1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

মুখ থুবড়ে পড়েছে ৩২ কোটি টাকার সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১

শামস শামীম ::
শাল্লা উপজেলার দুর্গম আগুয়াই গ্রামে ২০১৭ সালে দেশের সর্ববৃহৎ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে জলবায়ু তহবিলের টাকায় নির্মিত এই সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে নির্বিঘ্নে বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা ছিল শাসখাই, মৌরাপুর, আগুয়াই ও শাসখাই বাজারের প্রায় ৬০০ গ্রাহকের। ওই সময় বলা হয়েছিল দেশের সর্ববৃহৎ এই সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে পরবর্তীতে সেচ সুবিধাসহ ভারী কাজেও বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু উদ্বোধনের চার বছরের মাথায় এখন নিরবচ্ছিন্ন ও কাক্সিক্ষত বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ ও লোকবলের অভাবে প্রকল্পটি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। এতে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা বিদ্যুৎহীন থাকায় অবিলম্বে পল্লী বিদ্যুতে চলে যাওয়ার দাবি জানিয়েছেন। দাবির প্রেক্ষিতে স্মারকলিপি, প্রতিবাদ কর্মসূচিসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন তারা।
সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শাল্লা উপজেলার দুর্গম আগুয়াই গ্রামে জলবায়ু ট্রাস্ট ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ২০১৩ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। চার বছর পর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিকনফারেন্সে এই সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন। ৪ একর ভূমির উপর নির্মিত ৪০০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সোলার কেন্দ্রটি শাসখাই, মৌরাপুর, আগুয়াই ও শাসখাই বাজারের প্রায় ৬০০ গ্রাহককে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা ছিল।
প্রকল্পের কাজ শুরুর সময় বলা হয়েছিল, দুর্গম হাওর এলাকার এই সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র কেবল চার গ্রামের মানুষকে আলোকিত করবে না, কয়েক বছরের মধ্যে সৌর উৎপাদন কেন্দ্র থেকে সেচ সুবিধাসহ দৈনন্দিন জীবনে সকল প্রয়োজনে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে। উৎপাদনের পর প্রথমে ৫-৬ ঘণ্টা সাধারণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও এখন গড়ে দেড় ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাননা এলাকাবাসী। পুরো শাল্লা উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করা হলেও চারটি গ্রামের মানুষজন শতভাগ বিদ্যুতের বাইরে রয়ে গেছেন। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে তারা গত বছরের অক্টোবরে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। বিভিন্ন ফোরামে প্রতিদিন দাবি জানাচ্ছেন। গত মাসে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায়ও সাধারণ মানুষের এই দাবির পক্ষে আলোচনা হয়েছে।
এলাকাবাসী সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুর্ভোগের প্রকল্প থেকে বের হতে তারা স্মারকলিপি ও আন্দোলন কর্মসূচির পর এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দিরাই উপজেলা বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলীকে প্রতিবেদন জমা দানের নির্দেশ দেওয়া হয়। তারা গত বছরের ৭ নভেম্বর স্মারকলিপির আলোকে ওই চারটি গ্রামের মানুষের বিদ্যুৎ ভোগান্তির বিষয়টি সরেজমিন জেনে দুর্ভোগ কবলিত গ্রাহকদের পল্লীবিদ্যুতের আওতায় নিয়ে যাওয়ার প্রতিবেদন জমা দেন। ওই প্রতিবেদনের আলোকে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক চারটি গ্রামকে পল্লীবিদ্যুতের আওতায় নিয়ে যেতে লিখিত জানান। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সৌর বিদ্যুতের ওইসব গ্রাহককে পল্লী বিদ্যুতে নিয়ে যেতে মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিত প্রস্তাব করে। এরপর বিষয়টি ওই পর্যায়েই রয়ে গেছে।
অন্যদিকে দিন দিন সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি লোকবল, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে স্বাভাবিক উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। এলাকাবাসী জানান, উৎপাদনে আসার প্রথম দিকে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গ্রামবাসীকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুরু থেকেই নিয়মানুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছেননা তারা। গত বছরের বছরের ২৭ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রকল্পটি কার্যকরতা হারিয়ে ফেলায় বর্তমানে দেড় ঘণ্টাও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছেনা। এখন যে অল্প পরিমাণ বিদ্যুৎ পান তা দিয়ে তারা কেবল মোবাইল ফোন চার্জ ও বাতি ব্যবহার করতে পারছেন। চারটি গ্রামের পাশে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ে অন্য গ্রামের মানুষজন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পেলেও তারা আলোর নিচে অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছেন। ব্যবসা, বাণিজ্য, লেখাপড়াসহ দৈনন্দিন প্রয়োজনে ৬০০ গ্রাহক বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারছেন না।
আগুয়াই গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সুবল চন্দ্র দাস বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা স্বাভাবিক বিদ্যুৎ পাচ্ছিনা। এখন গড়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা যে বিদ্যুৎ পাই তা দিয়ে কেবল বাতি জ্বালানো ও মোবাইল চার্জ করা যায়। আমাদের উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হলেও আমরা চার গ্রাম অন্ধকারে রয়ে গেছি। তাই আমরা ৬০০ গ্রাহক পল্লী বিদ্যুতে যেতে স্মারকলিপি দিয়েছি। আমাদের দাবি মানা না হলে আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেব আমরা।
শাসখাই গ্রামের সমাজসেবী শচিপদ দাস বলেন, আমাদের অবস্থা আলোর নিচে অন্ধকারের মতো। আমাদের আশপাশের সবাই পল্লীবিদ্যুতে আলোকিত হলেও আমরা অন্ধকারে। সিস্টেম করে আমাদের অন্ধকারে রাখা হয়েছে। আমরা এই অকার্যকর সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রহসনের বিদ্যুৎ সরবরাহ থেকে মুক্তি চাই।
সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। আমি আসার আগে আমাদের কার্যালয় থেকে মন্ত্রণলায়ে একটি প্রস্তাব গেছে। যাতে শাল্লা উপজেলার আগুয়াই সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে চারটি গ্রামের মানুষজন পল্লীবিদ্যুতে যেতে চান। তিনি বলেন, আমার জানা মতে এখনো প্রস্তাবটি পাস হয়নি।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com