শিক্ষার্থীরা আর অন্ধকারে থাকতে চায় না। শিক্ষা জীবনে যেমন তারা লেখা-পড়া শেখে আলোর পথে এগিয়ে ছিল সে পথে তারা আবার এগিয়ে যেতে চায়। করোনা ভাইরাসই সম্ভবত একমাত্র ব্যাধি যা একযোগে সকল শ্রেণি-পেশার লোককে এক কাতারে দাঁড় করিয়েছে। অর্থনীতির ওপর চাপ অনেকেই কর্মহীন হয়েছে, বেকারত্ব, দারিদ্র্য এমনকি খাদ্য সংকটও দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
করোনার কারণে গত বছর ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়নি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়ে গেছে প্রচুর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে শিক্ষার্থীদের জীবনে কী ধরনের ক্ষতি হচ্ছে এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবে।
ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারীর সময়জুড়ে বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চতর স্থর পর্যন্ত চারকোটির বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত। এতো দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে থাকায় নানা ধরনের সমস্যা যে তৈরি হয়েছে তা সাধারণভাবেই বলা যায়। তবে বয়স শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অঞ্চল অভিভাবকদের আর্থিক অবস্থান বা সামর্থভেদে শিক্ষার্থীদের কার কী সমস্যা হয়েছে বা হতে পারে তা নিয়ে গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। অনেক আবার বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। তাছাড়া শ্রেণিকক্ষের বাইরে থাকায় অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কি কি সমস্যা দেখা দিয়েছে তাও চিহিত করতে হবে কর্তৃপক্ষকে।
সরকার করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে যে সব পদ্ধতি গ্রহণ করেছিল তা ফলপ্রসূ হয়নি। যেমন- অনলাইন ক্লাস, সংসদ টেলিভিশন বা রেডিওতে পাঠদানের উদ্যোগ। কারণ এসব ক্লাসে শিক্ষা গ্রহণ করা অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের সুযোগ কমই ছিল। শহরাঞ্চলে যা সম্ভব গ্রামাঞ্চলে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। দরিদ্র অভিভাবকরা এভাবে তাদের সন্তানদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিতে পারেননি। সমাজে যেমন ধন বৈষম্য বৃদ্ধির প্রভাব রয়েছে তেমনি শিক্ষা ক্ষেত্রেও রয়েছে।
দেশের সবকিছুই খুলে দেওয়া হয়েছে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া। সরকারের উচিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস শুরু করা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার মধ্যে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেড় বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রয়োজন ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ক্লাস চালু করতে হবে এবং তার জন্য চুক্তিভিত্তিক সহায়ক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। পরীক্ষা ছাড়া বা সামান্য পড়াশোনা করিয়ে পাসের সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে আর দেরি নয়। শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে সব অনিশ্চয়তা দূর করে তাদের আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে হবে।