মাদরাসার ৬টি পদে জনবল নিয়োগের পরীক্ষা স্থানীয়ভাবে না নিয়ে বিভাগীয় শহর সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা দেখতে পান পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দেড় ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ১১টায় পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। একই সময় মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম তার স্ত্রী, চাচাতো ভাইসহ ৪ জন পরীক্ষার্থীকে নিয়ে মাদরাসার একটি কক্ষে গোপন বৈঠক করেন। নিয়োগে অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে পরীক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, অপু মিয়া, শবনম আক্তার ও রুবি আক্তার নামের ৪ নিয়োগ প্রত্যাশী গত ৪ নভেম্বর তাহিরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেন।
এরপর ১৪ নভেম্বর মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য বাচ্চু মিয়া সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের নিকট আরেকটি লিখিত অভিযোগ দেন। সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার ‘তাহিরপুর হিফযুল উলুম আলীম মাদরাসার নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে’ শিরোনামে দেয়া অভিযোগে তিনি বিস্তারিত বর্ণনাও দেন। এতে উল্লেখ করা হয়, সভাপতি আমিনুল ইসলাম তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তারকে হিসাবরক্ষক, পরিচালনা কমিটির সদস্য তাজিমুল ইসলাম দুলালের সহোদর শরিফুল ইসলামকে উপাধ্যক্ষ, ভগ্নিপতি মুহিবুর রহমানকে অধ্যক্ষ, মুনতাছির বিল্লাহকে অফিস সহকারী কাম ক¤িপউটার পদে, শাপলা আক্তারকে আয়া পদে ও আবু আলীকে (সানি) নৈশ প্রহরী পদে অনিয়ম -দুর্নীতি ও আত্মীয়করণ করে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করা হয়। একই বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট আরেকটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়।
এদিকে, এ ঘটনায় মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য বাচ্চু মিয়া গত ২৯ নভেম্বর সুনামগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে স্পেশাল পিটিশন মামলা দায়ের করেন। (¯েপশাল পিটিশন মামলা নম্বর ২৬/২০২০)। মামলায় মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহিবুর রহমান, তাজিমুল ইসলাম দুলাল, মিজানুর রহমান ও আলী আহমদ খান নামের ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২০(১) ধারা মোতাবেক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্যে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, সিলেট এর বরাবর প্রেরণের আদেশ দেন। দুদক প্রধান কার্যালয় হয়ে মামলার নথিপত্র মাস দুয়েক আগে দুদক সিলেট অফিসে আসে। এরপর দুদক বিষয়টির তদন্ত শুরু করে।