আশিস রহমান ::
শুকনো মৌসুম কিংবা বর্ষা সড়কজুড়ে বিভিন্ন অংশে সারা বছরই থাকে কাদা। কাচা এই সড়কটিতে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই আরও ভয়াবহ অবস্থা। এতে করে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ও সুরমা ইউনিয়নের নূরপুর থেকে আলীপুর হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত প্রধানতম এই সড়কটির বেহাল দশা যেন দেখার কেউ নেই! অথচ এই সড়কটি লক্ষ্মীপুর ও সুরমা এই দুই ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ জেলা সদরে যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করে থাকেন।
সুরমা ইউনিয়নের হাওরপাড়ে চাষকৃত মাছ ও সবজি জেলাশহরে বাজারজাত করতেও এই সড়কটির ওপর নির্ভর করতে হয়। সড়কের পার্শ্ববর্তী সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নূরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং আলীপুর মুহিবুর রহমান মানিক সোনালী নূর উচ্চ বিদ্যালয়, রসরাই মাদ্রাসা, লক্ষ্মীপুরের ক্যাপ্টেন হেলাল খসরু হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা এই সড়ক দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করে থাকে। বর্তমানে বৃষ্টির দরুণ কাদামাটি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় নূরপুর-লক্ষ্মীপুর সড়কের বিভিন্ন অংশ স¤পূর্ণ চলাচল অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। বিকল্প রাস্তা না থাকায় এদিকে কাদা মাড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। স্থানীয়রা বাসিন্দারা জানান, জনদুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কটি পাকাকরণের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। কিন্তু দাবিটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কজুড়ে প্রায় হাঁটু সমান কাদা থাকায় সাধারণ মানুষ চলাচল করতে পারছেন না। সড়কের আশপাশের ঘরবাড়ির মানুষ অনেকটাই ঘরবন্দী জীবন যাপন করছেন। বিকল্প রাস্তা না থাকায় এখান দিয়ে হাওরে গবাদিপশু বিচরণ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
নূরপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রউফ বলেন, এমনিতেই এখানে সারাবছর কমবেশি কাদা থাকে কিন্তু বর্ষা মৌসুমে এই রাস্তাটি স¤পূর্ণ চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এই সড়ক দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা সদরে যাতায়াত করা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়। সড়কটি পাকারাস্তায় উন্নীতকরণ করার দাবি জানাই।
মুহিবুর রহমান মানিক সোনালী নূর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করতে পারছেনা শুধু এই রাস্তার কারণে। শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে এই রাস্তাটি দ্রুত পাকাকরণে দাবি জানাই।
আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা মৎসচাষী আব্দুর রহিম বলেন, শুধু এই রাস্তার কারণে এখানকার উৎপাদিত মাছ ও সবজি জেলা শহরে বাজারজাত করতে বাড়তি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। এছাড়া অধিক সময়ও ব্যয় হচ্ছে। এই রাস্তা পাকা করা হলে হাওরপাড়ের কৃষকরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে এবং মৎস্যচাষ ও ব্যবসার প্রসার ঘটবে।
সুরমা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা এখলাস ফরাজি বলেন, এই সড়কের বিষয়ে এমপি মহোদয়সহ ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের নিকট লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছিলাম। এবার পুরো ১১ কিলোমিটার সড়কজুড়ে মাটি ফেলা হয়েছে। সড়কের নূরপুর-আলীপুর অংশের পেটফোলা নামক স্থানে স্লুইচ গেইট নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে সার্ভে হয়েছে। আশাবাদী খুব শিঘ্রই সড়কটি পাকাকরণ করা হবে। এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ ৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল হক বলেন, হরিণাপাটি থেকে নূরপুর হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত সড়কটি পাউবোর ফোল্ডার-২ এর অন্তর্ভুক্ত। এটি একদিকে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ অন্যদিকে সড়কের কাজ দিচ্ছে। মাননীয় এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবার এই ফসলরক্ষা বাঁধ কাম সড়কের উন্নয়নকাজ হয়েছে। সড়কটিকে এলজিইডির অন্তর্ভুক্ত করে পাকাকরণের মাধ্যমে স্থায়ী সড়কে রূপান্তর করতে পারলে দুই ইউনিয়নের মানুষ উপকৃত হবে। এমপি মহোদয়ের সাথে এবিষয়ে আমি আলাপ করব।
দোয়ারাবাজার উপজেলা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী দেবতোষ পাল বলেন, নূরপুর-লক্ষ্মীপুর সড়কের নূরপুর থেকে আলীপুর পর্যন্ত এবার এলজিইডির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আলীপুরের খাসিয়ামারা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়ে গেলে সেতুর সাথে পর্যায়ক্রমে এই সড়কটিকেও পাকা করা হবে।