1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০২:৩৯ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বোরোর বাম্পার ফলন পেয়ে খুশি : ঈদ বাজারে ব্যস্ত হাওরের কৃষক

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১১ মে, ২০২১

বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জ জেলাবাসী হাওরের একফসলি বোরো ফসলের উপর নির্ভরশীল। বোরো ফসলে বছরের খোরাকিসহ উদ্বৃত ধান বিক্রি করে যাপিত জীবনের যাবতীয় খরচ নির্বাহ করেন কৃষক। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানি হলে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে ওঠে। তখন ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবও ম্লান দেখায় হাওরে। তবে এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। মওসুম ভালো হওয়ায় করোনার চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই কষ্টের ফসলে গোলা ভরেছেন কৃষক। এখন ধানের দামও পাচ্ছেন ভালো। তাই এই করোনাকালেও ঈদ বাজারে জমজমাট কেনাবেচা লক্ষ করা গেছে। কৃষকরা জানিয়েছেন ধানের দাম ভালো পাওয়ায় এবং শতভাগ ফসল গোলায় তোলতে পারায় তারা খুশি। এবারের ঈদ বাজারে তাই খুশি মনে সওদা করছেন কৃষকরা। তবে বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতির কারণে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরের সত্তরোর্ধ কৃষক আশরাফ আলী। এ বছর চার একর জমিতে বোরো চাষ করেছিলেন। ১৫ দিন আগেই তার জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। ধান শুকিয়ে গোলায় তুলেছেন। গবাদিপশুর খড়ও সংগ্রহ শেষে ‘খড়ের লাছি’ করে রেখেছেন। পুরো ফসল গোলায় তুলতে পেরে খুশি তিনি। এখন স্থানীয় বাজারে তিন ছেলে ও স্ত্রীর জন্য নতুন জামা কাপড় কিনেছেন। ধানের ভালো দাম পেয়ে বেজায় খুশি তিনি। ধান বিক্রির সেই টাকায় এবার তাই ধুমধাম ঈদের বাজার করছেন।
জামালগঞ্জের লম্বাবাক গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন। এ বছর প্রায় ৭শ মণ ধান পেয়েছেন তিনি। এখন সংসারের প্রয়োজনসহ ঈদের কেনা কাটা করতে ধান বিক্রি করছেন ৯০০-৯৫০ টাকা মণ দরে। তিনি বলেন, ‘এবারের মতো বছর গত ১৫-২০ বছরে দেখেনি আমরা। কোন ধানও নষ্ট হয়নি। দামও ভালো পাচ্ছি। বাজারে যে দাম তাতে মনে হচ্ছে কোন কৃষক এবার সরকারি গুদামে ধান দিবেনা। সরকারি গুদাম খালি থাকবে’।
একই গ্রামের কৃষক আবুল কালাম ধান পেয়েছেন ৫০০ মণের অধিক। কাক্সিক্ষত ফলন পেয়ে খুব খুশি তিনি। এখন ধান বিক্রি করে ঈদের কেনা কাটা করছেন পরিবারের সবার জন্য। তিনি বলেন, ‘করোনা আমাদের কাবু করতে পারেনি। করোনা উপেক্ষা করে ধান কেটে গোলাজাত করা শেষ করেছি। এখন ভালো দামে ধান বিক্রি করে ঈদের বাজার করছি। আমার মতো হাওরের সব কৃষক এখন খুুশি। এই খুশির প্রভাব পড়েছে ঈদের বাজারে।’
জামালগঞ্জের আকবর হোসেন বলেন, ‘হাওরের সকল কৃষক এবার বাম্পার বোরো ধান পেয়ে খুশি। কৃষক কতটা খুশি তার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারে। প্রতিটি বাজারেই ঈদের জমজমাট বিকিকিনি হচ্ছে। তিনি বলেন, হাওরের বোরো ফসল ভালো হলে কৃষক খুশি। সেই খুশির ঝিলিক থাকে পুরো বছর। সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসবও এবার আনন্দময় হবে’।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৩৭টি হাওরে এ বছর বোরো আবাদ হয়েছে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার ৬৬৫ হেক্টর। হাওরের বাইরে আরও ৫৭ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। সব মিলিয়ে এই মওসুমে বোরো আবাদ হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৩২৩ হেক্টর। গত ৭ এপ্রিল হাওরের শতভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। সরকারি হিসেবে এ বছর গতবারের চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে ৩৭ মে.টন (চাল)। গত মওসুমে উৎপাদন হয়েছিল ৮ লক্ষ ৬৩ হাজার ৯৯৩ মে.টন, আর এ বছর উৎপাদন হয়েছে ৯ লক্ষ ১ হাজার ১০ টন। যার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। সূত্র মতে সুনামগঞ্জ জেলায় বছরে বোরো-আউশ-আমন মিলিয়ে সর্বমোট ১১ লক্ষ ৫১ হাজার ৮৬৬ মে.টন খাদ্য উৎপাদন হয়। স্থানীয় প্রায় ২৯ লক্ষ মানুষের বাৎসরিক খাদ্য চাহিদা ৪ লক্ষ ৭৯ হাজার ৫০০ মে.টন। এবার বোরো থেকেই প্রায় ৪ লক্ষ ২১ হাজার ৪৯৫ মে.টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকবে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. ফরিদুল হাসান বলেন, চাষাবাদের সময় কৃষিতে প্রণোদনা প্রদান এবং ধান কাটার সময় ভর্তুকিতে যন্ত্র পেয়েছেন কৃষক। এতে চাষাবাদ ও ধানকাটা সহজ হয়েছে। যার ফলে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। হাওরে শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, এবারের বোরো মওসুমের ধানেই জেলার খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে আরো প্রায় চার লাখেরও বেশি মে.টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। তিনি বলেন, ‘সুনামগঞ্জের হাট বাজারগুলোতে জমজমাট বিকিকিনি হওয়ার একমাত্র করাণ বোরোর বাম্পার ফলন ও কাক্সিক্ষত দাম।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com