1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০০ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ভাষা রেহনুমা : আমার আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই, ২০২১

:: উজ্জ্বল মেহেদী ::
ঠিক তেরো বছর বয়সের এক সদ্য কিশোরী। ডায়েরি লেখার শুরু সেই বয়সেই। পনেরো বছর দুই মাস বয়স পর্যন্ত লিখতে পেরেছিল সেই কিশোরী। ডায়েরির পাতায় শেষ আঁচড় টানার ঠিক সাত মাস পরে এই পৃথিবীর জল-মাটি-হাওয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছিল তার। চলে গেছে সে কিন্তু রেখে গেছে তার কালজয়ী অমর দিনলিপি। দুই বছর দুই মাসের দিনলিপি – আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি।
কানিজ রেহনুমা রব্বানী। ভাষা রেহনুমা নামে পরিচিত। তার সঙ্গে যখন পরিচয়, তখন সে কিশোরী। সংবাদকর্মী হিসেবে হাতেখড়ির সেই সময়ে কিশোরী ভাষাকে দেখলে আমার আনা ফ্রাঙ্কের কথা মনে হতো। আঠারোর তারুণ্যে পা রাখার আমার সেই সময়ে ‘আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি’ পৃথিবী কাঁপানোর মতো আমাকেও আপ্লুত করত। আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি পড়ার সময়ে পরিচয় ভাষার সঙ্গে। সেই পরিচয়ে একদিন আমার কাছ থেকে আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি নিয়ে পড়েছিল ভাষা। সেই থেকে ভাষা আনা ফ্রাঙ্কের ভক্ত, আমিও তাকে আনা ফ্রাঙ্ক বলতাম।
কিশোরী বড় হয়েছে। বাবা অন্তঃপ্রাণ। কাজে-অকাজে যোগাযোগ ছিল। শুধু যোগাযোগ নয়, হৃদকলমের টান। আইনজীবী, রাজনীতি, সমাজকর্ম-সব শাখায় বিচরণ ছিল তার। ইচ্ছে ছিল আমার শুরুর সময়কে আবার জাগ্রত করার। আমি যেন সহযাত্রী হই। তার প্রয়াত বাবা রাজনীতিবিদ-সাংবাদিক গোলাম রব্বানী স¤পদিত পত্রিকা ‘গ্রামবাংলার কথা’ আবার নতুন করে প্রকাশনার। আমি সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিতাম। এই আশ্বাসে একটি স্বপ্ন বড় করে দেখা হয়। ভাষার সেই স্বপ্ন-আশা পূরণ হয়নি। অকালে, অসময়ে তার মধ্যে বেড়ে ওঠা আরও একজনকে নিয়ে ওপারে পাড়ি দিল!
আহ! আর লিখতে পারছি না, সইতেও পারছি না! হাত কাঁপছে! গত ৩০ জুন আমার জন্মদিন নিয়ে পরদিন একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছিল ভাষা। আমাকে ট্যাগ করায় সহজে চোখে পড়ে। আমি লেখা পড়ে এতটা আপ্লুত ছিলাম যে, তাকে আর ফোন করতে পারিনি। সেই লেখায় অনেক মন্তব্য। আমিও শেয়ার করি, আমার প্রতিক্রিয়াসমেত। লেখাটি কথাসাহিত্যিক আকমল হোসেন নিপু, রম্যলেখক মাহবুবুল আলম কবীরকেও স্পর্শ করে। নিপুভাই ফোন করে জানতে চান। ভাষা ও তার আশপাশ নিয়ে বলি। তিনিও মুগ্ধ হন। ভাষা এই বর্ষায় সবাই মিলে আড্ডা দিতে চেয়েছিল। করোনা আক্রান্ত হয়েও চৈতন্য প্রকাশনার কর্ণধার রাজীব চৌধুরীর কাছে ফোন করে সেই সব আকুতিভরা কথা বলেছিল। ইচ্ছে ছিল, করোনা কাটলে একদিন বাসায় গিয়ে জমাট আড্ডা দেব। আজ ফোন করে ঘুম ভাঙাল নিয়ামুল ইসলাম খান। খবরটা জানানোর পর বিমূঢ় আমি; নাটাই হাতে পড়ে রইল, ইচ্ছের ঘুড়িটা কাটা পড়ল!
ভাষার শেষ লেখা স্ট্যাটাসটার সঙ্গে আমার একটি পুরোনো ছবি দিয়েছিল। সেই ছবির দিকে তাকিয়ে মনে পড়ে, তার সঙ্গে আমার ওই পোশাকে সম্ভবত ওই দিনই সর্বশেষ দেখা হয়েছিল। এরপর আর দেখা হয়নি। কিন্তু ফোন যোগাযোগ ছিল। লেখা পড়ে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া জানানোর পর্বও চলত। আমার প্রতি অপার এক মুগ্ধতার পেছনের টান ছিল কিশোরকালের স্মৃতি ও তার বাবার স্নেহধন্য আমি।
যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মেহেদী কাবুল শোক-কাতরতায় একটি স্ক্রিনশট দিয়ে ভাষার সেই লেখাটি ইনবক্সে দিলেন। ‘একটা মানুষ মৃত্যুর আগে কিভাবে এতো সুন্দর কথা বলতে পারে (Mehedi sent Today at 10:50 AM) এতো দূরে থেকেও তাঁর চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না!’ ভেজা চোখে লিখেছেন কাবুল।
আমার কাছে ‘আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি’ সমাদরে থাকবে ভাষার শেষ লেখাটি। আনা-ভাষায় অদ্ভুত একটা মিল। দুজনেই অকালে পাড়ি দিল। আনা যদি বেঁচে থাকত, সেই বর্বরতার সচিত্র বর্ণনা পৃথিবীর মানুষ শুনতে পেত। আর আমাদের ভাষা যদি পূর্ণ জীবন পেত, এই জগৎ পেত একটি সুন্দর নেতৃত্ব। সেটা হতে পারত আইনপেশায়, সাংবাদিকতায়, রাজনৈতিক অথবা সামাজিকতায়।
কী করে বিদায় বলি ভাষা! বিদায় বলছি না, তুমি আমার কাছে আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি হয়েই থাকবে।
লেখক : সাংবাদিক

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com