1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২৮ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

স্মৃতির পাতায় হাসান শাহরিয়ার ভাই

  • আপডেট সময় সোমবার, ১২ এপ্রিল, ২০২১

:: লতিফুর রহমান রাজু ::
১৯৮৪ সালের শেষ দিকে সাংবাদিক জগতে আমার পদচারণা। তখনকার দিনে পত্রপত্রিকা এতো ছিল না। সাংবাদিকও হাতে গোনা ক’জন ছিল সীমান্ত জেলা সুনামগঞ্জে। আমি সিলেট থেকে প্রকাশিত প্রয়াত সাংবাদিক মহিউদ্দিন শীরু ভাইর স¤পাদিত সাপ্তাহিক গ্রাম সুরমা ও হবিগঞ্জ থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক দৃষ্টিকোণ পত্রিকার সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি। সংবাদের অনেক কিছুই বুঝিনা। পরিচয় হয় সাংবাদিক রণেন্দ্র তালুকদার পিংকুর সাথে। পরে তার মাধ্যমেই প্রয়াত সাংবাদিক রেজা ভাইর সাথে পরিচয়। রেজা ভাই বসতেন সুরমা মার্কেটের গলিতে নিজ প্রেস ও সাপ্তাহিক সুনামগঞ্জ পত্রিকার অফিসে। দৈনিক সংবাদেরও জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। এর পর ফখরু ভাই, ডিয়ার চন্দন দা, প্রয়াত শাহজাহান আফিন্দী ভাই, কালাম ভাই, ফোরকান ভাই, ননীদা, নিরঞ্জন দা, বন্ধু আতিকসহ অনেকের সাথে পরিচয়, ওঠাবসা। আড্ডা-আলোচনায় সিনিয়রদের কাছ থেকেই যা শিখার কিছুটা শিখেছি। তাদের উৎসাহেই আজ এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আস্তে আস্তে আরও অনেক অগ্রজ অনুজদের সাথে পরিচিত হই। কিছুদিন পর সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার স্বপ্ন দেখি, আবেদনও করি তখনকার সভাপতি গোলাম রব্বানী ও সাধারণ স¤পাদক কামরুজ্জামান চৌধুরী শাফি ভাই বরাবর। কিন্তু সদস্য করা হয় না কারণ তখনকার সময়ে প্রেসক্লাবের একটি ‘আইন’ ছিল যদি কার্যনির্বাহী কমিটির একজন সদস্য অমত করেন তাহলে সদস্য করা হবে না। এভাবেই আমি পিংকুদাসহ অনেকেই আটকা পরলাম। যাক কিছুদিন পর প্রেসক্লাবের সদস্য মনোনীত হই। খুব সম্ভবত ১৯৯০ সালে প্রেসক্লাবের নির্বাচন নিয়ে দুটি প্যানেল সৃষ্টি হয়। একটি প্যানেলে তখনকার দৈনিক বাংলার জেলা প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট আবু আলী সাজ্জাদ হোসাইন, দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিনিধি হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী, বিটিভি প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট আইনুল ইসলাম বাবলু, সাপ্তাহিক সুনামগঞ্জ সংবাদ স¤পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী, নির্বাহী স¤পাদক ইশতিয়াক শামীমসহ অন্যান্যরা।
আরেক প্যানেলে সাপ্তাহিক স্বজন পত্রিকার ব্যবস্থাপনা স¤পাদক সৈয়দ তাহের আলম মনসুর, সাপ্তাহিক স্বজন স¤পাদক অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান চৌধুরী, দৈনিক ইনকিলাব প্রতিনিধি ম ফ র ফোরকান, নিরঞ্জন তালুকদার, দৈনিক সংবাদ প্রতিনিধি রণেন্দ্র তালুকদার পিংকু, দৈনিক বাংলার বাণী প্রতিনিধি আমি লতিফুর রহমান রাজু, ডেইলি অবজারভার করেসপনডেনট শেরগুল আহমেদ, দৈনিক আজকের কাগজ প্রতিনিধি আবেদ মাহমুদ চৌধুরীসহ আরও অনেকেই। শেষ পর্যন্ত আর নির্বাচন হয়নি বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহে দীর্ঘদিন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। কোনভাবেই পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল না। ঐ সময় সুনামগঞ্জ আসেন ছুটি কাটাতে সাংবাদিক চৌধুরী হাসান শাহরিয়ার ভাই। আমরা শাহরিয়ার ভাইর হাছন নগরস্থ বাসায় দু’পক্ষের লোকজন আসা-যাওয়ার কারণেই শাহরিয়ার ভাইকে অনুরোধ করি সমস্যার সমাধান করতে। আমাদের সাথে শাহরিয়ার ভাইর অগ্রজ অ্যাডভোকেট হোসেন তওফিক চৌধুরী ভাইও জোর দেন। যাক বেশ কিছুদিন আলাপ-আলোচনার পর শাহরিয়ার ভাইর হস্তক্ষেপে দুই পক্ষের দু’জনকে বড় দুটি পদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আর বাকি পদ ভাগ করে দিয়ে দিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রেসক্লাব যাত্রা শুরু করে। সভাপতি শাফি ভাই, সাধারণ স¤পাদক মনসুর ভাই। অভিষেক অনুষ্ঠানও জাঁকজমকভাবেই হয়। ঐ সময় থেকেই কীর্তিমান সাংবাদিক সুনামগঞ্জের গর্বের ধন শাহরিয়ার ভাইর সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয়। জানতে পারি উনার গৌরবের কাহিনী।
তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন। সুনামগঞ্জ আসলেই আমরা সবাই বাসায় দল বেধে দেখা করতাম, আড্ডা দিতাম, আর তওফিক ভাই মজার মজার খাবার খাওয়াতেন। এভাবেই চলছিল। বেশ কিছুদিন পর আবার প্রেসক্লাবে শুরু হয় ঝামেলা। এক পর্যায়ে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। বিষয়টি একটু পরিষ্কার করে বলি। প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রে ছিল পরপর দুই বার কেউ সভাপতি প্রার্থী হতে পারবেন না। দুই বারের পর একবার গ্যাপ দিয়ে আবার প্রার্থী হওয়া যাবে। কিন্তু শাফি ভাই গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করেই পরপর দুই বার সভাপতি থাকার পরও আবার প্রার্থী হন। দেখা দেয় মহাসমস্যার। অনুরোধ করেও লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমাকে সভাপতি প্রার্থী করা হয়। তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আব্দু মিয়া। তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেও সমাধান না পেয়ে আমি সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে অভিযোগ দাখিল করলে আদালত নির্বাচন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে আবার শাহরিয়ার ভাইর হস্তক্ষেপে সমস্যার সমাধান হয়। ঐ সময় থেকেই শাহরিয়ার ভাই আমাকে মজা করে বলতেন ‘কইবা প্রেসিডেন্ট’। শাহরিয়ার ভাই মজা করে প্রেসিডেন্ট বলতে বলতে শেষ পর্যন্ত আমার ভাগ্যে প্রেসক্লাবের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব বর্তায়। এক সময় আমি প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করি এটিও অনেক ঝুট-ঝামেলার পর। তখনকার সময়ে বেশ বড় বড় অনুষ্ঠানাদি হয় শাহরিয়ার ভাইর সহযোগিতায়।
২০০৪ সালে সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের উদ্যোগে কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সিজেএ সভাপতি চৌধুরী হাসান শাহরিয়ারকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয় আমার সভাপতিত্বে। যা আমার জন্য একটি বিশেষ সম্মানের ও সৌভাগ্যের। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি’র সংসদ সদস্য তৎকালীন হুইপ অ্যাডভোকেট ফজলুল হক আছপিয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন সুনামগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান মমিনুল মউজদীন, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি মুকতাবিস উন নুর, জেলা প্রশাসক মো. জাফর সিদ্দিক। এছাড়াও শাহরিয়ার ভাইর সহযোগিতার কারণে ঢাকা থেকে অনেক সাংবাদিকদের সুনামগঞ্জ নিয়ে আসা হতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।
একবার সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সবাই সিদ্ধান্ত নিলেন তথ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রেসক্লাবে আনার। তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আর তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাঈদ। পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুনামগঞ্জের আরেক কিংবদন্তি আব্দুস সামাদ আজাদ। শাহরিয়ার ভাইর সাথে আলাপ করলে উনি বলেন, দেখো তোমরা তথ্যমন্ত্রী আনতে চাইলেও উনি সামাদ সাহেবকে না বলে আসবেন না। তোমরা এক কাজ করো সামাদ আজাদ সাহেবকে দাওয়াত করো সাথে তথ্যমন্ত্রী। বাকিটা যা করার আমি করব। যেমন কথা তেমন কাজ। সামাদ আজাদ সাহেব সাথে তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাঈদ এবং আরো একঝাঁক তারকা সাংবাদিক জাতীয় লেভেলের নিয়ে আসলেন শাহরিয়ার ভাই।
খুব সম্ভবত ১৯৯৫ সাল প্রেসক্লাবের সদস্যদের বায়না শাহরিয়ার ভাইর কাছে- আমরা পিআইবির ট্রেনিং দিতে চাই। শাহরিয়ার ভাই পিআইবির ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করলেন তাও পুরো টিম সুনামগঞ্জ এসে সপ্তাহব্যাপী ট্রেনিং করিয়েছেন। এ রকম আরো অনেক আনন্দ অনুষ্ঠান আয়োজন হয়েছিল শাহরিয়ার ভাইর আন্তরিক সহযোগিতায়। সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্যগণ শাহরিয়ার ভাইর ঋণ কোন শোধ করার নয়।
সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি শাহরিয়ার ভাইকে সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে এক সান্ধ্য আড্ডার আয়োজন করতে পেরে রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি হিসেবে খুবই পুলকিত অনুভব করেছি। রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্যগণও গর্বিত বোধ করেছেন। ঐ সময় তার সাথে সুনামগঞ্জ আসছিলেন ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক আশীষ চক্রবর্তী ও তার স্ত্রী। আমি অনেকটা জোর করেই নিয়ে আসি তাঁদের।
উপমহাদেশের খ্যাতিমান সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ার ১৯৪৪ সালের ২৫ এপ্রিল সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মকবুল হোসেন চৌধুরী অবিভক্ত আসাম-বাংলার বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, খেলাফত আন্দোলনের নেতা ও ভাষা সংগ্রামী ছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন পত্রিকা ‘যুগভেরী’র (১৯৩২) প্রথম সম্পাদক। সিলেটের ‘যুগবাণী’ (১৯২৫) ও কলকাতার দৈনিক ‘ছোলতান’ (১৯৩০) পত্রিকারও স¤পাদক ছিলেন। হাসান শাহরিয়ার ৬০-এর দশকে দৈনিক ইত্তেফাকে সাংবাদিকতা শুরু করেন। এরপর পাকিস্তানের করাচিতে পড়াশুনা ও দৈনিক ডন পত্রিকায় সিনিয়র রিপোর্টার হিসাবে কাজ করেন। একইসাথে সেখানে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিনিধি ছিলেন।
সত্তরের দশকের শুরুতে ঢাকায় এসে দৈনিক ইত্তেফাকে কাজ শুরু করেন। এই পত্রিকায় তিনি কূটনৈতিক রিপোর্টার, চিফ রিপোর্টারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৮ সালে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে অবসর নেন। ইত্তেফাকের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিখ্যাত সাময়িকী নিউজ উইক, দুবাইয়ের খালিজ টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ডিকান হেরাল্ড, এশিয়ান এজ, পাকিস্তানের মর্নিং নিউজসহ বহু বিখ্যাত সংবাদপত্রে কাজ করেছেন। দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। স¤পাদক ছিলেন ডেইলী সান ও ডেইলী পিপলসের। কানাডা ভিত্তিক কমনওয়েলথ জার্নালিস্টস এসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক প্রেসিডেন্ট-এমিরিটাস ছিলেন তিনি। ওকাবের (ওভারসিজ করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সভাপতিসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩-৯৪ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন। কীর্তিমান শাহরিয়ার ভাইকে মহান আল্লাহতালা বেহেশত নসিব করুন – এ কামনা করি।
[লেখক : সভাপতি, সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com