রাষ্ট্র পরিচালনা করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুশীলনের বিকল্প নেই। ১৯৭৫’র কলঙ্কজনক অধ্যায়ের পর সুযোগে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিশেষ করে রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা বাণিজ্যে সুবিধাবাদী সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। এই সিন্ডিকেট গোষ্ঠীর বেপরোয়া আচরণে বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে এলোমেলো করে দেয়। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন সার্বজনীন মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র এবং সমাজকে প্রতিষ্ঠিত করতে। এই মূল্যবোধের মূল ভিত্তি হলো ওই সমাজ বা রাষ্ট্রে বসবাসকৃত মানুষেরা জীবনাচরণের আনুষঙ্গিক উপকরণ। যা মানুষকে সংঘবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জোগায়।
যুগ যুগ ধরে ধর্মীয় সাহিত্য,সংগীত ললিতকলা, ক্রীড়ার সার্বজনীন প্রভাবের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের জ্ঞান, আচার-আচরণে বিশ্বাস রীতিনীতি নীতিবোধ বিকশিত হয়েছে। এরই আঙ্গিকে গড়ে ওঠেছে আমাদের সামাজিক সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ১৯৭১ সালে স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর মূল উদ্দেশ্য ছিল সর্বক্ষেত্রে সার্বজনীনতা রক্ষায় অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধকে বেশি বেশি প্রাধান্য দেয়া। তিনি তাই করেছিলেন। ফলে সকল ধর্ম, বর্ণ, গোত্র শ্রেণি ব্যবধানের ঊর্ধ্বে থেকে সর্বসাধারণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুপ্রবেশ নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবার-পরিজনকে হত্যার পর নীতি-আদর্শহীন ক্ষমতা দখলদার শাসকগোষ্ঠী আবারও ক্ষমতা স্থায়িত্বের কৌশল হিসেবে রাজনীতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুশাসনের ধর্মকে নিয়ে আসে। ক্ষমতা স্থায়িত্বের সকল ক্ষেত্রে সুবিধাগোষ্ঠী সৃষ্টি করতে থাকে। রাষ্ট্রীয় নীতি নিষ্ক্রিয় করে ধর্ম ব্যবসায়ীদেরকে সুসংগঠিত করতে থাকে। ওই সময় জিম্মি হয়ে পড়েন সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সার্বজনীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্রমান্বয়ে সর্বক্ষেত্রে সুবাধাবাদী গ্রুপ বা শ্রেণি স্বার্থ চরিতার্থ করার অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জনস্বার্থবিরোধী কার্যকলাপের মাধ্যমে পরিশেষে সরকার জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করায়।
বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার আজ প্রতিটি স্তরে ওই গোষ্ঠীর ঘাত-প্রতিঘাত প্রতিরোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। পুঁজিপতিদের আগ্রাসন প্রতিরোধে বঙ্গবন্ধু সবসময়ই সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু সুকৌশলে ধর্মীয় উগ্র মৌলবাদীরা বাংলাদেশকে জঙ্গিদের একটি উর্বর ভূমি বানানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে নব্য বণিক শ্রেণি ব্যাংক ঋণ নিয়ে বিদেশে অর্থ পাচারসহ সুকৌশলে সার্বিক উৎপাদন ব্যবস্থা নিজেদের কুক্ষিগত করে নিতে চাচ্ছে। এ সবের ফলে দেশের সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। বর্তমান সরকারকে বিভিন্নভাবে অস্থির করে তুলতে, উন্নয়নের গতিকে রোধ করতে এবং প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করছে। নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কঠোর হস্তে দমন করতেই হবে। সমাজ, রাষ্ট্র এবং দেশের জনগণকে রক্ষায় বর্তমান সরকার যদি এক পন্থা গ্রহণ করতে হয় তা-ই করতে হবে। আমরা বঙ্গবন্ধু দর্শন অনুশীলনের বাংলাদেশ দেখতে চাই।