মাসুম হেলাল ::
প্রান্তিক জেলা সুনামগঞ্জে করোনা মহামারিতে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বাড়লেও ২৮ লাখ জনসংখ্যার হাওর অধ্যুষিত জেলাটিতে নেই আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার যথাযথ জোগাড়। মহামারি শুরুর পর জেলা সদর হাসপাতালে ১০০ শয্যার করোনা ডেডিগেটেট ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা, হাই-ফ্লো অক্সিজেন সিস্টেম ও আইসিইউ না থাকায় গুরুতর রোগীদের বাঁচাতে নিতে হয় সিলেটে। অক্সিজেনের অভাবে দীর্ঘপথ অতিক্রম করতে গিয়ে রোগীদের অবস্থা আরও খারাপের দিকে চলে যায়। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবার সবধরনের ব্যবস্থা দ্রুততম সময়ের মধ্যে করার দাবি জেলাবাসীর।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫০০২ জন। আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫৫ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৭ জনের এন্টিজেন নমুনা পরীক্ষায় ৪৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সংক্রমণের এমন উচ্চ হার দেখা যাচ্ছে।
জানা যায়, করোনা মহামারি শুরুর পর সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনে ১০০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করে কর্তৃপক্ষ। শুরুতে এ ইউনিটে রোগী কম থাকলেও সংক্রমণ বাড়ায় বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। কিন্তু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়, কিংবা শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তাদের চিকিৎসার জন্য এই ইউনিটে নেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও হাই ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ। হাসপাতালটিতে চালু হয়নি কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সিস্টেমও। যে কারণে জটিল রোগীদের সিলেটে নিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প থাকে না।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বুধবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত করোনা ইউনিটে ৫০ জন রোগী ভর্তি আছেন, এর মধ্যে ৩২ জন করোনা পজেটিভ। অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ জনকে পাঠানো হয়েছে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে সিলিন্ডারে অক্সিজেন দেওয়া হয় রোগীদের। এভাবে প্রতি মিনিটে রোগীকে সর্বোচ্চ ১০ লিটার মাত্রার অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব। কিন্তু অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে মিনিটে ৩০ থেকে ৪০ লিটার প্রয়োজন পড়ে। হাসপাতালে হাই ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় এসব জটিল রোগীদের সিলেটে রেফার করা ছাড়া উপায় থাকে না।
সূত্র আরও জানায়, গত বছর সদর হাসপাতালের পুরোনো ভবনের দ্বিতীয় তলায় ১০ শয্যার আইসিইউ স্থাপনের উদ্যোগ নেয় ইউনিসেফ। মে মাসে শুরু হয় আইসিইউ ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর কাজ। জুন মাসের মধ্যেই এটি চালুর কথা থাকলে ক্রমেই পেছানো হচ্ছে।
সভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শামস উদ্দিন বলেন, আইসিইউ ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা কবে হবে চালু হবে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। দেখা যাক কতটা দ্রুত তারা এটি করে দিতে পারে।
অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির বলেন, করোনা মহামারিকালে সুনামগঞ্জে আক্রান্ত রোগীদের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা জরুরি। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত আমার শ্বশুরের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় তাঁকে সুনামগঞ্জে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে সাধারণ অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগিয়ে দুইঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে সিলেটে যেতে হয়েছে। পথে রোগীর অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। পরে সিলেটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি। এমনটা অনেকের ক্ষেত্রেই ঘটছে।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইসিইউ চালুর ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। ইউনিসেফের কর্মকর্তার সঙ্গেও কথা বলেছি। তাঁরা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে আসছেন। মাস দেড়েকের মধ্যে আইসিইউ চালু করা সম্ভব বলে আমাকে জানানো হয়েছে।