আশিস রহমান ::
দোয়ারাবাজার উপজেলা সদর থেকে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত সড়কটি এখন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সড়ক দিয়ে উপজেলার লক্ষ্মীপুর, সুরমা ও বোগলা এই তিন ইউনিয়নের ৮০টি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করে থাকে। উপজেলা সদর, জেলা সদর ও বিভাগীয় শহরের সাথে যোগাযোগের জন্য এই তিন ইউনিয়নের একমাত্র ভরসা এই সড়ক। এছাড়া বাংলাবাজার ইউনিয়নের আংশিক এলাকার মানুষও এই সড়কটি ব্যবহার করে থাকেন।
এলজিইডি’র আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি মেরামতের অভাবে এখন ভোক্তভোগীদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকায় পুরো সড়কটিই এখন চলাচল অনুপযোগী। সড়কের পার্শ্ববর্তী স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা সড়কটি দিয়ে এখন হেঁটে চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পুরো সড়কজুড়ে গর্ত-খানাখন্দ, কাদা আর জলাবদ্ধতা মাড়িয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পথচারী ও যাত্রীরা। প্রতিদিনই ঘটছে কমবেশি দুর্ঘটনা। পথচারী ও যাত্রীদের কাছে ভোগান্তির নাম এই দোয়ারাবাজার-লক্ষীপুর সড়ক। অসুস্থ চিকিৎসা সেবা গ্রহিতা, গর্ভবতী মহিলা ও বয়োবৃদ্ধরা এই সড়কের নাম শুনলেই ভয় পান।
সরেজমিনে দোয়ারাবাজার-লক্ষ্মীপুর সড়কটিতে ঘুরে দেখা গেছে পুরো সড়কটিই একটি বিশাল মরণ ফাঁদ! সড়কের যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই বেহাল অবস্থা চোখে পড়ে। সড়কের উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের অংশে শরীফপুর, শান্তিপুর, গিরিশনগর, মহব্বতপুর, রাবার ড্যাম এলাকা পর্যন্ত পুরোটাই গর্ত-খানাখন্দ ও কাদায় ভরা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় বের হয়ে আছে রড, ইট-পাথর ও সিমেন্টের স্তূপ। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। সড়কের অনেক অংশে ছোট-বড় ভাঙ্গা গর্ত সৃষ্টি হয়ে নোংরা পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কাদামাটি ও পানির কারণে পথচারীরা ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
একই সড়কের লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের অংশে নোয়াপাড়া, লক্ষ্মীপুর, লিয়াকতগঞ্জ-পশ্চিম বাংলাবাজার এলাকা পর্যন্ত পুরো সড়ক কাদায় ভরা। অনেক অংশে প্রায় হাঁটু পর্যন্ত কাদামাটি। বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় কাদা মাড়িয়ে পথচারী ও যাত্রীদের ঝুুঁকি নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। শুধু পথচারী ও যাত্রীরাই নয়, ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রতিনিয়তই নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন চালকরা। খানাখন্দ, কাদা ও জলাবদ্ধতায় চাকা আটকে যাওয়ায় পথিমধ্যে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে অনেক সিএনজি চালককে গাড়ি ঠেলা-ধাক্কা দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে।
দোয়ারাবাজার সরকারি ডিগ্রি কলেজের ছাত্র মামুন মিয়া বলেন, ভঙ্গুর রাস্তার কারণে আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। কলেজে যেতে অতিরিক্ত গাড়িভাড়া ও সময় ব্যয় করতে হচ্ছে।
সিএনজি চালক আব্দুল ওদুদ এবং স্বপন মিয়া বলেন, পেটের দায়ে এই রাস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাই। পুরো রাস্তা বেহাল, একটু জায়গা পর পর গাড়ির চাকা কাদায় দেবে যায়। সারাদিন গাড়ি চালিয়ে যে কয়েক টাকা পাই তার সিংহভাগই ব্যয় হয়ে যায় গাড়ির মেরামত কাজে। আমাদের দুর্দশা দেখার কেউ নেই।
লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ ওমর গণি বলেন, বছরের পর বছর ধরে আমরা উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে কতোটা যে কষ্ট ভোগ করছি তা বলে বুঝাতে পারব না। দুর্ভোগ আমাদের পিছু ছাড়েনা।
সুরমা ইউনিয়নের টেংরাটিলা গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম বীরপ্রতীক বলেন, রাস্তাটির অবস্থা খুবই নাজুক। আমাদেরকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। রাস্তাটি যাতে দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয় সে ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
একই ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের বাসিন্দা জাতীয় কৃষক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আব্দুল আওয়াল বলেন, বৃহত্তর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন একটি দুর্গম এলাকা। বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে এখানে নিম্নমানের রাস্তা টেকানো সম্ভব না। দুর্গম এলাকার যোগাযোগের উন্নয়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এই রাস্তাটি দ্রুত পুনর্নির্মাণ করা হোক।
লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল হক বলেন, এই রাস্তা দিয়ে আমি নিজেও চলাচল করি। পুরো রাস্তাটি চলাচলের অনুপোযোগী। এই রাস্তা দিয়ে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে গিয়ে আমার বৃহত্তর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের মানুষ যে কতোটা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন তা আমি বুঝি। এলজিইডি অফিসে বার বার যোগাযোগ করেও কোনো দৃশ্যমান প্রতিকার পাচ্ছি না। এই রাস্তা মেরামতের বিষয়ে আমাদের সুনামগঞ্জ-৫ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক মহোদয় ডিও লেটার দিয়েছেন। এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে বার বার তাগিদ দিচ্ছেন কিন্তু এখনোব্দি রাস্তাটি মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়নি এলজিইডি। জনস্বার্থে রাস্তাটি দ্রুত মেরামতের দাবি জানাই।
সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার মামুনুর রশীদ বলেন, এলজিইডির প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করেছিলাম। তিনি আমাকে জানিয়েছেন রাস্তার ক্ষতিগ্রস্ত অংশের জরিপ করে ঢাকায় পাঠিয়েছেন কিন্তু এখনো প্রকল্প পাস হয়নি। এই প্রকল্প কখন পাস হবে এর কোনো নিশ্চয়তাও নেই। অথচ বছরের পর বছর ধরে রাস্তাটি বেহাল। মেরামতের নামে এতোদিন যাবৎ এলজিইডি নাটক করে আসছে। চার ইউনিয়নের মানুষ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। আপাতত সাময়িক চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তার গর্ত ও খানাখন্দ ভরাট করার জন্য উপজেলা পরিষদ চাইলে বরাদ্দ দিতে পারে। আমি উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করব। রাস্তার মেরামত কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য প্রয়োজনে ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে আন্দোলনে নামব।
দোয়ারাবাজার উপজেলার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী দেবতোষ পাল বলেন, দোয়ারাবাজার থেকে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত প্রায় ২৬ কিলোমিটার সড়ক এলজিইডির আওতাভুক্ত। এই সড়কের ভাঙ্গা অংশের প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটারের একটা ¯ি¬প ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। আশাবাদী খুব শিঘ্রই প্রকল্পটি পাস হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে দেরি হচ্ছে। তবে প্রকল্পটি পাস হলে রাস্তার মেরামত কাজ শুরু হয়ে যাবে।