বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ এখনো অর্ধেকও সম্পন্ন হয়নি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রিপোর্টে গত তিন দিন আগেই ৭৪ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষক ও হাওর আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। তবে পিআইসি পদ্ধতি নিয়ে নাখোশ পাউবো এবারও বিলম্বে কার্যাদেশ দেওয়ার পর এখন পিআইসিকে দিয়ে দায়সারা গোছের কাজ শেষ করার চাপ সৃষ্টি করছে। তবে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আগামী ৭ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ৭৮৭ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। নীতিমালা অনুযায়ী কৃষক ও জমির পাশের কৃষককে দিয়ে পিআইসি গঠন করার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কমিশন নিয়ে যাচ্ছেতাই কমিটি করা হয়েছে। ফলে মধ্যস্বত্তভোগীরা চলে এসেছে কমিটিতে। তাছাড়া বিলম্বে কার্যাদেশ দেওয়ায় যথাসময়ে কাজও করতে পারেনি কমিশন নিয়ে পিআইসি পাওয়া লোকজন। যার ফলে এখনো কাজ অর্ধেকও হয়নি।
জানা গেছে, এবছর জেলায় ৬১২ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত, সংস্কার ও পুনঃনির্মাণে ১২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে সরকারি অর্থ নয়-ছয় করতে পাউবো’র টেকনিক্যাল টিম ভালো ও অক্ষত বাঁধকেও নড়বড়ে দেখিয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়ে বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। দিরাই, শাল্লা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, ধর্মপাশা, তাহিরপুর, জগন্নাথপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় ভালো ও অক্ষত বাধের জন্যও বিপুল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কৌশল করে প্রকল্প বাড়িয়ে বরাদ্দ লোপাটের চেষ্টা দেখা গেছে।
জানা গেছে, পিআইসি পদ্ধতিতে কাজ করে সুফল পাওয়ায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পকে পুরস্কৃত করার উদ্যোগ নিয়েছে। গত বছর এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা মাঠ ঘুরে সাড়া পেয়েছেন। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড মনে মনে এ কারণে নাখোশ। তারা পিআইসি’র বদলে ঠিকাদারি পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার নানা চেষ্টা করছে। হাওরের কৃষককে না জানিয়ে বর্ষায় তারা আলাদা তদন্ত করে রিপোর্টও দিয়েছে। তারা ঠিকাদারি পদ্ধতিতে ফিরে যেতে এভাবে কৌশল নিয়েছে। তাই প্রতি বছরই বিলম্বে কার্যাদেশ দিয়ে পিআইসিদের উপর চাপ সৃষ্টি করে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, নীতিমালা অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়ার দিন গত ২৮ ফেব্রুয়ারিতে হাওরের ৭৪ ভাগ বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে কৃষকরা জানিয়েছেন এখনো অর্ধেকেরও বেশি কাজ বাকি। ঘাস ও কমপেকশন ৩০ ভাগ বাঁধেও হয়নি। অনেক স্থানে অক্ষত বাঁধের দুর্বাঘাস ছেঁটে নতুন দেখানোর চেষ্টা চলছে। কোথাও কোথাও ঢালা থেকেই মাটি নিয়ে বাঁধে ফেলা হচ্ছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শাল্লায় সংবাদকর্মী হিসেবে নিয়োজিত ও পিআইসি সদস্য বলেন, আমাদেরকে বিলম্বে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে। এখন তাড়া দেওয়া হচ্ছে দ্রুত কাজ শেষ করার। এভাবে প্রতিটি পিআইসিকেই তাড়া দেওয়া হচ্ছে। শুরুর দিকে ওয়ার্ক অর্ডার দিলে এতদিনে আমরা কাজ শেষ করতে পারতাম।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনারথাল হাওরের পিআইসি সভাপতি বলেন, প্রথমেই পিআইসি অনুমোদনের জন্য কিছু খরচ করতে হয়েছে। প্রথম দফা বিলের সময়ও মোটা অংকের টাকা দিতে হয়েছে। যতবার বিল দেওয়া হবে ততবারই মোটা অংকের কমিশন দিতে হবে। না হলে পোস্ট ওয়ার্কে আমাদের বিপদে ফেলা হয়।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, হাওরের ফসলরক্ষার কাজ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হয়। আমরা আন্দোলন করে পিআইসি এনেছিলাম। কিন্তু এটা নিয়েও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ পাচ্ছে। আমরা খবর পাচ্ছি এখনো কাজ অর্ধেকেও বাকি। এদিকে বৃষ্টির দিন চলে আসছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সবসময় মনগড়া প্রতিবেদন দিয়ে সরকারি অর্থ লোপাটের সুযোগ রাখছে।
জেলা প্রশাসক ও ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের জানিয়েছে ৭৪ ভাগ কাজ শেষ। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দ্রুত কাজ চলছে। আমরা প্রতিদিনই মাঠে কাজ করছি। বাঁধের কাজে অনিয়মের খবর পেলেই আমরা ছুটে গিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।