1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৪০ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

গণটিকায় ব্যাপক সাড়া

  • আপডেট সময় রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০২১

শামস শামীম ::
সুনামগঞ্জের ৯৭ গণটিকাকেন্দ্রে করোনা ভ্যাক্সিন নিতে মানুষের ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা গেছে। স্বাস্থ্যবিভাগ, জেলা প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রচারণার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকাগ্রহণের আগ্রহ ছিল লক্ষ করার মতো। গুজব, অপপ্রচার ও মিথ্যাচার উড়িয়ে দিয়ে দলে দলে তারা হাজির হয়েছিলেন। প্রতিটি কেন্দ্রে ৬০০ জনকে টিকা দেওয়া হলেও টিকা না দিতে পেরে ফিরে গেছেন অনেকেই। তবে সব শ্রেণির মানুষকেই টিকা নিতে দেখা গেছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ৬৯৯ জনকে বেশি ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে। জেলার ৯৭ কেন্দ্রে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৪ হাজার ৬০০। করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। ভিড়ের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা ছিলনা কোথাও। স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ টিকা নিতে মানুষের আগ্রহ দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।সরেজমিন শনিবার বেলা পৌনে ১২টায় সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় দুটি লাইনে নারী ও পুরুষরা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে আছেন। বিপুল মানুষকে সামাল দিতে গ্রামপুলিশ, স্বেচ্ছাসেবীরা হিমশিম খাচ্ছিলেন। চারটি কক্ষে রেজিস্ট্রেশন করছিলেন স্বেচ্ছাসেবীরা। তিনটি কক্ষে স্বাস্থ্যকর্মীরা সকাল থেকে টানা টিকা দিচ্ছিলেন। এই কেন্দ্রে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৫২৩ জন টিকা গ্রহীতার রেজিস্ট্রেশন করেন স্বেচ্ছাসেবীরা। এই সময় লাইনে আরও সমপরিমাণ মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের অনেকেই বয়স্ক।


এ কেন্দ্রের পুরুষ সারিতে দাঁড়ানো শারীরিক প্রতিবন্ধী ষাটোর্ধ নূরুল হক ক্র্যাচে ভর করে টিকাদান কেন্দ্রে আসেন। ভিড়ের কারণে তিনি রেজিস্ট্রেশন করতে পারছিলেন না। সারিতে দাঁড়ানো কয়েকজন যুবক তাকে অগ্রভাগে দাঁড় করিয়ে রেজিস্ট্রেশনের জন্য সহযোগিতা করেন।
নূরুল হক বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। টিভিতে পরতি দিন দেখি সারা দুনিয়ায় করোনায় মানুষ মরতাছে। আমরার গরিব দেশোও বাসা বানছে করোনা। আমার ডর আইছে। তাই সরকারি মাগ্না টিকা দিতে আইছি। যত মানুষ আইয়া দেখরাম, জানিনা আমি টিকা পাইমু কি না।
তার পাশে নারীদের সারিতে থুতনিতে একটি পুরনো মাস্ক দিয়ে টিকার জন্য অপেক্ষা করছিলেন ৭৯ বছরের বৃদ্ধা সায়াতুন নেসা। তিনি টিকার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে কার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকলেও তার সামনে ছিল আরও ২০-৩০ জনের সারি। দীর্ঘ সারিতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে এই বৃদ্ধা হাঁপিয়ে ওঠছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার নাতি নাতনিরা কইছে করোনা বুড়া মাইনষের জন্য মারাত্মক। বুড়া মাইনষেরে এই রোগ ধরলে ছাড়েনা। ইতা শুইন্যা টিকা দিতাম আইছি।’ তার সমবয়সী ও বয়সে আরও ছোট অনেকেই তখন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
এসময় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল অদুদ বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে আমাদেরকে ৬শ জনকে টিকা দেওয়ার যোগান দেওয়া হয়েছে। আমার এখানে মানুষ এসেছে তিনগুণ। কেন্দ্রে যারা এসেছেন তাদের সবাইকে আমরা রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে দিয়েছি বিনামূল্যে। টিকা স্বল্পতার কারণে যারা দিতে পারেননি তাদেরকে পরবর্তীতে দেওয়া হবে। তবে গ্রামের মানুষ টিকাদানের প্রতি খুবই আগ্রহী। এই বিপুল উপস্থিতি তারই প্রমাণ।’


দুপুর পৌনে ১টায় শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়ন টিকা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও নারী পুরুষের দীর্ঘ সারি। একদল স্বেচ্ছাসেবী রেজিস্ট্রেশন করছেন। তিনটি কক্ষে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা ভ্যাক্সিন দিচ্ছেন। এসময় একটি টিকা বুথ থেকে টিকা দিয়ে বাহু ঘষতে ঘষতে বেরুচ্ছিলেন উজানীগাঁও জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন মাওলানা শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘টিকা দিতে পেরে আমি খুশি। যত মানুষ এসেছে আগে ভাগে না এলে টিকা না দিয়েই আমাকে ফিরতে হতো। তিনি বলেন, করোনার টিকা নিতে মানুষ খুবই উৎসাহী। তবে প্রতিটি কেন্দ্রে আরও বেশি টিকা সরবরাহ করা উচিত ছিল। অনেকেই না পেয়ে ফিরে গেছেন। গুজব ও মিথ্যাচারে কান না দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান এই ধর্মীয় প্রতিনিধি।’
এই কেন্দ্রে টিকা দিতে দুপুরে আস্তে ধীরে হেঁটে আসছিলেন ৭৪ বছর বয়সী নারী সমলা বেগম। সারির একেবারে পিছনে এসে দাঁড়ান তিনি। তিনি বলেন, ‘দেশো করোনার বলা (অভিশাপ) আইছে। আজার আজার মানুষরে ধরছে ই রোগে। যারারে ধরে তারার খুব কষ্ট। আমি ই রোগ তনি বাঁচতে টিকা নেওয়াত আইছি।’
ওই কেন্দ্রে উপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাসুদ মিয়া বলেন, ‘টিকাকেন্দ্রে মানুষের উপস্থিতি দেখে মনে হয়েছে গণটিকা উৎসবে রূপ নিয়েছে। ঈদের আনন্দ নিয়ে মানুষ টিকা দিতে এসেছে দলে দলে। কোন অপপ্রচার ও ভীতি ছিলনা কারো মনে। টিকার সরবরাহ না থাকায় অর্ধেক মানুষ ফিরে গেছে। আমরা তাদেরকে আগামীবার টিকা দিতে আশ্বাস দিয়েছি।’


সিভিল সার্জন ডা. মো. শামস উদ্দিন বলেন, করোনা সচেতনতায় সরকারের প্রচারণা স্বার্থক হয়েছে। করোনা ভয়কে উড়িয়ে দিয়ে প্রতিটি কেন্দ্রেই ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। কেন্দ্রে বেশি মানুষ হওয়ায় আমরা অনেককে টিকা দিতে না পারলেও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরও কিছু বেশি ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হয়েছে।
এদিকে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনও সকালে পৌর শহরের একটি কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করে দুর্গম এলাকায় গণটিকা কেন্দ্র পরিদর্শনে বের হন। তিনি বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর এলাকার একাধিক দুর্গম কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে বিপুল মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ দিচ্ছে সরকারের প্রচারণা সফল। মানুষ কোন গুজব ও অপপ্রচারে কান না দিয়ে করোনা প্রতিরোধে ভ্যাক্সিন নিয়ে সেটাই প্রমাণ করেছেন।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com