1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

মুক্তমত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রসারিত হোক

  • আপডেট সময় রবিবার, ৯ মে, ২০২১

গণমাধ্যমকর্মীরা অনেক হিসেব-নিকেশ করেই বর্তমানকালে সংবাদ প্রকাশ করে থাকেন। তার অন্যতম কারণ হিসেবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে দেখা হচ্ছে। দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এ আইনে মামলার শিকার অধিকাংশ ব্যক্তি জামিন পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। রিমান্ডে নিয়ে কাউকে কাউকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করারও অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে আইনটি পর্যালোচনা করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। তাদের মতে, প্রয়োজনে আইনটি সংশোধন করা যেতে পারে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হয়ে ৩০০ দিন কারাবন্দি থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর। একই মামলার আরেক আসামি লেখক মুশতাক আহমেদ কারাগারে মারা যান। তার মৃত্যুর পর আইনটি বাতিলে জোরালো আন্দোলন-প্রতিবাদ চলে। বলা হচ্ছে, জামিন পেলে হয়তো মুশতাক মারা যেতেন না।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ নম্বর ধারা নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি করা হয়। ২০০৬ সালে
আইসিটি আইন প্রথম প্রণয়ন করা হয়। ২০১৩ সালে এতে ৫৭ ধারা যুক্ত করা হয়। মানহানি, কটূক্তি, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করাসহ নানা অভিযোগে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে লেখালেখির বিরুদ্ধে এ ধারায় মামলার সংখ্যা বাড়তে থাকে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মত, ৫৭ ধারা বাতিলে আন্দোলন করায় সরকার নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি আরও কঠোর করে। আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার নির্যাস নতুন আইনের বিভিন্ন ধারায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তথ্য ও মতপ্রকাশে আরও কিছু কড়া বিষয় নতুন আইনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাশের পর ২ বছর ৪ মাসের মতো পেরিয়েছে। গত বছর হওয়া ১৯৭টি মামলা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ‘কটূক্তি’, ‘মানহানিকর বক্তব্য’, ‘বিকৃত ছবি শেয়ার’, ‘গুজব ছড়ানো’ এবং ‘সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ জাতীয় অভিযোগে বেশিরভাগ মামলা হয়েছে। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে মামলার বাদী পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। আইনটি পর্যালোচনা করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। তাদের মতে, প্রয়োজনে আইনটি সংশোধন করা যেতে পারে।
এদিকে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বারবারই উদ্বেগের কথা জানিয়েছে স¤পাদক পরিষদ। বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে একটি সমীক্ষার ফল প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ আইনে ৭৮৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সমীক্ষায় বলা হয়, আইনটিতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ১৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ মামলা হয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ, শিক্ষার্থীদের ২ দশমিক ৯১ শতাংশ, শিক্ষক ২ দশমিক ৯১ শতাংশ, বেসরকারি চাকরিজীবী ২ দশমিক ১৮ শতাংশ, ব্যবসায়ী ২ দশমিক ১৮ শতাংশ, সরকারি চাকরিজীবী ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও আইনজীবী শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ। এ আইনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলার পরিমাণ ২৬ দশমিক ২৮ শতাংশ।
অপরদিকে, গণমাধ্যমকর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ২০২১ সালে এক তথ্য প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে মুক্তমত প্রকাশে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২তম স্থানে। শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে, আফ্রিকার দেশ এরিক্রিয়া রয়েছে একেবারে নিম্নে। ২০২০ সালে সূচকে ১৫১তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে ছিলো ১৫০তম। আরএসএফের দৃষ্টিতে পাকিস্তান ১৪৫তম, ভারত ১৪২তম, মায়ানমার ১৪০তম, শ্রীলঙ্কা ১২৭তম, আফগানিস্তান ১২২তম, নেপাল ১০৬তম, মালদ্বীপ ৭৯তম ও ভুটান ৬৫তম অবস্থানে রয়েছে।
কোন দেশের গণমাধ্যম কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করে এর ভিত্তিতেই ২০০২ সাল থেকে এই সূচক তৈরি করে আসছে আরএসএফ। আরএসএফ-এর তথ্য মতে বাংলাদেশে ২০১৮ সালে নির্বাচিত দলটি গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে তেমন নমনীয়তা ভাব দেখায়নি। সাংবাদিকরা দুর্ণীতি কিংবা স্থানীয় অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে কাজ করতে গিয়ে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হন। এমন কি নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা তাদের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতেও সাহস পাচ্ছেন না। যা রীতিমতো শঙ্কার বিষয়।
আইনের যথাযথ প্রয়োগ যেমন আছে, তেমনি আছে অপপ্রয়োগ। আর তাই প্রয়োজনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটির প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হোক। যাতে করে মুক্তমত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রসারিত হয়। এ ব্যাপারে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com