মাসুম হেলাল ::
বর্ষীয়ান রাজনীতিক, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক হুইপ ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলুল হক আছপিয়াকে চোখের জলে শেষ বিদায় জানালো সুনামগঞ্জবাসী। বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত জানাযার নামাজে শরিক হন হাজারো মানুষ। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তাঁর আত্মীয়-স্বজন, দলীয় নেতাকর্মী, রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও পেশাজীবনের সহকর্মীসহ অনুসারীদের ভিড়ে কানায় কানায় ভরে ওঠে ঈদগাহ ময়দান।
এর আগে বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ পৌরসভা চত্বরে তাঁর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সর্বস্তরের মানুষ। এ সময় অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ বারের মতো দেখে নেন প্রিয় নেতাকে।
জানাজাপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, সাবেক আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হায়দার চৌধুরী লিটন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শেরেনূর আলী, সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নূরুল, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাক দেওয়ান এমদাদ রেজা চৌধুরী, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুল আবেদীন, প্রয়াতের ছেলে ব্যারিস্টার আবিদুল হক প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, ফজলুল হক আছপিয়া ছিলেন একজন সৎ, নির্লোভ, নিরহংকারী, সাদামাটা জীবনের অধিকারী একজন রাজনৈতিক নেতা। সুনামগঞ্জের উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তাঁর মৃত্যুতে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে সেটি সহজে পূরণ হবার নয়।
বক্তারা তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
বক্তারা আরও বলেন, আমরা আজ আমাদের অভিভাবককে হারিয়েছি। আমি দীর্ঘদিন তাঁর নেতৃত্বে কাজ করেছি। তিনি মানুষকে খুব ভালোবাসতেন। আছপিয়া সাহেব খুব ভালো মানুষ ছিলেন। ভাটি অঞ্চলে তার খুব জনপ্রিয়তা ছিল। তিনি সারাদেশের নেতা ছিলেন। তিনি যখন সংসদ সদস্য ছিলেন তখন হাওর এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। যার সুফল মানুষ এখন ভোগ করছে।
ফজলুল হক আছপিয়ার সন্তান ব্যারিস্টার আবিদুল হক বলেন, আমার বাবা যখন অসুস্থ ছিলেন তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন, আমি হয়তো আর বেশিদিন বাঁচবো না। সুনামগঞ্জের মানুষ খুব সহজ সরল। তুমি ওদের পাশে থাকার চেষ্টা করো। ব্যারিস্টার আবিদুল হক তাঁর পিতার ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য সমবেত জনতার প্রতি অনুরোধ করেন।
বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব সিলেটে শাহজালাল (র.) এর দরগাহ প্রাঙ্গণে শেষ জানাজা শেষে দরগাহ করস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
বুধবার বেলা ১টায় রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুল হক আছপিয়া।
উল্লেখ্য, ফজলুল হক আছপিয়া প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সুনামগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। দীর্ঘদিন জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সুনামগঞ্জ-৪ আসন থেকে তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একবার জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। জীবদ্দশায় তিনি রাজনীতির পাশাপাশি একজন তুখোড় আইনজীবী ছিলেন। সেইসাথে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।