:: মৃত্তিকা চক্রবর্তী ::
ঠাকুমা’র সাথে একজন নাতিনের কেমন সম্পর্ক তা বুঝে উঠতে পারিনি কখনো। কারণ, যখন ঠাম্মা চলে যান আমি তখন অবুঝ শিশু। তবে তিনি তো সাধারণ কেউ ছিলেন না। তিনি ছিলেন অনন্য সাধারণ। তিনি সেই মা যিনি নিজের সন্তানের সাথে পড়াশোনা করেছেন। একই সাথে ঘরে ও বাইরে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। আবার তিনি সেই ঠাকুমা যিনি নাতিদের সুস্থতার দিকে খেয়াল রেখেছেন, তাদের সংস্কৃতিমনা করার লক্ষ্যে তৎপর ছিলেন। এককথায় দশভুজা মা দুর্গারই যেন আরেক রূপ ছিলেন। সংসারে থেকেও তিনি যেন ছিলেন সংসারবিবাগী। নিজের বাসাতেই আশ্রয় দিতেন দিনদুখি মানুষদের। তাদের দুঃখ তিনি সইতে পারতেন না। আর অন্যদিকে চালিয়ে যেতেন তার বিশাল কর্মযজ্ঞ। জড়িত ছিলেন প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে, ছিলেন নারী নির্যাতনের বিপক্ষে সোচ্চার। দিন নেই রাতনেই ছুটে যেতেন নিগৃহীত নারীদের উদ্ধারে। আর ছিলেন ভীষণভাবে সংস্কৃতিমনা। নিজ সন্তানদের, নাতিদের সুরসংগীতের সাথে তিনিই পরিচয় করান। ঘরের কাজেও তিনি সমানভাবে নিপুণ ছিলেন। নিজের হাতে উলের সুয়েটার, ব্যাগ, কার্পেট ইত্যাদি বানাতে পারতেন। অনেক সময় জরুরি কাজ না থাকলে লেগে যেতেন রকমারি খাবার জিনিস তৈরিতে। শুনেছি পরিচিত কারো বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান থাকলে ঠাম্মা নিজের হাতেই সন্দেশ বানিয়ে দিতেন। তবে এই কর্মচঞ্চল মানুষটি হঠাৎ করেই কেমন যেন নিস্তব্ধ হয়ে যান আমার বাবার মৃত্যুর পর। কবি নজরুলের মতোই নির্বাক হয়ে যান দুঃখে। আজো তার নাম শুনলে অনেকেই বলে বড় ভালো মানুষ ছিলেন। আমাদের ছত্রিশ অনাবিলের বাসাকে তার নামেই চিনে সকলে। তার গুণমহিমা লিখে শেষ করা যাবে না। এই ক্ষণজন্মা মহীয়সী নারী দিপালী চক্রবর্তী আজকের দিনে ঠিক ১৮ বছর আগে আমাদেরকে ছেড়ে বহুদূর চলে যান। যেখান থেকে ফেরার কোনো পথ নেই। আমি যা অল্পকিছু তার ¯পর্শ পেয়েছি তাতেই নিজেকে ধন্য মনে করি। এমন স্মরণীয় ব্যক্তি যে আমারই ঠাম্মা তা ভেবে গর্ববোধ করি। আমি যেন তার দেখানো পথে চলতে পারি -এই প্রার্থনা করি ঈশ্বরের কাছে।