:: আলী সিদ্দিক ::
হাসান শাহরিয়ার। সাংবাদিকতার কিংবদন্তী পুরুষ। সুনামগঞ্জের গর্বিত সন্তান। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমানতালে অবদান রেখেছেন। তাঁর সাথে আমার প্রথম দেখা হয় হাছননগরস্থ তাঁর নিজ বাসায় ২০১২ সালের দিকে। তখন আমার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান উড়াল প্রকাশ মোটামুটি সুনামগঞ্জবাসীর কাছে পরিচিত। আমার প্রকাশনা থেকে তিনি সিরাজুল হক বাগদাদীর একটি গানের বই প্রকাশ করতে চান এই খবর জানতে পারি তাঁরই সহোদর অ্যাডভোকেট হোসেন তওফিক চৌধুরীর কাছে। হোসেন তওফিক চৌধুরী আমাকে বললেন- তুমি চলো বাসায় দেখা করা হয়ে যাবে, বইয়ের আলাপও সেরে নেবে। আমি আমার সঞ্চয়ের ঝুলিতে যা ছিল সব একত্র করে বগলদাবা করে নিয়ে গেলাম। ভাবনা একটাই এতো বড় মাপের মানুষের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি কিছু একটা নিয়ে যেতেই হবে। তাই আমার লেখা কয়েকটি বই, আমার সম্পাদিত সাহিত্য ম্যাগাজিন মাসিক জমিন-এর কয়েকটি সংখ্যা সবচেয়ে মূল্যবান মনে করলাম। দেখা হলো কথা হলো, বই-ম্যাগাজিন তাঁর হাতে তুলে দিলাম। তিনি নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন- তোমার লেখাগুলো পড়বো। বই প্রকাশনা নিয়ে কথা হলো। তিনি বললেন- শাহ সৈয়দ সিরাজুল হক বাগদাদী তাকে একটি গানের পাণ্ডুলিপি দিয়ে বলেছেন প্রকাশ করে দেয়ার জন্য। ভাই (হোসেন তওফিক) বললেন তুমি কম খরচে বই প্রকাশ করো। এই বইটি প্রকাশ করে দাও। দ্বিতীয়বার তাঁর সাথে দেখা ঢাকার বাসায়। গানের বইটি প্রকাশ করার পর তাঁকে কয়েকটি বই দেয়ার জন্য ঢাকায় গিয়েছিলাম, সুনামগঞ্জের আরেক গর্বিত সন্তান কবি মুতাসিম আলী আমাকে তাঁর বাসায় নিয়ে যান। বই দিতে দিতে অনেক গল্প হলো। আমাকে বললেন- তোমার সব লেখা আমার পড়া হয়েগেছে। কবি মুতাসিম আলী ভাইকে বললেন- সুনামগঞ্জের সাহিত্যাঙ্গনের শূন্য জায়গাটা আলী সিদ্দিক দখল করে নিয়েছে। তৃতীয়বার দেখা হয় পৌরবিপণির ক্যামেলিয়া টেইলার্সে। ঠিক দেখা হয় না, এবার আমি হেরে যাই। ক্যামেলিয়া টেইলার্স নিচ তলায় আমার প্রকাশনার অফিস দ্বিতীয় তলায়। একটি ছেলে গিয়ে আমাকে বলল, শাহরিয়ার চাচা আপনাকে ক্যামেলিয়া টেইলার্সে যেতে বলেছেন। আমি দ্রুত নেমে ছুটে যাই তার কাছে। অপরাধবোধ নিয়ে সামনে দাঁড়াই। তিনি তার পাশে সোফায় আমাকে বসিয়ে বলেন, আমি এসেছি তুমি শুননি। বললাম, শুনেছি দেখা করার প্রস্তুতিও রেখেছিলাম। আপনার অনুষ্ঠান শেষ হলে নিরিবিলি দেখা করবো ভেবে হাতের কাজ সেরে নিচ্ছিলাম। তার মাঝে আপনি ডেকে পাঠিয়েছেন।
আমি সেদিনই চিনতে পেরেছিলাম হাসান শাহরিয়ার কী মাপের মানুষ। মাত্র দুইদিনের সাক্ষাৎ আর সামান্য কিছু লেখা তাঁর হাতে তুলে দেয়া ছাড়া কি আর করেছি অথচ তিনি আমাকে ভুলেননি, আমি দূরে সরে থাকলেও তিনি ডেকে পাঠিয়েছেন। এরকম গুণী মানুষের ভালবাসা পাওয়া আমাদের মতো অতিসাধারণ সাহিত্যকর্মীর জন্য অনেক বড় পাওয়া। ভাল থাকুন হাসান শাহরিয়ার। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করুন।