1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৫ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

লকডাউনের রোজনামচা

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই, ২০২১

:: ওবায়দুল মুন্সী ::
দেশে করোনার সংক্রমণ ক্রমেই বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে মৃত্যু। সুনামগঞ্জের অবস্থাও সুবিধাজনক নয়। এই জুলাই মাসেই সুনামগঞ্জে আমরা হারিয়েছি বেশ ক’জন প্রিয় মানুষকে। আমার বন্ধুবর কবি শেখ একেএম জাকারিয়া, সুনামগঞ্জ সরকারি হাসপাতালের একজন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট। প্রতিদিনই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা নমুনা সংগ্রহ করে যাচ্ছেন। নিজেও একসময় করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। সুস্থ হওয়ার পর আবারও নমুনা সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত আছেন। ২২ জুলাই ২০২১ খ্রি. তারিখে তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে একটি পোস্ট আমার মনে খুবই দাগ কাটলো। তিনি লিখেছেন- “সাড়ে এগারোটা থেকে সাড়ে তিনটা অবধি ৩৮টি নমুনা সংগ্রহ করেছি। মাথার ওপরে বৈদ্যুতিক পাখা ঘুরছিল তবু গরমে কলেবরজুড়ে লবণাক্ত জলের বিদীর্ণ স্বাদ! খবর আর কত দিমু? ৩৮টি নমুনার মধ্যে ২৮টি নমুনা কোভিড এন্টিজেন পজেটিভ, ১০টি নমুনা কোভিড এন্টিজেন নেগেটিভ! নেগেটিভ দশটির মধ্য ছয়টি নমুনা ফলোআপের। এর অর্থ পূর্বে পজেটিভ ছিল। এ হিসেবে লেখাই যায়, সুনামগঞ্জে জ্বরের রোগী ৯৮ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত! স্বাস্থ্যবিধি মানার কারও ইচ্ছেই দেখি না। সরকারের নিন্দা করতে আমরা কিন্তু বেশ পটু! আমাদের এতটাই দুঃসাহসিক হৃদয় যে, ‘আক্রান্ত হইয়া বুঝি আমাদের করোনা হইয়াছে!”
“বেসেবা সময়ে বেবাটা মানুষরাই লুইট্যা ফিট্যা খাইরা! যেগুন ভুখান্যাঙ্গা ইগুন খালি চিল্যাইয়া মররা! সুবিধাবাদী মাত্র একভাগ আর তিনভাগের মধ্যে একভাগ কাইন্দাকুইট্যা চলরা, দুইভাগ বাকহীন! মাইলের করোনা আইয়া গরিব রে আরও গরিব খইরা ফকির বানাইয়া ছাড়বো দেখি!”
কথাগুলো একজন শ্রমিকের। টানা প্রায় দুইবছর ধরে করোনাকালীন লকডাউন পরিস্থিতিতে স্ত্রী-সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে বাপের থেকে পাওয়া সামান্য ধানিজমি নামমাত্র এক নেতার কাছে বিক্রি করতে হয়েছে। বাকি আছে শুধু মাথাগোঁজার ভিটেমাটি। সরকারি ত্রাণও পায়নি! না পাওয়ার কারণ- সে হলো মধ্যবিত্ত। এরকম কত মধ্যবিত্ত আমি দেখেছি। এই দুই বছরে সবাই নিম্নবিত্তে পরিণত হয়েছেন। প্রাকৃতিক এই অতিমারিকালে সরকারি সাহায্যেও যথাসাধ্য হয়েছে এখনো হচ্ছে। কিন্তু নীতিতে হোক আর দুর্নীতীতেই হোক দুটোতেই হয়েছে। আমিও একখানা কার্ড পেয়েছিলাম সাংবাদিক শামছুল কাদির মিছবাহ ভাইয়ের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ পৌরসভার কমিশনার ইয়াছিন ভাইয়ের কাছ থেকে। কিন্তু আফসোস! কার্ডখানা এখনো ত্রাণহীন পড়ে আছে আলমারির ড্রয়ায়ে।
শুনেছি, বাংলাদেশের অনেক শিল্পকলা একাডেমিতে সাংস্কৃতিক কর্মীদের জন্য সরকারি ভাতাও আসে। চল্লিশ বছরের শর্ত রেখে সরকার সাংস্কৃতিক কর্মীদের ভাতা দিচ্ছে। আমিও তো সাহিত্যের একজন সেবক। আমার চল্লিশ হতে আর মাত্র এক বছর বাকি আছে। তাই আমিও পাইনি। তাহলে, পায় কারা? সত্যি বলতে কী ওই যে সরকারি গৃহনির্মাণ করার মতোই হয়েছে। কথা বলার মানুষ নেই! সবার মুখ বন্ধ। কারো বন্ধ ভয়ে কারো বন্ধ জয়ে! দশ হাজারের দুই হাজার পেয়ে বিশজনের পেটে লাথি মেরে তারা মহাসুখেই আছেন। আমিও চাই মানুষ লকডাউন মানুক। সচেতন হয়ে সুরক্ষিত থাকুক, সুস্থ থাকুক ঘরেই থাকুক।
গাঁয়ের গেদাই চাচায় চেঁচাইয়া কইলা ওবেটা ভাতিজা, তুমি আমারে লকডাউন কিতা বুঝাইতায়! মানুষও আর কত বুঝতো, পেটেনু সয়না। আমি গাওয়ালি মানুষ হিসেবে কই- সরকার যদি সারাদেশে প্রকৃত সব গরিব পরিবারে আগাম একবছরের ব্যয়ভার গ্রহণ করে বলতো যে সবাই ঘরে থাকো তাহলে কেউ বেরই হতো না। লকডাউনও সফল হতো। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশিরভাগ ভিআইপি লোকেরাই। আমার লাখান কয়জন গরিবের করোনা অইছে? আমি শুধু শুনেই গেলাম কিন্তু সত্য/মিথ্যা কিছুই বলতে পারলাম না।
এবার কোরবানির ঈদের বোনাস পেয়েছি পাঁচ হাজার টাকা। আমার ছেলেটা অন্য ছেলে-মেয়ের সাইকেল চালাতে দেখে দুইমাস ধরে কান্না করছিল সাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য। প্রতিদিন বাসায় গেলে জিজ্ঞেস করতো, আব্বু সাইকেল এনেছো? আমি লকডাউনের দোহাই দিয়ে নানান অজুহাতে তাকে বুঝিয়ে আসছিলাম। তাই পাঁচ হাজার টাকা ঈদ বোনাস পাওয়া মাত্রই ছেলের সাইকেলটা কিনে দিলাম। সাইকেল পেয়ে ছেলেটার মুখে খুশির ঈদ দেখেছি। ছেলেটার ঈদেই ছিল আমার ঈদ।
লকডাউনের কবলে পড়ে আমার মতো প্রাইভেট কো¤পানির অনেক চাকরিজীবী খুবই কষ্টে আছে। লকডাউনের রোজনামচায় বারবার মনে পড়ে শিল্পী হায়দার হোসেনের বাস্তববাদী সেই গানের কথা- “আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার। বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার!”
কোনো একদিন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমরাও করোনামুক্ত হবো। পৃথিবী আবার চলতে থাকবে স্বাভাবিক নিয়মে। কিন্তু কালের ধারায় এই করোনাকালবিভীষিকাময় ইতিহাস হয়ে পঠিত হবে আমাদের প্রজন্মের কাছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com