সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
শুধু নিম্নবিত্তই নয়, জীবিকা ও উন্নত নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়তই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নগরমুখী হচ্ছে মানুষ। যা মূলত অভ্যন্তরীণ অভিবাসন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপ বলছে, মহানগরী ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রায় ৩০ শতাংশ খানা (একই রান্নায় খাওয়া পরিবার) স্থানান্তরিত হয়েছে ভোলা ও বরিশাল জেলা থেকে। এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরের জলবেষ্টিত দেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলা থেকে ১৯ দশমিক ২৮ শতাংশ পরিবার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কাজের সন্ধানসহ নানা প্রয়োজনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে এসেছে। আর বরিশাল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে স্থানান্তরিত হয়েছে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ পরিবার।
দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের ৮৬টি স্থানে ২ হাজার ১৫০টি পরিবারের মধ্যে জরিপ চালিয়ে এসব তথ্য দিয়েছে বিবিএস। নগরাঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধাভোগী নির্বাচনের উপায় নির্ধারণের লক্ষ্যে খাদ্যনিরাপত্তা ও আর্থসামাজিক বৈশিষ্ট্য নিরূপণের জন্য ২০১৯ সালের ৮-২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত জরিপটি চালানো হয়।
‘নগর আর্থসামাজিক অবস্থা নিরূপণ জরিপ ২০১৯’ শীর্ষক জরিপটি নিম্নআয়ের মানুষকে অগ্রাধিকার দিয়ে উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন আয়ের ভিত্তিতে পরিচালনা করে বিবিএস। ঢাকা ছাড়াও বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহে এ জরিপ পরিচালিত হয়েছে।
এতে দেখা যায়, দেশের বড় শহরগুলোতে যে মানুষ বাস করে তার ২৮ শতাংশ পরিবার সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর। বাকি ৭২ শতাংশ বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছে। তবে রাজধানী ঢাকায় এ হার ৮০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ ঢাকার ৮০ ভাগ পরিবার বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছে। যদিও অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের শিকার বিপুলসংখ্যক নিম্ন আয়ের মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, নাগরিক সুবিধাসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাইরে থেকে যাচ্ছে।
বিবিএসের জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নগরায়ণের নাটকীয় বৃদ্ধি নগর দারিদ্র্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। কাজ, শিক্ষা, জলবায়ুর প্রভাব থেকে রক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে লাখ লাখ মানুষ পল্লী অঞ্চল ছেড়ে শহরাঞ্চল বা শহরের এক অংশ থেকে অন্য অংশে স্থানান্তরিত হয়। কিছু কিছু স্থানান্তর স্বেচ্ছায় হলেও মূল উদ্বেগ হলো ঝুঁকির মুখে থাকা খানাগুলোর অনিচ্ছাকৃত স্থানান্তর ও খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে যোগসূত্র।
বিবিএস জরিপ অনুযায়ী, খানা স্থানান্তরে শীর্ষ জেলা ভোলা ও বরিশালের পরই রয়েছে সিরাজগঞ্জ ও ঢাকা। এ দুটি জেলা থেকে যথাক্রমে ৫ দশমিক ৬১ ও ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ পরিবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে স্থানান্তরিত হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা জেলা থেকে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ, কিশোরগঞ্জ থেকে ৪ দশমিক ৮১, চট্টগ্রাম থেকে ৪ দশমিক ২৭, ফরিদপুর থেকে ২ দশমিক ৯৬, চাঁদপুর থেকে ৩ দশমিক ১০, বাগেরহাট থেকে ২ দশমিক ৭৯, বগুড়া থেকে ২ দশমিক ৭৯, খুলনা থেকে শূন্য দশমিক ৩১, রাজশাহী থেকে শূন্য দশমিক শূন্য ৯, সুনামগঞ্জ থেকে শূন্য দশমিক শূন্য ৭, রাজবাড়ী থেকে ১ দশমিক ৬৯, গোপালগঞ্জ থেকে শূন্য দশমিক ২৭, সিলেট থেকে শূন্য দশমিক শূন্য ৮, নোয়াখালী থেকে ২ দশমিক ১১, যশোর থেকে শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ পরিবার স্থানান্তরিত হয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ প্রসঙ্গে বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিধার কারণেই মানুষ প্রধানত অভিবাসী হয়। সেটা যেমন দেশের বাইরে, তেমনই দেশের ভেতরেও। দেশের ভেতরে এটি নির্ভর করে জীবিকার সহজলভ্যতার ওপর। সাধারণত নদীভাঙনপ্রবণ জেলা, উপকূলীয় এলাকা সর্বোপরি কাজের সুযোগ যেখানে কম সেখান থেকেই লোকজন মহানগরে পাড়ি দেয়। কারণ নিম্নবিত্ত শ্রেণির লোকেরা ঢাকায় এসে দিনমজুর, রিকসা চালানোসহ যেকোনো একটা কাজ জোগাড় করে ফেলতে পারে; যা তাদের নিজ জেলা থেকে অভিবাসী হতে উৎসাহী করে। মহানগরমুখী অভিবাসনের এ ধারা বদলাতে হলে প্রথমেই সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে। তিনি বলেন, বরাবরই বরিশাল বিভাগের জেলাগুলো দারিদ্র্যপ্রবণ। ফলে সেখান থেকে মহানগরমুখী অভিবাসনও বেশি। তবে আশার কথা হচ্ছে ওই অঞ্চলে পায়রা বন্দর হচ্ছে। সাতটি অর্থনৈতিক জোন করা হচ্ছে, পদ্মা সেতুসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণাঞ্চলে কর্মসংস্থান বাড়বে। মহানগরমুখী অভিবাসনও কমে আসবে।