বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জে এবার দীর্ঘস্থায়ী ও দুর্ভোগের বন্যা না হওয়ায় আমন চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী যথাসময়ে শেষ হওয়ার আশাবাদ করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৯০ ভাগ জমি চাষ করেছেন কৃষক। হাইব্রিড বা উচ্চফলনশীল ধান আরও এক সপ্তাহ পর্যন্ত লাগানো যাবে বলে জানিয়েছেন তারা। কৃষক পর্যায়ে সরকারি বীজের চাহিদা বেশি থাকলেও এবার মাত্র ১ হাজার ৪শ কৃষককে ৫ কেজি করে আমন বীজ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। ফলে অনেক কৃষকের চাহিদা থাকলেও বীজ সংগ্রহ করতে পারেননি। এদিকে কিছু এলাকার কৃষকের বীজতলা লাগানোর সময় পাহাড়ি ঢলে ভেসে যাওয়ায় তারা চারা সংকটে আছেন বলে জানিয়েছে। এবার অন্য কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বাম্পার ফলনের আশাবাদ করেছেন তারা।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ৮১ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৯০ ভাগ জমিতে ধান লাগানো শেষ। এ বছর বিআর ৪৯, বিআর ২২ এর পাশাপাশি দেশিয় ও উফশি ধান চাষাবাদ করেছেন কৃষক। জুলাই-আগস্টে স্বল্প সময়ের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কিছু পানি হলেও আমনের বীজতলার বড়ো ক্ষতি হয়নি। তবে তখন যারা বীজ ফেলেছিলেন তাদের কিছু ক্ষতি হয়েছে। সেই কৃষকরা এখন চারা সংকটে আছেন। দূর দূরান্ত থেকে চারা সংগ্রহ করে জমি জমি চাষ করেছেন চারা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন চলতি মওসুমে জেলায় বীজতলা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। জেলায় বীজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৩২৬ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৪৯৫ হেক্টর। ফলে চারা সংগ্রহ নিয়ে কোন সমস্যা নেই কৃষকদের।
কৃষকরা জানিয়েছেন, এবছর জেলায় বিআর ২২ সহ স্থানীয় প্রজাতির আমন ধান লাগানো হচ্ছে বেশি। এসব ধান বেশিরভাগ এলাকায়ই লাগানো শেষ। এখন কিছু কিছু জমিতে বিআর ৪৯ সহ উচ্চ ফলনশীল ধান লাগানো হচ্ছে। কার্তিক মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই ধান লাগানো যাবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বালিকান্দি গ্রামের আলী মিয়া বলেন, আমাদের সীমান্ত এলাকার কৃষক বেশ কয়েকবার পাহাড়ি ঢলের কারণে চারা লাগিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারণ দীর্ঘ মেয়াদী বন্যা না হলেও কয়েকবার খণ্ডকালীন পাহাড়ি ঢল বীজ ফেলার সময় ভাসিয়ে নিয়েছে। এতে কিছু কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন তারা হন্যে হয়ে চারা খোঁজছেন বিভিন্ন স্থানে গিয়ে। কষ্ট করে চারা সংগ্রহ করে জমি চাষ করেছেন তারা।
সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের দেওয়াননগর গ্রামের কৃষক ইলিয়াস আলী বলেন, এবার বীজতলা বা লাগানো ধানের তেমন ক্ষতি হয়নি। কয়েকবার বৃষ্টি দিলেও পানি স্থায়ী না হওয়ায় ক্ষেতের কোন সমস্যা হয়নি। আমাদের এলাকার কৃষক ধান লাগানো শেষ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারি বীজধানের চাহিদা ছিল বেশি। কিন্তু কৃষকরা চাহিদা অনুযায়ী বীজ পাননি।
তাহিরপুর উপজেলার রাজাই সীমান্তের কৃষক নেতা এন্ড্রু সলোমার বলেন, আমরা সীমান্তের কাছাকাছি বসবাস করায় প্রতি বছরই ওই সময়ে পাহাড়ি ঢলে বীজতলা ক্ষতি হয়। এবারও হয়েছে। তারপরও আমরা জমিতে আমন আবাদ করেছি। আশা করি ভালো ফলন পাবো।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফরিদুল হাসান বলেন, চলতি আমন মওসুমে আমনের কোন ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। এর আগেরবার চারবারের টানা বন্যার কারণে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। তিনি বলেন, এ বছর ভালো করে বর্ষাই হয়নি। তাই স্বস্তিতে আমনধান চাষ করতে পেরেছেন কৃষক। আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত আমন ধানের কিছু প্রজাতি লাগানো যাবে। তবে কৃষক পর্যায়ে সরকারি বীজ সংগ্রহের চাহিদা বেশি ছিল বলে জানান তিনি।