স্টাফ রিপোর্টার ::
“যদি আর নাই ফিরি নীড়ে
যদি হারিয়ে যাই কোন এক ভিড়ে
যদি ভালোবাসাগুলোতে ধুলো জমে ধীরে
তবু মনে রেখো আমি আসবো ফিরে
তোমারই মনে, কোন এক শিশির ভেজা ভোরে”
মৃত্যু নিয়ে কবিতাটি লিখেছিলেন অ্যাড. কনিজ রেহনুমা রব্বানী ভাষা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বুধবার ভোরে সিলেটের মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। তিনি সন্তানসম্ভবা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে সুনামগঞ্জে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
অ্যাডভোকেট কনিজ রেহনুমা আহমেদ ভাষা বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানী ও সাবেক সংসদ সদস্য ও পিপি অ্যাডভোকেট শাহানা রাব্বানীর মেয়ে। তাঁর স্বামী মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী। তাঁর ছোটভাই ফজলে রাব্বী স্মরণ বাংলাদেশ যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কনিজ রেহনুমা রব্বানী ভাষা বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ গ্রিন ক্রিসেন্ট সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সুনামগঞ্জ সমিতি ঢাকার সাধারণ সম্পাদক, সুনামগঞ্জ শিক্ষা কল্যাণ ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন।
বুধবার জোহরের নামাজের পর দক্ষিণ সুনামগঞ্জের উজানীগাঁও মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে অ্যাড. কনিজ রেহমুনা রব্বানী ভাষার অকাল মৃত্যু শোক প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি, সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা, সংসদ সদস্য অ্যাড. পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আ.লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, দৈনিক সুনামকণ্ঠ’র সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মো. জিয়াউল হক, সম্পাদক ও প্রকাশক বিজন সেন রায়, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, দৈনিক সুনামগঞ্জের ডাক সম্পাদক ও প্রকাশক অধ্যক্ষ শেরগুল আহমেদ, সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু, সাধারণ সম্পাদক এমরানুল হক চৌধুরী প্রমুখ।
কানিজ রেহনুমা ভাষার মৃত্যুতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অনেকে। যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি। তিনি লিখেছেন, কীভাবে কী লিখব, কী বলব কিছুই বুঝছি না। এইতো কয়দিন আগে আমাকে কী সুন্দর একটা ম্যাসেজ করল, ওর কে একজন আমাদের সঙ্গে দেখা করবে, আর আমাদের যদি কিছু লাগে, সময় চাইছিল, আমি উত্তর দিতে পারিনি তোমাকে বোন। ভেবেছিলাম কয়েকটা দিন গেলে উত্তর দেব। আজকে কী শুনলাম জানি না। তুমি নেই আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। কঠিন কোনো কিছুতে মাথা কাজ করে না। তাই ভাবতেও পারছি না। ভাষা, কী বলব তোমাকে জানি না, তুমি কী ভালো থাকবে একা একা? আল্লাহ এ পৃথিবী বাসযোগ্য করে দাও মানবকুলের জন্য, আমাদের না বুঝা পাপের প্রায়শ্চিত্ত অনেক তো হলো, আর কত? মৃত্যুর বোঝা ভারি হতে হতে আর বহনযোগ্য হচ্ছে না। স্বাভাবিক মৃত্যুই মানতে পারি না।
সাংবাদিক, কবি ও গীতিকার সেজুল হোসেন লিখেছেন, “এ কেমন সকাল, রাতের চেয়েও অন্ধকার! ঘুম থেকে উঠে শুনি ‘ভাষা’ আর নেই। ভাষা রেহনুমার এই না থাকার খবরে স্তব্ধ, বাকরুদ্ধ। বুকের ভিতরে শীতল একটা বেদনার স্রোত বইছে। এই খবরের জন্য মন কোনওভাবেই প্রস্তুত ছিলো না। এতো মায়ার মানুষ, আপন মানুষ কম দেখেছি। তাঁর মা শাহানা আপা বড় বোনের মতো, অভিভাবক আমাদের। আমার খুব প্রিয় ভাগ্নি ভাষার জন্য গভীর কান্না। প্রার্থনা।”