:: মো. আব্দুল আওয়াল ::
মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এখানে সন্দেহের অবকাশ নেই। ঐশ্বরিক দানে বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ জগতে উচ্চস্তরের বাসিন্দা। আবার বিজ্ঞানের ভাষ্য মতে অনুকূল পরিবেশের কল্যাণে মানুষ স্থলভূমে অভিযোজিত। সে যাই হোক। মোদ্দাকথা কালান্তরের বিবর্তনে মানব সভ্যতা কুষ্ঠ, কলেরার মতো প্রাকৃতিক বৈরিতা মোকাবিলায় সফল হিসেবে আজও পৃথিবীতে অস্তিত্বশীল। অন্যদিকে নিজের যোগ্যতা প্রমাণে ব্যর্থ ডাইনোসর প্রাণীটি পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে চিরতরে। একই প্রক্রিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে মানবজাতি করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) নামক এক মহামারি ব্যাধির মোকাবিলা করছে। নিঃসন্দেহে চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রভূত উন্নতি করেছে। কিন্তু কোভিড মোকাবিলায় অদ্যাবধি উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখাতে পারেনি। ফলে মহামারি খ্যাত কোভিড ১৯ পৃথিবীর বুকে এক মস্ত ক্ষতচিহ্নের ইতিহাস রচনা করছে।
বৈশ্বিক মহামারি রূপে আবির্ভূত নতুন ব্যাধি কোভিডের জন্ম চীনের হুয়াইয়ু শহরে। জন্মলগ্ন থেকেই কোভিড জাতি ধর্ম এবং বয়স নির্বিশেষে এক মৃত্যু পরওয়ানা। দেখতে দেখতে সমগ্র বিশ্ব গ্রাস করে ফেলেছে। কোভিড আক্রমণে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যানে প্রতিদিন যোগ হচ্ছে বড় অংকের সংখ্যা। কোভিড তাণ্ডবে মানব সভ্যতা বিপর্যস্ত। এমন কি আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স, ইতালিসহ মানব সভ্যতার অভিজাত বিশ্ব আজ দিশেহারা। বিশ্ববাসী আজ নির্বাক ও স্তম্ভিত। এক কথায় মানব জাতির উপর চলছে কোভিড ১৯ এর অলিখিত আধিপত্য। আমরা হলাম কালের সাক্ষী। তবুও আমরা হতাশ নই। চলছে ঘুরে দাঁড়াবার সর্বান্তকরণ চেষ্টা। একদিন করোনা ভাইরাসও অন্যান্য মহামারি ব্যাধির মত হয়ে যাবে সাধারণ রোগ। ততদিন আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতেই হবে।
আশার কথা এই যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে বিভিন্ন দেশ কোভিডের তাণ্ডব মোকাবেলায় প্রবর্তন করেছে নতুন নতুন স্বাস্থ্যবিধি। বাংলাদেশও কোভিড নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানসমূহ নিজ নিজ অবস্থান থেকে ব্যবস্থা গ্রহণে সচেষ্ট। কোভিড নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধির আওতায় অনুসৃত ব্যবস্থার সার সংক্ষেপ নিম্নরূপ :
১. সাবান পানি দিয়ে বারবার হাত ধৌত করা; ২. ঘরে ঘরে বাহিরে গেলে মাস্ক পরিধান করা; ৩. জনসমাগম এড়িয়ে চলা; ৪. সভা সমাবেশে অনলাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা; ৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা; ৬. উপাসনালয় সেনিটাইজ করা; ৭. সামাজিক দূরত্ব বাজায় রাখা; ৮. আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে কোয়ারেন্টিন করা; ৯. অসুস্থ বোধ করলে পরীক্ষা করা, আইসোলেশনে থাকা ও চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা। ১০. টিকা গ্রহণ করা; ১১. লকডাউন মান্য করা ইত্যাদি।
এ যাবত গৃহীত সকল ব্যবস্থা কার্যকর করতে আপামর মানুষের সার্বিক সহযোগিতা অত্যাবশ্যক। কিন্তু অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় বিধি ব্যবস্থা প্রতিপালনে আমাদের আগ্রহ নেই। আমরা মনের খেয়ালে কোভিড চুম্বনে ধন্য হতে চাই। জেনে বুঝে আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স, ইতালির পরিণতি আলিঙ্গনে বিলাসী। প্রকৃত প্রস্তাবে সেটা নিজেই নিজের ধ্বংসকে আমন্ত্রণ জানানোর সামিল। এখনই সময় সচেতন হওয়ার। অন্যথায় আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দায়িত্বহীনতার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে বাধ্য।
যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে এমনই দুর্যোগ আসবে বারবার। সাহস, শক্তি আর মেধায় ভর করে আমরা পারি দেব তরঙ্গ বারি। প্রতিবারই সাজাবো নতুন পৃথিবী। তবেই মানবসভ্যতা সৃষ্টির সেরা বিবেচনায় সকল বৈশ্বিক প্রতিকূলতায় যোগ্যতার পরিচয়ে টিকে থাকবো জগত ধ্বংসের শেষ ক্ষণতক। আমরা করবো জয় – ইনশাল্লাহ।
[মো. আব্দুল আওয়াল, ফিল্ড সুপারভাইজার, সুনামগঞ্জ]