বিশেষ প্রতিনিধি ::
পানির দেশ খ্যাত হাওরে এবার পানির দেখা নেই। সাধারণত বৈশাখের শেষ সপ্তাহেই জলাভূমি হাওর-জলে টইটম্বুর হয়ে ওঠে। নতুন পানি পেয়ে ছোটাছুটি করে মাছ। বাজারে হাওরের নতুন সুস্বাদু মাছের উপস্থিতিও বাড়ে। কিন্তু এবার পানি না আসায় হাওরের বাজারগুলোতে দেশি মাছের আকাল লক্ষ করা গেছে। তাই বাজারে মাছের দামও প্রচুর।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ১৩৭টি হাওর রয়েছে। প্রায় ১৫ দিন আগে হাওরের ধান কাটা শেষ হয়েছে। ধান কাটার পরই হাওরে পানি প্রবেশ করাতে বন্ধ ৫২টি স্লুইস গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। এরপরও হাওরে পানি নেই। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন কাক্সিক্ষত পরিমাণে বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় হাওরে পানি প্রবেশ করেনি। তবে সম্প্রতি মাঝে-মধ্যে অল্প বৃষ্টি হলেও হাওরের তলদেশ এখনো পানিতে ভরেনি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ধানকাটা শেষে হাওরে পানি প্রবেশ করাতে ও মৎস্যজীবীদের কথা বিবেচনা করে ইতোমধ্যে সদর উপজেলায় ১টি, তাহিরপুর উপজেলায় ৯টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৪টি, জগন্নাথপুরে ৫টি বিশ্বম্ভরপুরে ৪টি, দিরাইয়ে ১২টি, শাল্লায় ৫টি, ধর্মপাশায় ৫টি এবং জামালগঞ্জে ৭টি স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়েছে। পানির চাপ বাড়লে ফসলরক্ষা বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টও কেটে দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। কিন্তু এখনো পানি নেই কোনো হাওরে।
সরেজমিন শুক্রবার দেখার হাওরের গছিলারা, শিয়ালমারা, হাপেরদাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় হাওরে পানি নেই। বোরো ধান কাটা ন্যাড়াময় বিস্তৃত ধানক্ষেত পড়ে আছে। কিন্তু পানি নেই। একইদিন সদর উপজেলার ডাকুয়ার হাওরে গিয়েও একই চিত্র দেখা যায়। দেখা গেছে হাওরের তলদেশেও পানি নেই।
ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমানুর রাজা চৌধুরী বলেন, অন্যান্য বছর জৈষ্ঠমাসের প্রথম থেকেই আমাদের হাওর এলাকায় নৌকা চলে। বাজারে দেশি মাছ মিলে। কিন্তু এবছর নৌকাও চলছে না। বাজারেও দেশি মাছের আকাল। তিনি বলেন, এখন হাওর খাল বিল পানিতে টইটম্বুর থাকার কথা ছিল।
দেখার হাওরের ইসলামপুর গ্রামের কৃষক কাজল মিয়া বলেন, আমাদের হাওরে অন্যান্য বছর এই সময়ে পানি থাকে। কিন্তু এবার হাওরে পানি নেই। আমাদের গরু বাছুর এখন হাওরের কাটা ধানের নাড়া খাচ্ছে। হাওরে পানি না আসায় আমাদের মাছের আকাল। তবে গবাদিপশু ভালো খাদ্য পাচ্ছে।
জামালগঞ্জের আলীপুর গ্রামের কৃষক আলা উদ্দিন বলেন, অন্যান্য বছর এমন সময়ে হাওরে অনেক পানি থাকে। আমরা বাজার থেকে সস্তায় দেশি মাছ কিনে খেতে পারি। কিন্তু এ বছর হাওরে পানি না থাকায় দেশি মাছের উপস্থিতি কম।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, হাওরের ধান প্রায় ১৫ দিন আগে কাটা শেষ হয়েছে। ধান কাটার পরই আমরা হাওরে পানি প্রবেশ করাতে ৫১টি স্লুইসগেট খুলে দিয়েছি। পানির চাপ বাড়লে ফসলরক্ষা বাঁধও কেটে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমাদের মেঘালয় সীমান্তে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং আমাদের অঞ্চলেও কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় হাওরে পানি প্রবেশ করছে না।