1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৩ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

শ্রদ্ধা-ভালবাসায় খসরু স্মরণীয়-বরণীয়

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

:: হোসেন তওফিক চৌধুরী ::
অত্যন্ত বেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে লিখতে বসেছি। বার বার আমার লেখনি থেমে যাচ্ছে। আমার এক প্রিয় আইনজীবী, প্রখ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক সুনামগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি বজলুল মজিদ চৌধুরী (খসরু) আকস্মিকভাবে আমাদেরকে শোকসাগরে ভাসিয়ে গত বুধবার ২৪ শে ফেব্রুয়ারি তারিখে ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৬৮ বছর।
খসরুর সাথে আমার অনেক প্রীতিময় স্মৃতি বিজড়িত। স্মৃতিগুলো এখন সজীব হয়ে আমার মানস নয়নে ভাসছে আর ব্যথা-বেদনায় মুখ ভরে উঠছে। খসরু প্রাতঃভ্রমণ করত। তারা কয়েকজন একসাথে দলবেধে হাঁটতো। আমিও ফজরের নামাজের পর প্রাতঃভ্রমণে বেরুতাম। তখন তাদের সঙ্গে আমার প্রতিদিনই কুশল বিনিময় ও সাক্ষাত হতো।
খসরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গিয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে (এসএম) দীর্ঘদিন আমার সঙ্গে ছিল। আমি দৈনিক পূর্বদেশ (অধুনালুপ্ত) পত্রিকার রিপোর্টার ছিলাম। তাঁর পড়াশোনার পর সে সুনামগঞ্জে ওই পত্রিকার রিপোর্টার নিযুক্ত হয়। সে একজন প্রখ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা। ক্যাপ্টেন হেলালের সাথে থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। যুদ্ধের পর দোয়ারাবাজার উপজেলায় “হেলাল-খসরু” হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। ওই এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ও ছাত্রদের বৃত্তি দেয়ারও ব্যবস্থা করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর প্রাপ্য ভাতা সে নেয়নি। প্রসূনকান্তি বরুণ রায়, হোসেন বখত সাহেব, আলফাত উদ্দিন আহমদ প্রমুখরা ওই বৃত্তির টাকা দিয়ে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন।
খসরু পশ্চিম জার্মানীতে ছিলেন। সে আমার চাচাতো ভাই ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরী, আজরফ চৌধুরীর সাথে বাস করতো। তাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর ছিল। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সে সফর করেছে। তাঁর ছেলে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে। খসরু পবিত্র হজব্রত পালন করেছে। সে একজন প্রখ্যাত লেখক ছিল। “মুক্তিযুদ্ধে সুনামগঞ্জ” (রক্তাক্ত সুনামগঞ্জ) ও পশ্চিম জার্মানী সফর সম্পর্কে বই লিখেছে। তাঁর লেখাগুলো অত্যন্ত সুখপাঠ্য। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ার সম্পর্কিত বইতেও তাঁর লেখা স্থান পেয়েছে। তাঁর সবগুলো লেখাই বিশেষভাবে ঐতিহাসিক ও বাস্তবভিত্তিক। কল্পনা ও অতিরঞ্জন নেই।
খসরু সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছে। তিনি পিপি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এই কৃতী আইনজীবী হাওর বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি হাওর রক্ষা এবং হাওর বাঁধের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অকুতোভয়ে সংগ্রাম করেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই সারা জেলায় হাওর বাঁচাও আন্দোলন একটি প্রাণবন্ত ও সক্রিয় আন্দোলনে পরিণত হয়। তিনি সুনামগঞ্জ শহীদ জগৎজ্যোতি পাঠাগারের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সাপ্তাহিক সুনাম পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
তাঁর জন্ম ১৯৫২ সালের ২রা এপ্রিল। তাঁর পিতার নাম মফিজুর রহমান চৌধুরী। মাতার নাম মজিদা খাতুন চৌধুরী। তাঁর স্ত্রী মুনমুন চৌধুরী একজন কবি। তাঁদের মূল নিবাস দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে। খসরু অমায়িক ও শিষ্টাচারসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর আচার-আচরণে সকলেই সন্তুষ্ট ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে সুনামগঞ্জে সর্বত্র গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সহজে এই ক্ষতি পূরণ হবার নয়। তাঁর জীবন ছিল কর্মময়। তাঁর কর্মই তাঁকে মানুষের মাঝে বাঁচিয়ে রাখবে। তিনি শোক শ্রদ্ধা ভালবাসায় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁকে বেহেশত নসিব করার জন্য আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি।
[লেখক : সিনিয়র আইনজীবী ও কলামিস্ট]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com