আশিস রহমান ::
নূরপুর গ্রামের তারা মিয়ার ৬টি দোকান ভিটা ছিল নূরপুর বাজারে। এর ওপর নির্ভর করেই চলতো তার দৈনন্দিন আয়-উপার্জন। এসব এখন অতীত, সুরমা নদীর অব্যাহত ভাঙনে একে একে সবকটি দোকান ভিটে নদীগর্ভে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বাজারের চা দোকানি একই গ্রামের কামরুজ্জামান। চা বিক্রি করেই কোনোরকমে চলে তার জীবিকা নির্বাহ। সুরমার ভাঙন এসে এখন ছুঁয়েছে তার রুটি-রুজির একমাত্র দোকানে। ভাঙন ঠেকাতে মাটিভর্তি বস্তা ফেলেও ভরসা পাচ্ছেন না তিনি। দোকানটি কতদিন টিকবে তার কোনো নিশ্চয়তাও নেই। এর আগে তার আড়াই কেয়ার জমি, দোকানভিটে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এই পর্যন্ত ভাঙন আতঙ্কে বেশ ৫-৭ বার দোকান স্থানান্তর করতে হয়েছে তাকে। সামনে দোকান সরিয়ে কোথায় নিয়ে যাবেন তা নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার। সুরমার ভাঙনে অসহায় তারা মিয়া ও কামরুজ্জামানের মতো নূরপুর বাজারের প্রত্যেক ব্যবসায়ী। তারাও নদীগর্ভে হারিয়েছেন তাদের দোকান ভিটে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের বাসিন্দা ও নূরপুর বাজারের ব্যবসায়ীদের দুর্দশা যেন পিছু ছাড়ছে না। সুরমার ভাঙন বাড়তে থাকায় শতবর্ষী নূরপুর গ্রাম ও বাজারের অস্তিত্ব সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারের সিংহভাগই বিলীন হয়েগেছে নদীগর্ভে। ভাঙন আতঙ্কে বার বার বাজার গ্রামের ভেতরে স্থানান্তর করতে করতে এখন আর স্থানান্তর করার জমিটুকুও অবশিষ্ট নেই। সম্প্রতি আবারো ভাঙন বেড়ে যাওয়ায় বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা। শুধু বাজারই নয়, নূরপুর গ্রামের প্রায় শতাধিক বাসিন্দা সুরমা নদীগর্ভে তাদের বসতবাড়ি ও জমি হারিয়ে এখন মানবেতর দিন পার করছেন। এখনও পর্যন্ত নূরপুর গ্রাম ও বাজারের ভাঙন রোধে সরকারিভাবে কোনো ধরনের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
নূরপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রউফ বলেন, গ্রামের বাসিন্দা ও বাজারের ব্যবসায়ীরা ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন। নদী ভাঙনে যারা ভিটেমাটি হারিয়েছে তাদেরকে দ্রুত স্থায়ী পুনর্বাসনের আওতায় আনার দাবি জানাই। পাশাপাশি ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানাই। অন্যথায় সুরমার ভাঙন অব্যাহত থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই পুরো গ্রাম ও বাজার বিলীন হয়ে যাবে।
ব্যবসায়ী ওবায়দুল হক বলেন, কোনোভাবেই ভাঙন রোধ করা যাচ্ছেনা। আমার দোকানভিটা হারিয়েছি। নতুন করে আবারও ভাঙন বাড়তে থাকায় ভয় হচ্ছে। গ্রামবাসী ও ব্যবসায়ীরা মিলে নিজেদের টাকায় বস্তা ভর্তি করে মাটি ফেলেছি। এভাবে আর কতদিন যাবে?
ইউপি সদস্য আলী নূর বলেন, খাসিয়ামারা নদীর মুখ থেকে নূরপুর হয়ে সোনাপুর পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকায় ২০ বছরে প্রায় ২০০ পরিবার তাদের বসতবাড়ি, জমি ও দোকান ভিটা নদী ভাঙনে হারিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এই পর্যন্ত ২-৩ বার সরেজমিনে এসে ভাঙন প্রবণ এলাকার মাপজোখ নিয়েছে। কিন্তু ভাঙনরোধে এখন পর্যন্ত তারা কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, সুরমা নদী ভাঙন রোধে কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে কাজ শুরু হবে। এছাড়াও কয়েকটি প্রকল্পের কাজ এখন চলমান রয়েছে।