অঞ্জন পুরকায়স্থ ::
জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের ‘মিনি পাগনা’ একটি হাওর। এর তীরে ৬টি গ্রামে বাস করে ৪ শতাধিক পরিবার। ৫টি গ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বী ৩ শতাধিক পরিবার জেলে সম্প্রদায়। দুই শত বছরের বসতি এই সম্প্রদায় এখানে পূর্বপুরুষদের ন্যায় মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের শাসন-শোষণ শেষে স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তির দেশে বহুমুখী উন্নয়নের অদম্য যাত্রা অব্যাহত থাকলে ও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি ৩০০টি জেলে পরিবারের। হাওরের মাঝখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে যুদ্ধে জয়ী হলেও এই সম্প্রদায় মরদেহ দাহ ও সৎকার করতে গিয়ে হয় পরাজিত। একটি শ্মশানঘাট নির্মাণ করেও টিকিয়ে রাখা যায় না। বর্ষার আফালে (হাওরের প্রচণ্ড ঢেউ) ভেঙে যায় ভিটেমাটি। শ্মশানের ভিটে রক্ষায় কোন প্রতিরক্ষা দেয়াল না থাকায় প্রতি বছরই বিলীন হয় শ্মশানের চিহ্ন।
এই হত দরিদ্র জেলে সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন কোন ধনাঢ্য ব্যক্তি বা সংগঠন নেই যাদের অনুদানে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এ সমস্যায় জর্জরিত মিনি পাগনা হাওরের যশমন্তপুর, সুখদেবপুর, কৃষ্ণপুর, শ্রীমন্তপুর, তায়েবনগর গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
আহাজারি করে যশমন্তপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মনমোহন বর্মণ, যতিমোহন দাস, রঞ্জিত দাস বলেন, বর্ষায় একজনের মৃত্যু হলে বৈরী আবহাওয়া শান্ত না হওয়া পর্যন্ত ঘরের ভিতরে লাশ নিয়ে বসে থাকতে হয় দিনের পর দিন। আবহাওয়া অনুকূলে আসলে পার্শ্ববর্তী উপজেলা ধর্মপাশা উপজেলা মিলনপুর গ্রামের সার্বজনীন শ্মশানে দাহ করতে হয়। এত বিলম্বে মৃত লাশের দুর্গন্ধসহ ধর্মীয় শাস্ত্র বিধান লঙ্ঘিত হয়।
সুখদেবপুর গ্রামের অদ্বৈত বর্মণ, কৃষ্ণপুর গ্রামের দিলীপ ও কালাচাঁদ বর্মণ, তায়েব নগর গ্রামের শৈবালীনী বর্মণ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, সারাদেশে পৌঁছলেও মিনি পাগনা হাওরের হিন্দু মুসলিম ৬টি গ্রামবাসী এখনো অন্ধকারে আছি। ২ বছরে আগে মিটারের টাকা জমা দিয়েও পাইনি বিদ্যুৎ। আমাদের অভিযোগের আর অবস্থার কথা কেউ শুনে না। সুখদেবপুরে একটি শ্মশানঘাট নির্মাণ করে শবদাহ পুড়ানোর ব্যবস্থা করতে সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ এবং ৬টি গ্রামে বিদ্যুতায়নের দাবি জানান স্থানীয়রা।
ফেনারবাঁক ইউপি সদস্য আসাদ মিয়া বলেন, শ্মশানঘাট নির্মাণের জন্য নির্দিষ্ট জায়গাটি গভীর। বর্ষায় অনেক নিচে তলিয়ে যায়।
ইউপি চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু তালুকদার বলেন, এখানকার মাটি বালি যুক্ত, টেকসই ভিট না। এছাড়াও বর্তমানের মতো আগে এতো বরাদ্দ ছিল না। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, জামালগঞ্জের লাশ ধর্মপাশায় পুড়ানো হয় আগে জানতাম না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাটি ভরাট করলে আগামী অর্থ বছরে এডিবি ফান্ড থেকে প্রতিরক্ষা দেয়াল তৈরি করার ব্যবস্থা করবো।