1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

কুশিয়ারা সেতুর নির্মাণকাজ ৯০ ভাগ শেষ : ঢাকার সঙ্গে বিকল্প সড়ক যোগাযোগ চালু হচ্ছে হাওরবাসীর

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১

শামস শামীম, রাণীগঞ্জ থেকে ফিরে ::
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সুনামগঞ্জবাসীর বিকল্প যাতায়াতের পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি সড়ক প্রকল্পটি ‘প্রয়োজনীয়তা নেই’ উল্লেখ করে বাতিল করে দিয়েছিল চারদলীয় জোট সরকার। বাতিল প্রকল্পটি কেবল আলোর মুখই দেখেনি, এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। জেলার প্রায় ২৮ লাখ মানুষের চোখের সামনে দৃষ্টিনন্দন পাগলা-জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ-আউশকান্দি ৫০ কি.মি. সড়ক এখন দৃশ্যমান। কুশিয়ারা ফেরি হয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সহজে, কম সময়ে ও কম খরচে আংশিক যাতায়াতও চালু হয়েছে। যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে সিলেট বিভাগের সবচেয়ে দীর্ঘ ৭০২ মিটার দৈর্ঘ্যরে কুশিয়ারা সেতুর কাজও প্রায় ৯০ ভাগ শেষ। একই সঙ্গে মধ্যখানে আরও ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি সেতুর নির্মাণকাজও শেষের দিকে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন আগামী বছরেই রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বিকল্প ও বহুল কাক্সিক্ষত সড়ক যোগাযোগ চালু হবে। এতে প্রায় ৬০ কি.মি. দূরত্ব কমবে সুনামগঞ্জবাসীর। সময় বাঁচবে অন্তত আড়াই ঘণ্টা।
সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট এবং জগন্নাথপুরের সুধীজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সনে ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ জগন্নাথপুর আউশকান্দি সড়ক নির্মাণে উদ্যোগ নেন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার এ প্রকল্পের কাজ বাতিল করে দেয়। উপনির্বাচনে বিজয়ী তৎকালীন চারদলীয় জোটের এমপি জমিয়ত নেতা মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরীও এতে বাধা দেননি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প ‘সবুজ পাতায়’ বহুল কাক্সিক্ষত এই প্রকল্পটি নিয়ে আসেন। তারপর তিনি একনেকে অনুমোদন করান। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের ডাবর থেকে জগন্নাথপুর, হবিগঞ্জের ইনাতগঞ্জ হয়ে আউশকান্দি পর্যন্ত সড়কের ৩৬ কি.মি. নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।


২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে কাক্সিক্ষত কুশিয়ারা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন ৭০২ মিটার দীর্ঘ ও সাড়ে ৩৩ ফুট প্রস্থের এই সেতুটি সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম সেতু। দুই দিকের দীর্ঘ আড়াই কি.মি. অ্যাপ্রোচে রয়েছে তিনটি কালভার্ট। সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ১৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে সেতু নির্মাণে জড়িত চীনা ‘সিআর ২৪বি’ নামের সংস্থাটি করোনার কারণে তাদের সেতু বিশেষজ্ঞদের না পাঠানোয় গত বছর থমকে ছিল কাজ। অবশেষে দ্রুত কাজ শেষ করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ পদ্মা ও মেঘনা-গোমতি নদীতে সেতু নির্মাণে যুক্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দেশীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কাজ বাস্তবায়ন করছে। নদীর মধ্যখানে তিনটি স্প্যানে ১৯০ মিটার দীর্ঘ বক্স গার্ডার নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এই সেতুর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো দেশে একসঙ্গে ‘আই গার্ডার’ ও ‘বক্স গার্ডারের’ সমন্বয় করা হয়েছে। ৬০টি আই গার্ডারের মধ্যে সবগুলোর কাজ শেষ হয়েছে। ১২টি স্ল্যাবের মধ্যে ১২টি স্ল্যাবের কাজও শেষ। সেতুর নিচের সব কাজ শেষ হওয়ার পর এখন উপরিভাগসহ মূল সেতুর কাজও প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। কুশিয়ারা সেতুর দক্ষিণ পাড়ে নির্মিত হচ্ছে অ্যাক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন ও আধুনিক ওয়েব বেজ্ড ফোরলেন টোলপ্লাজা।
সরেজমিন সেতুতে গিয়ে দেখা যায়, দ্রুত গতিতে কাজ করছেন শ্রমিকরা। কাজের সমন্বয় করছেন বিশেষজ্ঞসহ সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীবৃন্দ। সেতুর নিচে স্থাপিত ল্যাবে গিয়ে দেখা যায় সেতুতে ব্যবহার করা নির্মাণ উপকরণ পরীক্ষা করে ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। পরীক্ষার পর স্যাম্পলগুলো নির্ধারিত স্থানে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, নদীর উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ের অ্যাপ্রোচের কাজ শেষ। সেতু ও অ্যাপ্রোচের ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ তদারকি করছেন ছাতক সড়ক উপ-বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কাজী নজরুল ইসলাম ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তারা জানালেন আগামী বছর সেতুর কাজ শেষ হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একই সড়কের বিভিন্ন কিলোমিটারে ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বেইলি সেতুর স্থলে আরও ৭টি পিসি-আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ কাজও চলমান রয়েছে। ৭টি সেতুর মধ্যে ১টি সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এই মাসে আরও তিনটি সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এই ৭ সেতুর মধ্যে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কুন্দোনালা সেতুর গার্ডার শিফটিংকালে হাইড্রলিক জ্যাক বিকল হওয়ায় ৫টি গার্ডারের মধ্যে সবগুলো নিচে পড়ে যায়। ধসে পড়া সেই গার্ডারগুলো পুনরায় নির্মাণকাজ চলছে। ইতোমধ্যেই ৫টি গার্ডারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী মাসেই ওই সেতুর স্লাব নির্মাণকাজ শেষে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা জানান সংশ্লিষ্টরা।
কুশিয়ারা সেতুর দক্ষিণের অ্যাপ্রোচ সংলগ্ন রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন মিয়াকে দেখা গেল সেতুর কাজ দেখছেন নিবিষ্ট মনে। তিনি বলেন, কুশিয়ারা সেতু আমাদের সময়ে শেষ হবে কল্পনাও করিনি। এখন আমার চোখের সামনে প্রতিদিনই একটু একটু করে বাড়ছে আমাদের স্বপ্ন। তিনি বলেন, সিলেট শহর ঘুরে ঢাকা যেতে হতো জেলার মানুষদের। সেতুটির কাজ শেষ হলে আমরা আড়াই ঘণ্টা সময় বাঁচিয়ে ঢাকায় চলে যাব।
বাগময়না গ্রামের আকবর হোসেন বলেন, চারদলীয় জোট সরকার আমাদের স্বপ্নটি বাতিল করে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার এসে আমাদের স্বপ্নটি পূরণ করে দিয়েছে।
সুনামগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জিয়াউল হক বলেন, দেশের উত্তরপূর্ব প্রান্তের শেষ জেলা সুনামগঞ্জ। আমাদেরকে সিলেট শহর হয়ে ঢাকায় যেতে হয়। এখন পাগলা-আউশকান্দি সড়কের কাজ শেষ হওয়ায় রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বিকল্প যোগাযোগের সৃষ্টি হয়েছে। কুশিয়ারা সেতুটির কাজ শেষ হলেই আমরা কম সময়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বিকল্প পথে যাতায়াতের পাশাপাশি আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম রাণীগঞ্জ সেতুর কাজ শেষ পর্যায়ে। নদীর সাব-স্ট্রাকচারের কাজ শেষ। সুপার স্ট্রাকচারের কাজও শেষ হওয়ার পথে। করোনার কারণে গত বছর চিনা এক্সপার্টরা না আসায় বিলম্ব হলেও এখন দেশিয় এক্সপার্টরা কাজ করছেন। আগামী বছর শেষের দিকেই সেতুর কাজ শেষ হবে। তাছাড়া এই পথের আরও ৭টি সেতুর কাজও শেষের পথে বলে জানান তিনি।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, কুশিয়ারা সেতু নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন। যারা হিংসাপ্রসূত এই বিকল্প সড়ক যোগাযোগ প্রকল্পটি বাতিল করেছিল আজ তাদের চোখের সামনেই শেখ হাসিনার সরকার হাওরবাসীর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। এই সড়ক ও সেতুর ফলে হাওরবাসীর জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com