1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৫ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

স্ম র ণ : বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম

  • আপডেট সময় রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

:: এস ডি সুব্রত ::

“কোন মেস্তরি নাও বানাইল!
কেমন দেখা যায়।…”
এমন উপলব্ধি যার সত্বায়, মননে মগজে তিনি হলেন বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম। তার গানে উঠে এসেছে অন্তর্গত কান্না, অতিসাধারণ জীবনবোধ। হাওরের অথৈ জলরাশির নান্দনিক ছোঁয়া আর বিস্তৃত মাঠভরা সোনার ধানের গন্ধে বেড়ে উঠেছেন বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম। গান তাঁর আত্মার খোরাক। তার গান মানুষকে নিয়ে যায় ভাবসমুদ্রে, এক অন্তর্নিহিত জগতে। নাড়া দেয় মানুষের অন্তরাত্মায়। মানুষকে নিয়ে যায় জাগতিক ভাবনা ছাড়িয়ে অন্তর্লোকে। তার মনকাড়া হৃদয়ছোঁয়া গান এপার বাংলা ওপার বাংলা দুই বাংলা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে বিশ্ব দরবারে। দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের ধল আশ্রম গ্রামে ১৯১৬ খ্রি.-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি (বাংলা ১৩২২ সালের ফালগুন মাসের প্রথম মঙ্গলবার) জন্মগ্রহণ করেন বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম। পিতার নাম ইব্রাহিম আলী এবং মাতার নাম নাইওরজান বিবি। পরবর্তীতে ধল আশ্রমের পার্শ্ববর্তী উজান ধল গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। নিজ গ্রামের নৈশ বিদ্যালয়ে মাত্র আট রাত্রি পড়াশোনা করেছেন তিনি। ছিলেন সংসারের বড় ছেলে। অভাবের সংসারে হাল ধরতে গিয়ে গ্রামের এক গৃহস্থের বাড়িতে গরু রাখালের কাজ নেন। দিনে কাজ শেষে রাত্রিবেলায় বাউলগান আর যাত্রাপালা শুনতে যেতেন। ১৯৩০ সালের দিকে আব্দুল করিম লোকায়ত ধারার দিকে ধাবিত হন। নসীব উল্লাহর কণ্ঠে বাউলগান শুনে কিশোর আব্দুল করিম বিমুগ্ধ হন এবং আস্তে আস্তে বাউলগানের ভুবনে জড়িয়ে পড়েন। সাধক করম উদ্দিন ও রশীদ উদ্দিনের সান্নিধ্যে বাউলতন্ত্রে মনোনিবেশ করেন। বিভিন্ন জায়গায় আমন্ত্রণ পেয়ে গান গাইতে যেতে থাকেন। আব্দুল করিম থেকে শাহ আব্দুল করিম হয়ে উঠেন মানুষের ভালবাসায়। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মঞ্চে মরমী সাধক রশিদ উদ্দিন, দূর্বিন শাহ, কামাল উদ্দিন, উকিল মুন্সীসহ অন্যান্য মরমী সাধকদের গান গেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন শাহ আব্দুল করিম। ১৯৪৮ সালে বিয়ে করেন সরলাকে। তার ছেলে বাউল নূরজালাল।
নিজেই গান লিখে গাইতে থাকেন শাহ আব্দুল করিম। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময় গান গেয়ে গণজোয়ার সৃষ্টি করেন তিনি। মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার সাথে বিভিন্ন সভায় সফরসঙ্গী হয়ে গান গেয়ে আসর মাতিয়েছেন এবং পুরস্কার পেয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে গানের প্রোগ্রাম করেছেন তিনি। পূর্ব পাকিস্তান বেতার ও সিলেট বেতারে গান গাইতেন। শাহ আব্দুল করিম জীবদ্দশায় পেয়েছেন একুশে পদক ২০০১, রাগিব রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার ২০০০, লেবাক অ্যাওয়ার্ড ২০০৩, মেরিল প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা ২০০৪, সিটিসেল চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড আজীবন সম্মাননা ২০০৫ সহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। তার ছেলে শাহ নূর জালালের লেখা থেকে জানা যায় বাউল সম্রাট ছিলেন সহজ সরল ও মহৎ মনের অধিকারী। একবার এক সাংবাদিক বাউল সম্রাটকে যখন বলেছিলেন, অনেক শিল্পী আপনার গান গায় অথচ আপনার নাম ব্যবহার করেন না। এতে আপনার অনো কি? তখন বাউল সম্রাট বলেছিলেন- “করিম কইতো আছিল, রহিম কইছে ; কউক, আমার দুঃখ নাই, আমি যাদের উদ্দেশ্যে লিখেছি তাদের কাছে তো আমার কথাটা পৌঁছল। এতেই আমার শান্তি।”
মরমী সাধক বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সিলেটের নূরজাহান পলি ক্লিনিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে উজান ধল গ্রামের নিজ বাড়িতে সমাহিত করা হয়।
শাহ আব্দুল করিম অনেক জনপ্রিয় গানের অন্যতম একটি গান- “আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম / গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান / মিলিয়া বাউলা গান ঘাটুগান গাইতাম।।” এপার বাংলা ওপার বাংলা দুই বাংলা ছাড়িয়ে বিশ্বজুড়ে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।
[লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক, শাল্লা, সুনামগঞ্জ]

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com