হোসাইন আহমদ ::
“আমার ছেলে নাজিমুল ইসলাম মেধাবী ছিল। সে জাউয়া বাজার ডিগ্রী কলেজের বিএ প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করতো। খুনিরা প্রকাশ্যে দিবালোকে আমার বাড়িতে এসে আমার সামনে ছেলেকে খুন করে পালিয়েছে। আমরা খুনিদের ফাঁসি ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আমার ছেলেকে আর কোনো দিন ফিরে পাবো না। তবে হত্যার বিচার পেলে কিছুটা হলেও শান্তি পাবে তার আত্মা।”
বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) সকালে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার বড়মোহা গ্রামে নিজ বাড়িতে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে এই আকুতি তুলে ধরেন প্রতিপক্ষের হামলায় নিত নাজিমুল ইসলাম জায়গীরদারের (২১) বৃদ্ধ বাবা আনছার মিয়া ও শয্যাশায়ী মা রানা বেগমসহ স্বজনরা।
মামলার সূত্র জানা যায়, গত ২৭ জুন (রোববার) বিকেল সাড়ে ৫টায় উপজেলার বড়মোহা গ্রামের ঈদগাহের মাঠে ক্রিকেট খেলা নিয়া আনছার মিয়ার ছেলে নাজিমুল ইসলাম জায়গীরদার ও একই গ্রামের মৃত খলিল খানের ছেলে এরশাদ খাঁন ও তার ভাই আমিন খাঁনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বড়মোহা গ্রামের শাহী আলম খাঁনসহ গোষ্ঠীর লোকজন উত্তেজিত হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নাজিমুল ইসলামের বাড়িতে এসে হামলা চালায়। এসময় খাঁ গোষ্ঠীর লোকজন নাজিমুল ইসলাম জায়গীরদারকে তাঁর বসতবাড়ির উঠানে আক্রমণ চালিয়ে সুলফি দিয়ে তার বুকে আঘাত করে ও জনৈক খালিছ মিয়ার পেটে ঘা মারে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদেরকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে নাজিমুল ইসলাম জায়গীরদার রাস্তায় মারা যায়। এ ঘটনায় নিহতের পিতা আনছার মিয়া বাদী হয়ে সোমবার (২৮ জুন) দুপুরে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় ৫১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার বাদী আনছার মিয়া (৬৫) বলেন, আমার এক ছেলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমার ছোট ছেলে নিহত নাজিমও মেধাবী ছিল, খেলাধুলাও ভাল ছিল। তাকে বিসিএস ক্যাডার বানানোর স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু প্রতিবেশী প্রতিপক্ষ আমার ছেলেকে হত্যা করে সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। বড়মোহা গ্রামের শাহী আলম খাঁন, ফয়সল খাঁন, জুবেদ খাঁন, দিলদার খাঁন, তফজ্জুল খাঁন, সুন্দর খাঁন ও তাদের গোষ্ঠীর লোকেরা আমার বসতবাড়ির উঠানে আমার ছেলে নাজিমুল ইসলাম জায়গীরদারকে প্রকাশ্যে সুলফি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছে।
নিহতের শয্যাশায়ী মা রানা বেগম (৬০) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, খাঁ গোষ্ঠীর লোকজন আমারই বাড়ির উঠানে আমার সামনে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমার বুকের ধন কেড়ে নিয়েছে। আমি ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি করছি। অনতি বিলম্বে প্রধান আসামি শাহী আলমসহ সকল আসামিকে গ্রেফতারের দাবি জানাই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন। তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ইতিমধ্যে ২নং আসামি দিলোয়ার খাঁন দিলদারসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মোক্তাদির হোসেন বলেন, মামলার পরপরই একাধিক অভিযান চালিয়ে ২নং আসামিসহ ৭ আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। প্রধান আসামিসহ অন্যান্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। নাজিম হত্যা মামলার সকল আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।