স্টাফ রিপোর্টার ::
তাহিরপুরের যাদুকাটা বালু মহাল থেকে সংগ্রহকৃত বালুবাহী নৌকা থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র নাম ভাঙিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। প্রতিদিন নৌ শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার রক্তি নদীর ফতেপুর ইউনিয়নের রঙ্গারচর ব্রিজের নিচ দিয়ে চলাচলকারী নৌকা থেকে দিনে-দুপুরে এই চাঁদাবাজি চলছে। চাঁদা দিতে রাজি না হলে নৌকায় থাকা শ্রমিকদের লাঞ্ছিত এবং মারধর করে চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা। ফলে ব্যবসা পরিচালনায় ক্ষতিগ্রস্তসহ নিরাপদভাবে বালু পরিবহনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
এদিকে বালুবাহী নৌকা থেকে চাঁদা আদায় বন্ধের দাবি জানিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছেন মালবাহী নৌযান শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী তালুকদার। গত ৫ জুলাই জেলা প্রশাসক বরাবরে দায়েরকৃত অভিযোগ থেকে জানাযায়, যাদুকাটা বালু মহাল থেকে বালু ক্রয় করে নৌপথে পরিবহনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। নৌকাবর্তী বালু বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের রঙ্গারচর নামক স্থানে এসে পৌঁছলে একটি চক্র বিআইডব্লিউটিএ’র নামে প্রতি নৌকা/বাল্কহেড থেকে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করছে। চাঁদা না দেওয়ায় নৌকার মাঝিগণ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ফতেপুর-রঙ্গারচর এলাকায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কোন ঘাট বা জেটি নেই এবং দুর্লভপুর থেকে আনোয়ারপুর পর্যন্ত কোথাও বালু উঠা-নামা করা হয় না। বিআইডব্লিউটিএ-এর নীতিমালা লঙ্ঘন করে এ চক্রটি প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। নৌযান মাঝিদের হয়রানি ও চাঁদাবাজী বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন মালবাহী নৌযান শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী তালুকদার।
এদিকে, মিয়ারচর বালুপাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল গণি বলেন, প্রতিফুটে ৫০ পয়সা করে চাঁদা তুলে নিচ্ছে রিপন, তোফাজ্জল, অলিউর, রশিদসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র। চলন্ত নৌকা থেকে চাঁদাবাজি বন্ধে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি।
যাদুকাটা বালু ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সমিতির সভাপতি আব্দুস সাহিদ বলেন, যাদুকাটা নদীতে বালু উত্তোলন করা হয়। রক্তি নদীর ফতেপুর এলাকায় বালু পরিবহনকারী নৌযান থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র নামে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্রটি। ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। চাঁদাবাজদের কবল থেকে পরিত্রাণ পেতে আমরা প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ কামনা করছি।
ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রনজিত চৌধুরী রাজন বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র নামে বালুবাহী নৌযান থেকে প্রকাশ্যে চাঁদা তুলছে একটি চক্র। আমি তাদের কাছে কাগজপত্র চাইলে তারা কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।
এদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা যায়, আশুগঞ্জ-ভৈরব বাজার নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার আবুয়া ও রক্তি নদীর সংযোগস্থল হতে লাউড়েরগড় পর্যন্ত এলাকায় উভয় তীরের নৌ-যানের উঠানামাকৃত মালামালের জন্য শুল্ক ও বার্দিক চার্জ আদায় করতে ইজারা প্রদান করা হয়েছে। ইজারা শর্তে চলন্ত অবস্থায় নৌযান হতে শুল্ক আদায় না করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুর্লভপুর থেকে লাউড়েরগড় পর্যন্ত কোথাও বালু উঠানামা হয় না। যাদুকাটা নদীর মাঝখান থেকে শ্রমিকরা বালু উত্তোলন করে নদীর মাঝখানেই নৌকা লোড করেন। যেখানে নির্দিষ্ট সীমানার কোথাও বালু লোড আনলোড হয় না। কিন্তু চলন্ত নৌযান থেকে অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন চলছে বেপরোয়াভাবে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক মো. শহিদুল্লাহ বলেন, চলন্ত নৌকা থেকে চাঁদা তোলার কোনো নিয়ম নেই। নৌ-যানের উঠানামাকৃত মালামালের জন্য শুল্ক আদায় হয়ে থাকে। বিআইডব্লিউটিএ’র নামে চাঁদার তোলা হচ্ছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশ পাঠিয়ে বিষয়টি দেখবো।
চাঁদাবাজির ব্যাপারে র্যাব -৯ এর অধিনায়ক লে. কমান্ডার সিঞ্চন আহমেদ বলেন, নদী পথে চাঁদাবাজির ব্যাপারে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। তবে আমাদের নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে দেখবো। চাঁদাবাজি হলে এদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানান তিনি।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, চাঁদাবাজির সাথে পুলিশ জড়িত নয়। বিআইডব্লিউটিএ নামে চাঁদাবাজি হলে আপনারা পত্রিকায় লিখুন। আমি এ বিষয় নিয়ে কথা বলে সরকারের অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে দ্বন্দ্বে জড়াতে চাই না। পত্রিকায় লেখেন, সরকার আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি আমার উত্তর বলে দেব।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিআইডব্লিউটিএ এর নামে টাকা উঠানোর বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবো।