শহীদনূর আহমেদ ::
ছাতক-দোয়ারাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়কের বেহাল অবস্থা দীর্ঘ দু’বছর ধরে। এর মধ্যে সড়কের কাটাখালি-নোয়াগাঁও এলাকার সেতুটি ভেঙে যাওয়াও জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বহুল প্রত্যাশিত এই সেতু ও সড়কের পুনঃনির্মাণকাজ শুরুর আশ্বাস ছাড়া কিছুই মিলছে না। ভাঙা সেতু ও বেহাল সড়কের কারণে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ছাতক-দোয়ারাবাজার উপজেলার অন্তত ৫ লাখ মানুষ।
২০১৯ সালের বন্যা এবং ২০২০ সালের চার দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়ক এবং বানের প্রবল স্রোতে ভেঙে যায় কাটাখালি এলাকার সেতুটিও। ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ছাতক-সুনামগঞ্জ আন্তঃজেলা সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা।
সুনামগঞ্জের সাথে জেলার শিল্পনগরী খ্যাত উপজেলা ছাতকের দূরত্ব কমাতে ২০১০-১১ সালে ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়কের ১৮ কিলোমিটারের কাজ হয়। ছাতক-দোয়ারাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়কের দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার। ছাতক-দোয়ারাবাজার অংশের ১০ কিলোমিটার এবং সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার অংশে ১৮ কিলোমিটার।
স্থানীয়রা জানান, সুরমা নদীর পানি দেখার হাওরে নামার সংযোগস্থল ‘কাটাখালি-নোয়াগাঁও ভাঙ্গা’। এখানে সেতু নির্মাণের সময়ই এলাকাবাসী আপত্তি জানিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন- এখানে সেতু নির্মাণ করলে স্থায়ী হবে না। সে সময় কর্তৃপক্ষ তাদের কথা আমলে নেয়নি। এই সেতুর কাজের মান নিয়েও বারবার আপত্তি জানিয়েছিলেন এলাকাবাসী। পরবর্তীতে স্থানীয়দের শঙ্কার কথাই সত্য হয়। গত দুই বছরের বন্যায় ভেঙে পড়ে সেতুটি।
কাটাখালি-নোয়াগাঁও এলাকার বাসিন্দারা জানান, সেতুটি ভেঙে পড়ায় যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছেন লাখো মানুষ। গুরুতর রোগী নিয়ে জেলা শহরে যেতে বিপাকে পড়তে হয় প্রতিনিয়ত। বর্তমানে সড়কটি ভাঙা থাকায় অতিরিক্ত ভাড়াও গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই যাত্রীদের প্রায় দ্বিগুন-তিনগুন ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। ইতিমধ্যে গেল বর্ষায় খেয়া নৌকায় পারাপারের সময় প্রবল স্রোতের কবলে পড়ে এক যাত্রীর মৃত্যুও হয়েছে। নিরুপায় হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা এভাবেই চলাচল করছেন। স্থানীয়রা কাটাখালি-নোয়াগাঁও এলাকায় টেকসই সেতু নির্মাণ এবং বেহাল সড়ক দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান।
ছাতকের বাসিন্দা সেলিম আহমদ বলেন, ছাতক-দোয়ারাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়কের বেহাল অবস্থা। এর মধ্যে কাটাখালি-নোয়াগাঁও এলাকার সেতুটিও ভেঙে গেছে। এই পথ দিয়ে জেলা সদরে খুব সহজে পৌঁছা যেত। কিন্তু সড়ক বেহাল ও সেতু ভাঙা থাকায় আমাদের দুর্ভোগের সীমা নেই। আমরা এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই।
দোয়ারাবাজারের বাসিন্দা আশিষ রহমান বলেন, ছাতক-দোয়ারাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়ক দিয়ে লাখো মানুষ যাতায়াত করেন। জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অনেক দিন ধরে। ফলে মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। সামনে বর্ষা। এই বর্ষায় মানুষের কষ্টের অন্ত থাকবে না। কাটাখালি এলাকার ভাঙ্গা সেতুতে বৃহৎ পরিকল্পনা করে এলাকাবাসীর যোগাযোগ সমস্যার সমাধান করতে হবে।
ছাতক-দোয়ারাবাজর-সুনামগঞ্জ সড়কপথ ৩টি উপজেলার মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন সেতু-বন্ধন তৈরির পাশাপাশি কর্মব্যস্ত মানুষের জন্য এ সড়কটি অতিগুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সুনামগঞ্জ এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুব আলম বলেন, ২০২০ সালের পর পর বন্যায় সেতুসহ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি পুনঃযোগাযোগ স্থাপনের। ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি সিফট করে ৯৫ মিটারের সেতু নির্মাণে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করার মাধ্যমে নতুন সেতু নির্মাণে কাজ দ্রুতই শুরু করা যাবে।