স্টাফ রিপোর্টার ::
তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সুনামগঞ্জের জনজীবন। গত রোববার ও সোমবার সিলেট বিভাগের তাপমাত্রা গত দেড় দশকের রেকড ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রোববার (২৩ মে) সিলেটে তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবারও (২৪ মে) দুপুর ১টার দিকে তাপমাত্রা ৩৮.৩ ডিগ্রি রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট অফিস। বিশেষ করে মে মাসে বৃষ্টি না থাকা এবং সাগরে নিম্নচাপের কারণে গরমের তীব্রতা বেশি বেড়েছে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গত ২০ বছরের মধ্যে মে মাসে সিলেটে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় রোববার ও সোমবারে। ২০০১ সালে মে মাসে ৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা অনুভূত হয়। এরপর মে মাসে ৩৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা কখনো অনুভূত হয়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, দুইদিন ধরে সাগরে নিম্নচাপের অত্যাধিক তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে। তাছাড়া মে মাসে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। তিনি বলেন, শুধু মে মাসেই ৫৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা। সেখানে এ যাবত বিচ্ছিন্নভাবে মাত্র ২৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। শুধু মে মাস নয়, গত ৬ মাসে সিলেটে ৬০ শতাংশ বৃষ্টিপাত হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া এবার উজানেও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সিলেটে হাওরাঞ্চলে মানুষ ঠিকমতো ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন। তবে, বিচ্ছিন্ন বৃষ্টিপাতের কারণে ফসল ভালো হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বরে মাত্র শূন্য দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ডিসেম্বরে বৃষ্টি হয়নি। এবারের জানুয়ারিতে মাত্র একদিন বৃষ্টি হয় ৯ মিলিমিটার। ফেব্রুয়ারি ছিল বৃষ্টিহীন। মার্চে ১২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। অথচ বৃষ্টি হওয়ার কথা ১৫৫ মিলিমিটার। এপ্রিলে ৩৭৬ মিলিমিটারের স্থলে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৪২ মিলিমিটার। মে মাসে ৫৭০ মিলিমিটারের স্থলে ২৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। অথচ গত বছরের মে মাসেই ৬৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল বলেও নিশ্চিত করেন আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী।
তার মতে, দু’দিন ধরে গরমের তীব্রতা বেড়েছে সাগরে নিম্নচাপের কারণে। সাইক্লোনস্থলের বর্তমান প্রেসার ৯৬৮ মিলিবার। বায়ুর চাপ সে সময় সিলেটে ৯৯৯ মিলিবার। ভূমি থেকে ৩৩ ফুট উঁচুতে উঠলে বাতাসের আদ্রতা ১ মিলিবার কম মিলবে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এই গরমের উৎপত্তি। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সব জায়গার জলীয়বা®প শোষণ করে নিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রাও বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, সাইক্লোনের ঘূর্ণয়নের কারণে বায়ুমণ্ডলের প্রেসার কমে যায়। সাইক্লোন আদ্রতা শুষে নেয়। আকাশে মেঘের ঘনঘটা থাকলেও সেগুলোকে ঘূর্ণিঝড় শুষে নেয়। ফলে গরমের তীব্রতা বেড়েছে। তাছাড়া প্রি-মৌসুমে এবার প্রায় ৬০ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল অঞ্চল ভারতের চেরাপুঞ্জি। অন্য বছর এ সময়ে ওই অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত হলেও এবার সেখানেও বৃষ্টিপাত না হওয়ার রেকর্ড ভাঙছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, সিলেট অঞ্চলে বেশি তাপদাহ হয়ে থাকে এপ্রিল ও আগস্টে। এবার পুরো ব্যতিক্রম। বৃষ্টির বদলে মে মাসে তীব্র গরমে পুড়ছে জনজীবন ও প্রকৃতি। অবশ্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতির বাংলাদেশ থেকে সরে ভারতের দিকে যাচ্ছে। ফলে ২৪ মে রাতে এবং ২৯ ও ৩০ মে নাগাদ ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।