শামস শামীম ::
হাওরে বোরো মওসুম চলছে। কিন্তু জলাবদ্ধতার জন্য বিলম্বিত হচ্ছে বোরো চাষ। নামছেনা হাওরের পানি। তাই হাওরের কৃষকের একমাত্র ফসল বোরো চাষ নিয়ে শঙ্কায় আছেন আড়াই লাখ চাষী পরিবার। পানি নামার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ কেটে দিচ্ছে। তবে জামালগঞ্জ ও তাহিরপুর উপজেলার বেশিরভাগ হাওর থেকেই পানি নামছেনা বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের চারবারের বন্যার কারণে হাওর এখনো জলে টইটুম্বর। নভেম্বরের শুরু থেকে হাওরে চাষাবাদের জন্য বীজতলা তৈরি করা হলেও হাওর থেকে পানি না নামায় বীজতলাও এখনো নিমজ্জিত। এ কারণে বিলম্বিত হচ্ছে বীজতলা তৈরির কাজ। প্রাকৃতিক এই সমস্যার কারণে বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত বাঁধের কারণেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। গত সপ্তাহে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সংক্রান্ত একটি সভায় এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। সভায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টিকারী বাঁধগুলো কেটে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের আলোকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মীরা জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার হাওরে সরেজমিন পরিদর্শনে বের হয়েছেন। শুক্রবার জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার হাওরের গজারিয়া, ঢালিয়াসহ কয়েকটি বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। বাঁধ কাটার পরে হাওর থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। কয়েকদিনের মধ্যে চিহ্নিত আরো ১০-১৫টি বাঁধ কেটে দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্য বছর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বীজতলা তৈরির সময় নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এবছর পানি বিলম্বে নামার কারণে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বীজতলা তৈরির মওসুম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলায় এ বছর ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৫৯০ হেক্টর। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর বীজতলা তৈরি হয়েছে। এখনো বাকি রয়েছে দুই তৃতীয়াংশ বীজতলা তৈরির কাজ। তাই এবার বোরো চাষ বিলম্বিত হবে এমন আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
দেখার হাওরের কৃষক আরজদ আলী বলেন, ‘চাইরোবাদি ফানি বলক অইয়া রইছে। যেখানো মনে ধরে ওখানো বান্দ অওয়ায় আউর তনি ফানি নামছে না। ইতার লাগি আমরা জালা ফালাইতাম ফারতাছি না। ইলা অইলেতো আর রুয়া রইতাম পারতাম না ইবার’।
একই হাওরের কৃষক জয়তুন নেসা বলেন, অন্যান্য বার আউরো আগুন মাসের পয়লা তারিখই বীজ ফালাইলাই। ইবার ফানি নামার নাম নাই। জানিনা কিতা অইব ইবার’।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফরিদুল হাসান বলেন, জলার শতাধিক হাওরে প্রায় আড়াই লাখ বোরো চাষী রয়েছেন। আমরা হাওরের বিভিন্ন গ্রামেই প্রতিদিন যাচ্ছি। কৃষকরা বলছেন অপরিকল্পিত বাঁধের কারণে পানি নামছে না। তাই আমরা বিভিন্ন স্থানে বাঁধ কেটে দেওয়ার পাশাপাশি আগাম ফলনশীল হাইব্রিড ধান চাষে পরামর্শ দিচ্ছি। পানি বিলম্বে নামলেও শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, আমাদের ২২টি টিম হাওরে কাজ করছে। যে হাওরে পানি নামতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে সেসব হাওরের উল্লেখযোগ্য বাঁধ কেটে দিচ্ছি। শুক্রবারও কয়েকটি বাঁধ কেটে হাওরের পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। এ কয়েকদিন চিহ্নিত আরও কিছু বাঁধ কেটে পানি নিষ্কাশন করে কৃষকদের চাষাবাদের সুযোগ করে দেওয়া হবে।