ধর্মপাশা প্রতিনিধি ::
ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের মৃত আশুতোষ সরকারের ছেলে মাঝি সুজন সরকার হত্যাকাণ্ডের দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচার কার্যক্রম চলছে। এদিকে পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি সুজনের অনুপস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়েছে তার পুরো পরিবার। সুজনের মা তার পুত্রবধূ ও সুজনের দুই সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। মামলা চালাতে গিয়ে ভিটেবাড়ি ব্যতিত ফসলী জমি বন্ধক দিতে হয়েছে। ফলে জমিতে আর ফসল ফলানোর মতো কোনো সুযোগ নেই তাদের। এতে করে খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে দিন চলছে তাদের। আসামিরা বর্তমানে জামিনে থাকায় মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে নিরীহ পরিবারটির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং হুমকি দিচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন অসহায় পরিবারটি।
সুজনের পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১২ জুন ভোরে যাত্রী নিয়ে তাহিরপুরের উদ্দেশ্যে নৌকা নিয়ে যাত্রা করে সুজন। পরে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন অর্থাৎ ১৩ জুন রাতে সুজনের মুঠোফোনে চালু হলে সেটিতে কল করা হলে অজ্ঞাত ব্যক্তি রিসিভ করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ ঘটনায় উপজেলার চামরদানি ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের লিটন মিয়ার ছেলে তানভীর হোসেনকে পুলিশ আটক করলে সুজন হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। তানভীরের দেওয়া তথ্যমতে- ঢাকার বাড্ডা থেকে এ ঘটনার মূলহোতা কাজল মিয়াকে আটক করে পুলিশ। কাজল মিয়া চামরদানি ইউনিয়নের টেপিরকোনা গ্রামের লালচাঁন মিয়া ছেলে। পরে জানা যায়, ওইদিন কাজল ও তার সহযোগীরা ওইদিন সুজনের নৌকা ভাড়া নিয়ে গরু চুরির পাঁয়তারা করছিল। বিষয়টি সুজন টের পাওয়াতে ও নৌকার ভাড়া পরিশোধ না করার অভিপ্রায়ে কাজল ও সহযোগীরা সুজনের হাত-পা বেঁধে পানিতে ফেলে দেয়। এতে সুজনের মৃত্যু ঘটে। পরে লাশ গুম করার জন্য সুজনের শরীরে পাথর বেঁধে টগার হাওরে ফেলে দেওয়া হয়। কাজলকে ঢাকা থেকে আটক করার পর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ২২ জুন টগার হাওর থেকে পাথর বাঁধা অবস্থায় সুজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সুজনের মা সাবিত্রী সরকার বলেন, ‘আমার ছেরা (ছেলে) মরার হর থাইক্যা খাইয়া না খাইয়া কষ্টের মাঝে দিন কাডাইতাছি। যেহানে খাইয়া বাঁচা দায় হেইনো মামলা চালাই ক্যামনে? আসামিরা মামলা তুইল্যালানির লাইগ্যা হুমিক দিতাছে। আমার ছেরারে যারা মারছে আমি তারার বিচার চাই।’
মধ্যনগর থানার ওসি (তদন্ত) নব গোপাল দাস বলেন, আসামি পক্ষ থেকে যদি মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয় তাহলে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।