শামস শামীম ::
একযুগ আগে সুনামগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবে বাহাতি ব্যাটসমান হিসেবে স্থান পেয়ে খেলতেন গত ৩ আগস্ট টি-টুয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়া বধের নায়ক দিরাই উপজেলার মধুরাপুরের সন্তান নাসুম আহমদ। বা হাতে দুন্ধমার ব্যাট করতেন তিনি। সঙ্গে অফস্পিন বোলিংয়েও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেন। তবে বোলারের চেয়ে তখন ব্যাটসমান পরিচয়ই মুখ্য ছিল তার। সাধারণ পরিবারের সন্তান নাসুম ক্রিকেট নিয়ে উচ্চাকাক্সক্ষার কারণে নিজ জেলার বদলে বেশি সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির আশায় সিলেট জেলা দলের খেলোয়াড় হয়ে ক্রিকেট খেলেছিলেন। এ কারণে ২০১৫ সনে সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট কমিটি তাকে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২০২০ সালে জেলা দলের হয়ে খেলতে আসলে এই নিষেধাজ্ঞার কারণে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই আক্ষেপ এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন নাসুম। মাথায় নিয়ে ঘুরছেন নিজ জেলায় শাস্তির খড়গ।
প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাব ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিরাই উপজেলার হাওরঘেরা দুর্গম গ্রাম মধুরাপুরের সন্তান নাসুম আহমদ। সপরিবারে সিলেটে অবস্থান করলেও ক্রিকেট পাগল নাসুম ২০০৯ সালে সুনামগঞ্জ জেলা দলের হয়ে খেলার লক্ষ্যে সুনামগঞ্জে আসেন। ডাক পান জেলার অন্যতম ক্রিকেট ক্লাব প্যারামাউন্টে। ২০১৪ সন পর্যন্ত তিনি ওই ক্লাবের হয়ে নিয়মিত খেলেন। পরে তিনি বয়সভিত্তিক সিলেট জেলা দলের হয়ে খেলেন। সুনামগঞ্জ ক্রিকেটের সঙ্গে ছেদ পড়ে তার। এ কারণে সুনামগঞ্জের ক্রিকেট বিভাগ তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে। এই বহিষ্কারাদেশ এখনো ঝুলছে।
প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের খেলোয়াড় তাসলিমুল ইসলাম বলেন, নাসুম ভাই ছিলেন আমাদের আদর্শ খেলোয়াড়। তিনি ব্যাটিং-বোলিংয়ে সমান নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। আমরা ছোটরা তার খেলা মুগ্ধ হয়ে দেখেছি। জেলার তরুণরা তার সংস্পর্শ পেলে তার মতো আরও অনেক নাসুম সুনামগঞ্জ থেকে বেরুবে।
প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের সাবেক ক্যাপ্টেন হোসেন আহমদ রাসেল বলেন, সাংঘাতিক ক্রিকেটাসক্ত ছিল নাসুম। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দলের তারকা ক্রিকেটারদের খেলার কৌশল খুটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতো। বা হাতে ধুন্ধমার ব্যাটিং করতো। সঙ্গে অফ স্পিন ছিল বাড়তি যোগ্যতা। কিন্তু এক পর্যায়ে তার ব্যাটিং লাইন চাপা পড়ে আগুনে বোলিংয়ের কারণে। তবে আমার বিশ্বাস সে সুযোগ পেলে ব্যাটিংয়েও তার যোগ্যতা দেখাতে পারবে জাতিকে।
প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনাম আহমদ বলেন, আজ বিশ্ব তাকে চিনে একজন অফ স্পিনার হিসেবে। কিন্তু আমাদের ক্লাবে ২০০৯ সালে ছোট্ট নাসুম বাহাতি ব্যাটসমান হিসেবে সুযোগ পেয়েছিল। পরে সে অলরাউন্ডার পারফরম্যান্সে আমাদের মুগ্ধ করেছিল। পরে যখন ক্রিকেট লীগ শুরু হয় তখন সে আমাদের জানায় সুনামগঞ্জ জেলা টিমে সুযোগ-সুবিধা কম। তাই সিলেট দলে খেলবে। ক্রিকেট নিয়ে তার স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য সে সিলেট জেলার হয়ে খেলে। এই তুচ্ছ কারণে তাকে জেলা ক্রীড়া সংস্থা আজীবনের জন্য যখন নিষিদ্ধ করে তখন আমি বৈঠকে ছিলাম। এর তীব্র প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি তার নিষ্ঠা আজ দেখিয়ে দিল। সে পরিশ্রম করে এই অবস্থানে এসেছে। আমরা অবিলম্বে তার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে লজ্জা থেকে মুক্তির দাবি জানাই। তিনি বলেন, যদি নিষেধাজ্ঞা তোলা না হয় তাহলে আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য লজ্জার উদহারণ হয়ে থাকবে। তার সংস্পর্শে আমাদের এই জেলার তরুণদের যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী বলেন, নাসুম জেলা টিমে না খেলে অন্য জেলার টিমে খেলায় তাকে আমাদের জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট কমিটি সাসপেন্ড করেছিল। তারা এই সিদ্ধান্ত জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী কমিটিতে পাঠানোর পর তৎকালীন কমিটি তাকে বহিষ্কারের অনুমোদন দেয়। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আগামী মিটিংয়ে আমরা বৈঠক করে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেব।