পত্রিকান্তরে (প্রথম আলো : ২১ মার্চ ২০২১) খবর বেরিয়েছে, মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সংখ্যালঘুদের দু’টি গ্রামে উড়ো চিঠি পাঠিয়েছে কতিপয় লোক, সন্দেহজনক চারজনকে আটক করা হয়েছে। বুঝাই যাচ্ছে দেশ-রাষ্ট্র ও প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে সুবিধাবাদী প্রতিক্রিয়াশীলরা তৎপর আছে। এদিকে প্রশাসনিক ও রাজনীতিক তৎপরতার প্ররিপ্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে মামুনুল হকের মহাসম্মেলন প্রতিহত করা হয়েছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ফিরে এসেছে স্বস্তি। এই সুবাদে আমরা রাজনীতিক ও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানাই, তাঁদের প্রত্যুৎপন্নমতিত্বকে অভিনন্দিত করি।
শাল্লার নোয়াগাঁওকাণ্ডের ঘটনার পূর্বাপর পরিস্থিতি বিবেচনায় একটি সহজ উপলব্ধি বিদগ্ধ মহলের হয়েছে যে, দেশের সাধারণ মানুষ সাম্প্রদায়িক নয় বটে কিন্তু তাঁরা দুর্বৃত্ত কর্তৃক সাম্প্রদায়িক তৎপরতা উসকে দিয়ে জাগতিক স্বার্থোদ্ধারের কর্মকাণ্ডকে বা অপতৎপরতাকে প্রতিহত করতে পারঙ্গম নয়। সাধারণ মানুষকে এই পারঙ্গমতাটি অর্জন করতে হবে, তাঁদেরকে বুঝতে হবে, এইভাবে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা সৃষ্টি করে লুটপাট করা হয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে মানুষের রক্তে রঞ্জিত করা হয় দেশের মাটি, এতে সাধারণ মানুষের কোনও মঙ্গল সাধিত হয় না কিংবা ধর্মীয় কোনও স্বার্থোদ্ধারও হয় না। মাঝপথে দেশ-রাষ্ট্র-সমাজের ভেতরে ব্যাপক অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বড় মাপের আর্থনীতিক স্বার্থ হাসিল করে সমাজবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীলরা। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ব্যাপৃত হওয়ার মধ্যে দিয়ে ধর্মের স্বার্থ হাসিল হয় না কোনও দিন। ধর্মের স্বার্থ হাসিল হয় কোনও কাজের মাধ্যমে ধর্মবর্ণশ্রেণিনির্বিশেষে মানুষের সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে। নবীজীর ঘোষণা এই যে, ‘একটা অন্তরকে খুশি করা হাজার বার হজ্ব করার চেয়েও পুণ্যের কাজ।’ ইসলামের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা তো এক হাজার চার শত বছর আগের, বলা বাহুল্য, অনেক পুরনো। এই দেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাঁদেরকে ধর্মের এই বাণী ভুলে গেলে চলবে না। আর ভুলে গেলে চলবে না যে, সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে জাগতিক বা পারলৌকিক কোনও মঙ্গলই সাধিত হবে না। কারণ সৃষ্টির সেবা করা ছাড়া কোনও ধর্মপথ নেই। বাড়িঘর ভাঙচুর করা ও সম্পদ লুটপাট করাকে সৃষ্টির সেবা বলা যায় না। নোয়াগাঁওয়ের মানুষের অন্তরে কষ্ট দিয়ে ধর্মের কোনও মঙ্গল সাধিত হয়নি, এই সাধারণ কথাটা বুঝতে মহাপণ্ডিত হতে হয় না।