রাজন চন্দ ::
তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকার কয়েকটি টিলায় বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। পাহাড়ের ঝর্ণার পানি আবার কখনো দূরবর্তী যাদুকাটা নদীর পানি পান করেই চলছে তাদের জীবন। সমতলে পানির সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলেও উপজেলার সীমান্ত এলাকার পাহাড়ি অঞ্চলে বারেক টিলা, মাঝের টিলা, চানপুর টিলাসহ সীমান্তের বেশ কয়েকটি এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। সীমান্ত এলাকার টিলায় বসবাসকারী মানুষজন দিনের পর দিন বিশুদ্ধ পানি সংকটে থাকার বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজনকে অবহিত করলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
প্রাকৃতিক সম্পদ আর সৌন্দর্যে ভরপুর হাওরবেষ্টিত তাহিরপুর উপজেলা। বিশাল টাঙ্গুয়ার হাওর, সীমান্তের নীলাদ্রি লেক আর এশিয়ার বৃহত্তর শিমুল বাগানের জন্য পর্যটন ¯পষ্ট হিসেবেও তাহিরপুর উপজেলা অত্যন্ত সুপরিচিত। হাওর-বাওর আর দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পাহাড়ের জীবনযাপন খুবই কঠিন। সীমান্ত অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা পাহাড় ও টিলা ভূমি নিয়ে গঠিত। পাহাড়ি ঝর্ণা ও নদী এসব পানির উৎস থাকলেও সবসময় সেখানে পর্যাপ্ত ও নিরাপদ পানি পাওয়া যায় না।
গ্রীষ্মের শুরুতেই তীব্র পানি সংকট দেখা দেয় তাহিরপুর উপজেলার টিলাগুলোতে। পাহাড়ি গ্রামগুলোর মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। দুর্গম পাহাড়ি টিলাগুলোতে বসবাসরত পল্লীগুলোতে নিরাপদ সুপেয় পানির অভাবে বিভিন্ন রকম পানিবাহিত রোগ দেখা দেয়।
উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নে অবস্থিত সীমান্তঘেঁষা পর্যটন স্পষ্ট খ্যাত বারেকটিলা (বারিক্কা টিলা), মাঝের টিলা, চানপুর টিলার সৌন্দর্য্য দেখতে আসা দেশ-বিদেশের হাজারো পর্যটকদেরও বিশুদ্ধ পানির অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
টিলায় বসবারত গ্রামগুলোতে তীব্র পানি সংকট থাকায় এসব এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দারা হেঁটে দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে পানি সংগ্রহ করে থাকেন। বেশির ভাগ পানিই তারা পাহাড়ি টিলার ঝিরি ঝর্ণা থেকে সংগ্রহ করেন।
গ্রীষ্মকালে কাছের ঝিরি, ঝর্ণার পানি শুকিয়ে যাওয়াতে পানির জন্য তাদের দূরের পথ পারি দিতে হয়। নিরাপদ পানির আশায় জীবন ঝুঁকি নিয়ে পানি সংকট মোকাবিলা করতে অনেক সময় দূরবর্তী জায়গা থেকে পানি সংগ্রহ করেন তারা।
বারেকটিলায় বসবাসরত আনন্দপুর গ্রামের আদিবাসী নেতা পুলক আজিম জানান, তাদের এলাকায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। শুকনো মৌসুমে পাহাড়ি যাদুকাটা নদীর পানির উপর নির্ভর করে গ্রামটির মানুষ পানির চাহিদা পূরণ করে। বর্ষাকালে নদীর পানি ঘোলা হয়ে গেলে তাদের খাবার পানির সংকট বেড়ে যায়। শুধু বারেকটিলা নয়, সীমান্তে বেশ কয়েকটি টিলার উপর বসবাসরত মানুষের বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার ব্যবস্থা নেই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সম্রাট জানান, দীর্ঘদিন ধরেই পাহাড়ি টিলাগুলোতে পানি সংকট রয়েছে। বিশুদ্ধ পানি না থাকায় অনেক সময় নদীর পানিই পান করতে হয়।
উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, টিলার উপর টিউবওয়েল বসানোর সুযোগ নেই। এ জন্যই মূলত পানি সংকট। কিছুদিন পূর্বে আমার নিজস্ব অর্থায়নে মটর স্থাপন করে প্রায় ১৩শ ফুট পাইপ দিয়ে নিচ থেকে পানি নেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবির জানান, পানি সংকটের বিষয়টি অবগত নই। তবে টিলায় বসবাসকারী লোকজনের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।