হোসাইন আহমদ ::
“আমাদের জীবন চলে যায় যায়, বাপ-দাদারা কষ্ট করে গেছেন, আমরা কী আর আরাম করতে পারবো? আশপাশের গ্রামে কত জায়গায় কত উন্নয়ন হয়। কিন্তু আমাদের গ্রামে একটি ব্রিজ না থাকায় বাঁশের সাঁকো দিয়েই চলছে যাতায়াত। বর্ষায় নাও অথবা সাঁকো, হেমন্তে পাও।”
কথাগুলো বলছিলেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাঁক ইউনিয়নের উকারগাঁও গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুল কাইয়ূম।
উকারগাঁও গ্রামের পূর্ব ও দক্ষিণ পার্শ্বে বিভিন্ন হাটি বাড়িতে বাঁশের সাঁকোই গ্রামবাসীদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। বড় লাটিয়া নদীর ওপর ব্যক্তিউদ্যোগে নির্মিত একাধিক বাঁশের সাঁকো দিয়েই ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত করছেন গ্রামের লোকজন। গ্রামবাসী বলছেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এ গ্রামের লোকজনদের যাতায়াতে কোন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি। এমনকি গ্রামের ভিতর দিয়ে চলাচলেরও কোন রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। সাঁকো দিয়ে সারা বছর কোনো রকমে গ্রামের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগী সহ সাধারণ লোকজনদের চলাচল করতে হয়। তবে হেমন্তে সাঁকোর নিচ দিয়ে গ্রামের লোকজন পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পারেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার উকারগাঁও গ্রামে প্রায় ৪ শতাধিক পরিবারের বসবাস। এ গ্রামের রয়েছে মসজিদ, মাদরাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। গ্রামের মানুষদের নোয়াখালি থেকে ভিমখালি মেইন রোডে যাতায়াত করতে বর্ষায় নৌকা কিংবা হাটি বাড়িতে ব্যক্তি উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে যাতায়াত করতে হয়। গ্রামে কোন লোক অসুস্থ হলে এবং গর্ভবতী মা’য়ের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে সাথে সাথে নিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য। গ্রামের শিক্ষার্থীরা স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়, স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিক কিংবা উপজেলা সদরে যেতে ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো কিংবা হেমন্ত মৌসুমে প্রতিদিন বিভিন্ন বাড়ির পাশে গোপাট কিংবা বাঁশের সাঁকোর নিচ দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও উকারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা জানান, স্বাধীনতার পর থেকে বার বার নির্বাচিত হয়ে একাধিক জনপ্রতিনিধিরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এ গ্রামের উন্নয়নের কথা কেউ ভাবেনি। আমাদের বাপ-দাদারা বাঁশের সাঁকো ও নৌকা দিয়ে চলাচল করেছেন। আমরাও এখন চলাচল করছি। আমাদের ভাগ্যের আর পরিবর্তন কবে হবে। বিগত দিনে জনপ্রতিনিধিরা ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও এ পর্যন্ত উকারগাঁও এলাকাবাসীর ভাগ্যে দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই জোটেনি।
উকারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা প্রবীণ মুরুব্বী আব্দুল কাইয়ূম বলেন, অনেকেই জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায়। কিন্তু নির্বাচনের পর আর কেউ আমাদের খোঁজ-খবর নেয়নি। আমরা অনেক দিন ধরে একটি ব্রিজের স্বপ্ন দেখছি কিন্তু আমদের স্বপ্ন যেন রয়ে গেল।
উকারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সৌদি আরব প্রবাসী মনির উদ্দিন বলেন, সাঁকো পার হয়ে গ্রামের ছেলে মেয়েরো স্কুল-কলেজে যেতে হয়। বাঁশের সাঁকো ঝূঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে আমাদের ছেলে মেয়েদেরকে স্কুল কলেজে পাঠাতে অনেক ভয় পেতে হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান জিতু বলেন, বড় লাঠিয়া বিলের ওপর ব্রিজ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। ব্রিজ নির্মাণের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী আলহাজ এমএ মান্নানের দিকনির্দেশনায় বিভিন্ন দপ্তরে কাগজপত্র পাঠিয়েছি। কিন্তু এখনো সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে কোন সাড়া পাচ্ছি না।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকারি বিভাগ (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আল নুর তারেক বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। এর আগে করা কোন ফাইলপত্র আছে কিনা আমার জানা নেই। শীঘ্রই ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রকল্প তৈরি করবো এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাবো। আশাকরি অল্প দিনের মধ্যেই প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে।