আশিস রহমান ::
দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের টেংরাটিলা-আলীপুর বাজার খেয়াঘাট। সেতু না থাকায় খাসিয়ামারা নদীর এই খেয়াঘাট দিয়ে প্রায় ৫০ বছর ধরে রশি টেনে খেয়া পারাপার হতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের। প্রতিনিয়ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ হাওরপাড়ের জনসাধারণকে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি নদী ঝুঁকি নিয়ে পারি দিতে হয়। সুরমা ইউনিয়নের হাওরপাড়ের কৃষি নির্ভর ও মৎস্যচাষে বিখ্যাত ১০-১৫টি গ্রামে দীর্ঘ চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে মৎস্য খামার, সবজি চাষ ও বোরো ধান আবাদ করে আসছেন। কিন্তু নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে চাষী ও মৎস্য খামারিদের বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। খাসিয়ামারা নদীর টেংরা-আলীপুর বাজারের নিকটবর্তী সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের হলেও আজোবধি এখানে কোনো সেতু নির্মিত হয়নি। যে কারণে উপজেলার সুরমা ও লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের টেংরাটিলা, আলীপুর, আজবপুর, গিরিসনগর, পশ্চিম টিলাগাঁও, নূরপুর, সোনাপুর, নন্দীগ্রাম, সুলতানপুর, বড়কাটা, বৈঠাখাই, হাছনবাহার, এরুয়াখাই, রসরাই, সোনাপুরসহ অন্তত ১৭-২০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ও শিক্ষার্থীদেরকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সেতুর অভাবে দুর্ভোগের অন্ত নেই এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের।
খাসিয়ামারা নদীটি পাহাড়ি হওয়ায় এমনিতেই আতঙ্কে থাকেন দুই তীরের মানুষজন। একটু বৃষ্টিপাত হলেই পাহাড়িঢলে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। সারাদেশের কোথাও বন্যা না থাকলেও পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যায় দুই ইউনিয়নের শত শত বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি। বর্ষায় নদীতে থাকে প্রচণ্ড স্রোত।
এরই মধ্যেছোট্ট হাত নৌকায় রশি টেনে দুই তীরের মানুষদের পারাপার হতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। উপজেলা সদর ও জেলা সদরের সাথে যোগাযোগের আর কোনো সংযোগ সড়ক না থাকায় রশি টেনে নৌকা পারি যে কত ভোগান্তির তা ওই অঞ্চলের মানুষজনই ভাল জানেন।
আলীপুর গ্রামের মৎস্য খামারি আব্দুর রহিমের সাথে। তিনি বলেন, সেতু না থাকায় আমরা যে কত দুর্ভোগে আছি তা দেখার কেউ নেই । আমরা বারো মাসই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে নদী পারাপার হই। মাছ বাজারজাতকরণ, মৎস্য খাদ্য পরিবহণসহ সবকিছুতেই অতিরিক্ত খরচ ব্যয় হচ্ছে।
একই গ্রামের বাসিন্দা নূূরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহম্মদ মশিউর রহমান জানান, ‘খাসিয়ামারা নদীতে সেতু নির্মিত হলে হাওরপাড়ের শিক্ষা, যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক আমাদেরকে এখানে একটি সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। জানতে পেরেছি উনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় এখানে একটি সেতু টেন্ডার হয়েছে। সেতুটিু নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু হলে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ ঘুচবে।
দোয়ারাবাজারের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী দেবতোষ পাল বলেন, প্রস্তাবিত খাসিয়ামারা সেতুর টেন্ডার হয়েছে। সামনে কাজ শুরু হবে।