মো. শাহজাহান মিয়া ::
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি বলেছেন, লাঙল-ধানের শীষ দেশের মানুষকে কিছুই দিতে পারেনি। তারা কোনো উন্নয়ন করেনি, তারা দেশের মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পারেনি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিধবাভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা দিতে পারেনি। দেশের উন্নয়ন করেছেন শেখ হাসিনা।
শনিবার দুপুরে জগন্নাথপুরে আব্দুস সামাদ আজাদ অডিটোরিয়ামে নিরাপদ পানি সরবাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র পরিবারের মাঝে গভীর নলকূপ ও টুইন-পিট ল্যাট্রিন বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, এই ১২ বছরে শেখ হাসিনা যে উন্নয়ন করেছে তা আর কোনো সরকার করেনি। দেশে অনেক বড় বড় নেতা এসেছিলেন, কিন্তু অবহেলিত মানুষের কল্যাণে জন্য কিছু করেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা করছেন। ধানের শীষ (বিএনপি) আর লাঙল (জাতীয় পার্টি) এরা দেশের মানুষের জন্য কী করেছে? একটি হাকম (বাশের সাঁকো) দিতে পারেনি।
এম এ মান্নান বলেন, সারা দেশে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, গরিব মানুষের বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাসহ কোনো ধরনের ভাতা দিতে পেরেছে। যা কিছু বাংলাদেশে হয়েছে সবকিছু আওয়ামী লীগ সরকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেছেন। আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা দেশের উন্নয়নে যে নৌকায় কাজ করছে সেই ভরসা রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৌকার সঙ্গে থাকেন। দেশের উন্নয়ন হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, সরকার বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতি সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করে যাচ্ছে। দেশে-বিদেশে সম্মাননা পাচ্ছে। হাওর এলাকার পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা তার নির্দেশনায় হাওর অঞ্চলকে উন্নয়নের কাজ করছি। আর একটি ঘরেও নিরাপদ পানি ও ল্যাট্রিনের অভাব করতে হবে না।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি বলেন, দেশের প্রতিটি অঞ্চলে যা কিছু উন্নয়ন হয়েছে, তা শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেছেন। আর কেউ করেনি। তিনি বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। দেশকে এগিয়ে নিতে সবার আগে বিদ্যুতের প্রয়োজন ছিল। বিদ্যুৎ ছাড়া সব কিছু ছিল অচল। তাই বর্তমান সরকারের আমলে সবার আগে দেশে শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে দেশ। দেশের দরিদ্র ভূমিহীন মানুষকে জমি সহ নতুন পাকাঘর দিয়েছেন শেখ হাসিনা। অতীতে কেউ তা পারেনি।
তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমার বাল্যকালে দেখেছি পুরো ডুংরিয়া গ্রামে ছিল একটি মাত্র টিউবওয়েল। তখন বিশুদ্ধ পানির অভাবে অনেক মানুষ কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বিশুদ্ধ পানির কষ্ট আমি বুঝি। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে চেয়ে ১০০ কোটির টাকার একটি প্রকল্প এনেছি। এতে জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার ৪ হাজার করে টিউবওয়েল ও পাকা ল্যাট্রিন দরিদ্র মানুষকে প্রদান করা হচ্ছে। যাতে বিশুদ্ধ পানির অভাবে আর কোন মানুষকে মরতে না হয়। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অত্যন্ত সততা ও আন্তরিকতার সাথে দুই উপজেলায় দায়িত্ব পালন করছেন সহকারি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আবদুর রব সরকার। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আগামীতে আমরা মানুষের ঘরেঘরে পানি পৌঁছে দিব। যাতে মা-চাচীরা আর পানির জন্য টিউবওয়েলে গিয়ে লাইন ধরতে না হয়। সেই সাথে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি সহ সার্বিক উন্নয়ন কাজ এগিয়ে চলছে।
মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, জগন্নাথপুর পৌর শহরের যানজট নিরসনে খাদ্য গুদামের কাছে বড় সেতু নির্মাণ ও নারিকেলতলা এলাকায় কৃষি ইনস্টিটিউটসহ শতশত কোটি টাকার উন্নয়নকাজ প্রক্রিয়াধীন আছে।
মন্ত্রী বিরোধী দলের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের এতো উন্নয়ন দেখে বিএনপি সহ কিছু গোষ্ঠী ধুন্দুর-বুন্দুর ও চুকলখুরি করছে। তাদের প্রতি সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমি কোনো টাকা-পয়সা চাই না। শুধু আপনাদের ভালবাসা ও দোয়া চাই। পরপর ৩ বার আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী সংসদ নির্বাচনেও আপনারা নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে সহযোগিতা করবেন। যদি আমি এ পর্যন্ত বেঁচে থাকি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে আবারো নৌকা দিয়ে আপনাদের কাছে পাঠান, তাহলে আপনারা আমার প্রতি ন্যায়বিচার করবেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ সিদ্দিক আহমদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আকমল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জগন্নাথপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আবদুর রব সরকার।
উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি শিক্ষক সাইফুল ইসলাম রিপনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক নুরুল হক, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জগন্নাথপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাফরোজ ইসলাম মুন্না, উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কল্যাণ কান্তি রায় সানি প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা নিজাম উদ্দিন জালালী ও গীতাপাঠ করেন আশিষ দে।
এ সময় সুনামগঞ্জ জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আবুল কাশেম, জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য মাহতাবুল হাসান সমুজ, জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মধুসুধন ধর, জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি পাটলি ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক, সহ-সভাপতি আবদুল কাইয়ূম মশাহিদ, সহ-সভাপতি আলহাজ জামাল মিয়া তালুকদার, পৌর আ.লীগের সভাপতি ডা. আবদুল আহাদ, সাধারণ সম্পাদক হাজী ইকবাল হোসেন ভূইয়া, উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ূব খান, পাইলগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আপ্তাব উদ্দিন, মঞ্জুর আলী আফজল সহ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা দলীয় নেতাকর্মী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতৃবৃন্দ, পৌর কাউন্সিলরগণ, সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরে উপজেলার গোপরাপুর বাজারে চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়ন আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আলা উদ্দিনের শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন মন্ত্রী এমএ মান্নান।
পরে দুপুর ১২ টায় জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান রচিত আত্মজীবনী ‘স্মৃতিময় দিনগুলো’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকমল হোসেন, সাধারণ স¤পাদক রেজাউল করিম রিজু, লুতফুল রহমান, জগন্নাথপুর পরিকল্পনা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মধু সুধন ধর, জগন্নাথপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাফরোজ ইসলাম মুন্না, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কল্যাণ কান্তি রায় সানি, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন প্রমুখ।