বিশেষ প্রতিনিধি ::
তাহিরপুর সীমান্তে পাহাড় থেকে নেমে আসা বালু-পাথরে চাপ পড়ে বিপর্যস্ত হচ্ছে ফসলি জমি। সোমবার সকাল থেকে দিনভর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উত্তর বড়দল ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনকালে স্থানীয় বাসিন্দাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এই আগ্রাসন বন্ধ না হলে এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
এ সময় স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন জানান, সীমান্তের ওপাড়ে পাহাড় কেটে অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, স্থাপনা, নির্মাণ করায় এবং এক সময়ে পাহাড় কেটে অপরিকল্পিত কয়লা খনি খননের কারণে পাহাড় ধসের শুরু হয়। ২০০৭ সালে প্রথম এই অঞ্চলে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এসময় রাজাই ছড়া ও নয়ছাড়া দিয়ে বালু পাথর এসে এলাকার ফসলি জমি ভরাট হয়ে যায়। পুকুর, নদী, জলাশয়, গাছ গাছালি চাপা পড়ে বালুপাথরের স্তূপে। পাহাড় থেকে নেমে আসা ছোট নালা ভরাট হয়ে যায়। সীমান্তের সেতুগুলোর নিচের পানি নিষ্কাশনের পথও বন্ধ গেছে বালু-পাথরের চাপায়। গত জুন থেকে আবারও পাহাড় ধসে বড়গোপ-টেকেরঘাট সড়কের চানপুর-রজনি লাইন সড়ক চাপা পড়েছে। ভরাট হয়ে গেছে এলাকার জমি। কয়েকটি বাড়িঘরও ঢলের চাপে ভেঙে গেছে বলে জানান স্থানীয়রা।
এদিকে পাহাড়ি বালু পাথরের এই আগ্রাসনের খবর পেয়ে সোমবার এলাকায় সরেজমিন আসেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। তারা হলেন বাপা কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শরিফ জামিল, সিলেট বাপার নেতা আব্দুল করিম কিম, হবিগঞ্জের বাপার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, পরিবেশ আন্দোলনের নেতা এন্ড্রু সলোমার প্রমুখ। তারা সকাল থেকে চানপুর, রজনি লাইন, রাজাইসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় ভুক্তভোগীরা পাহাড়ি ছড়াগুলো খননের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারকে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
সিলেট পরিবেশ আন্দোলনের নেতা আব্দুল করিম কিম বলেন, তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় অবস্থা বিরাজ করছে। যেভাবে ভারত থেকে নেমে আসা বালু পাথরে এলাকার প্রাণ ও প্রকৃতি বিনষ্ট করছে আগামীতে আরো বড় কোন বিপর্যয় ডেকে আনবে। হাওর, আমন জমি, পুকুর, নদী, খাল, রাস্তাঘাট, বাস্তুভিটা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানাবো।
এন্ড্রু সলোমার বলেন, সচক্ষে না দেখলে আমাদের অবস্থা কেউ বিশ্বাস করতো না। আমাদের কয়েকটি গ্রামের সব ফসলি জমি নষ্ট হয়ে গেছে। পচাশোল হাওর ভরাট হয়ে গেছে। যে কয়েকটি সেতু ছিল পাহাড়ি ঢলের পানি নিষ্কাশন করতো তার তলদেশ ভরাট হয়ে বিপর্যয় নেমে এসেছে। আমরা এ বিষয়ে দ্রুত আন্তঃরাষ্ট্রিয় সংলাপ গ্রহণের দাবি জানাই।