হাসান বশির ::
বিশ্বম্ভরপুরে যাদুকাটার বাম তীরে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই বাঁধ নির্মাণ হলে মুছে যাবে উপজেলার বাদাঘাট দক্ষিণ ইউনিয়নের নদী পাড়ের বসতি এবং ৫ হাওরের বোরো চাষীর কপালের ভাঁজ। তারা চোখে মুখে এখন রঙিন স্বপ্ন দেখছেন। কৃষির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে পুনরায় সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে চান তারা। প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে দু’টি প্রকল্পের মাধ্যমে মিয়ারচর থেকে মিছাখালী রাবারড্যাম পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ হবে। বুধবার বাঁধ নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সবিবুর রহমান, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সফর উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাদি উর রহিম জাদিদ, বাদাঘাট দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান এরশাদ আহমদ হৃদয়। এসময় কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির আঘাতে বড়বন, আমড়িয়া, বরখলা, শাহাপুর মডর বিল নামক হাওরের ৭শ হেক্টর জমির বোরো ফসল ক্ষতির সম্মুখীন হতো। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের সাথে বালি এসে এ জমিগুলো চাষের অযোগ্য হয়ে যেতো। ঢলের আঘাতে ক্রমে ক্রমে অনেক বাড়ি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে নতুন করে নদীর পাড়ে বাঁধ দেওয়ায় এমন ক্ষতির শঙ্কা আর নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাদি উর রহিম জাদিদ জানান, এ বছর উপজেলা প্রশসনের পক্ষ থেকে বাঁধের যে তালিকা করা হয়েছিল এ বাঁধ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহোদয় এ বাঁধের বিষয়টি নজরে আনেন, যে এখানে ৪টি ভাঙ্গা রয়েছে। এরপর বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মহোদয়কে অবগত করি। পরে প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যেই ম্যান্টেন্যান্সের
কাজ দেখিয়ে এ বরাদ্দ হয়। এ ভাঙ্গা ৪টির কারণে ফসলের ক্ষতির যে শঙ্কা ছিল সেটি আর নেই। দ্রুততম সময়ে বাঁধের বরাদ্দের জন্য সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য, পানি সম্পদ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সফর উদ্দিন জানান, ৮শ থেকে ৯শ হেক্টর জমির ধান নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। কারণ যাদুকাটা নদীর উপর নির্মিত মিছাখালি রাবারড্যাম থেকে সত্রিস মিয়ারচর পর্যন্ত এলাকার ৫টি ছোট হাওর রয়েছে। হঠাৎ যাদুকাটা নদীর পাহাড়ি ঢলে ফসলের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সকলের সম্পৃক্ততায় বিশেষ করে পানি সম্পদমন্ত্রী মহোদয়ের আন্তরিকতায় বাঁধটি তৈরির সুযোগ পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান জানান, যাদুকাটান নদীর বাম তীরে ৪টি অংশ খোলা (ভাঙ্গা) ছিল। কিন্তু এখানে যেহেতু ৫টি ছোট হাওরে প্রায় ৭শ হেক্টর বোরো জমি রয়েছে, হাওরগুলোর ফসল রক্ষার জন্যে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহোদয়ের তাগাদায়, মাননীয় পানি সম্পদ উপমন্ত্রীর নির্দেশনায় ৩৫৭ মিটার খোলা অংশ জরুরি ভিত্তিতে আমরা বন্ধ করেছি। আশাবাদী এ জমির ধান কৃষকরা নির্বিঘ্নে কেটে নিতে পারবে। দেরিতে বাঁধের কাজ কেন এমন প্রশ্নে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার ৫২টি ছোট বড় হাওরের এলাকার বাইরে এটি অবস্থিত ফলে কাবিটা স্কিমের আওতায় নেওয়া হয়নি। ইতিপূর্বে জেলা কমিটিতে এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল কিন্তু হাওর এলাকার বাইরে থাকায় হয়নি। বর্তমানে নতুন করে ৪টি ভাঙ্গা তৈরি হওয়ায় সময়ের প্রয়োজনে এ বাঁধটি করে দেওয়া হচ্ছে।