পীর জুবায়ের ::
করোনা মহামারির কারণে দেড় বছর স্কুল-কলেজ বিমুখ ছিল কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এতদিন তারা ছিল ঘরবন্দি। অ্যাসাইনমেন্ট, অনলাইন-টিভি ক্লাসে নিয়েছে ক্লাসের পাঠ। এ ঘরবন্দি জীবনের অবসান হচ্ছে আজ রোববার (১২ সেপ্টেম্বর)। আজ খুলছে আলোর দুয়ার। এদিন সশরীরে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মাদরাসা। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠবে বিদ্যালয়ের আঙিনা।
তবে সংক্রমণ কমে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও স্বল্প সময় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাখা হবে। আর শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত যাবতীয় বিধিনিষেধ মানতে হবে। শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে প্রস্তুত হয়েছে সব প্রতিষ্ঠান। ধোয়ামোছা, রঙ-বার্নিশ ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় প্রস্তুত হয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
জেলা তথ্য বাতায়ন সূত্রে জানা যায়, জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৮৫৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২০৯টি তার মধ্যে সরকারি ৫টি, মাদ্রাসা রয়েছে ৯৭টি এবং মহাবিদ্যালয় রয়েছে ২৬টি তার মধ্যে সরকারি ২টি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর ৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপরই পাঠদানের জন্য প্রস্তুত করতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ চলছিলো।
শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, জেলার শহরের রাজগোবিন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়, এসসি গালর্স হাই স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কারের কাজ। শিক্ষার্থীরা যেন আগের মত খেলাধূলা করতে পারে সে লক্ষ্যে স্কুলের মাঠও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ক্লাস রুমের ভেতর জীবাণুনাশক ¯েপ্র ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় দেড় বছর যাবৎ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এ কারণে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকে ঘাটতি নিয়ে উপরের ক্লাসে উঠছে। কতটুকু শিখল, সেটাও যাচাই করা যাচ্ছে না।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র আল-আমিন বলেন, এতোদিন শুধু অপেক্ষায় ছিলাম কবে খুলবে কলেজ, কবে যাবো আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে এ জন্য আমরা আনন্দিত।
রাজগোবিন্দ প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীর এক অভিভাবক জানান, ছেলেটা শুধু বলতো স্কুল কেন খুলছে না। সে ক্লাসে যাবে। কিন্তু বয়স কম তাই পরিস্থিতি বুঝাতে পারতাম না। আসলে আমরাও বিদ্যালয় খোলার অপেক্ষায় ছিলাম। শ্রেণিপাঠ দান শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।
সরকারি দিগেন্দ্র বর্মণ কলেজের প্রভাষক মশিউর রহমান বলেন, কলেজ খোলা মানে শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীদের সেতুবন্ধন তৈরি হওয়া। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীদের দেখবো, এটা যে কতটুকু ভালো লাগার তা বলার ভাষা নেই। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুত।
জেলা শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক সুনামকণ্ঠকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেয়ে আমরা সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশনা দিয়েছিলাম পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে শ্রেণীকক্ষকে পাঠদানের উপযোগী করার। সব কিছু শেষ করে আমাদের প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকরা প্রস্তুত পাঠদানের জন্য।
উল্লেখ্য, এ বছরে এবং আগামী বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের এবং প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে। বাকি শ্রেণিগুলোর শিক্ষার্থীদের ক্লাস সপ্তাহে একদিন করে হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরে তা পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে। এ বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস কিছুদিন পরেই শেষ হয়ে গেলে নবম ও একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে; পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণির জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার প্রস্তুতি থাকবে। পরিস্থিতি অনুকূল হলে পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সশীর ক্লাস আপাতত বন্ধ থাকবে।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হবে। ক্লাসে প্রথম ১০ মিনিট করোনা সচেতনতা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অবহিত করবেন শিক্ষক। এরপর ৯টা ৪০ মিনিটে মূল পাঠদান শুরু হবে। সবমিলে প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে ক্লাস চলবে।
অন্যদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) জানায়, শ্রেণিকক্ষে তিন ফুট দূরত্ব রেখে শিক্ষার্থীদের বসানো হবে। নতুন ক্লাস রুটিনে জানানো হয়েছে, ২০২১ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে শনিবার থেকে বৃহ¯পতিবার চারটি করে ক্লাস নেওয়া হবে। ২০২২ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের শনিবার ও রোববার চারটি ক্লাস হবে। এছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস সোমবার, সপ্তম শ্রেণির মঙ্গলবার, অষ্টম শ্রেণির বুধবার ও নবম শ্রেণির ক্লাস বৃহ¯পতিবার নেওয়া হবে।